সংসদ-বিচার বিভাগ মুখোমুখি নয় : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের বিষয়ে সংসদ সদস্যদের প্রতিক্রিয়ায় সংসদ ও বিচার বিভাগ মুখোমুখি দাঁড়ায়নি। এ নিয়ে সংসদ সদস্যদের বক্তব্য আবেগের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে।
আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সাব-রেজিস্ট্রারদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
গত ৫ মে হাইকোর্ট বিচারপতিদের অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়ে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা আর সংসদের হাতে রইল না। ওই দিন আদালতের রায় নিয়ে মন্তব্য করেন বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে আইনমন্ত্রী নিজেও ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে আজ আইনমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্রের ভিত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে এ রকম সমস্যা, এ রকম বিতর্ক রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে হয়। এটা স্বাভাবিক। কিছু কিছু সময় আবেগও কাজ করে। সংসদ সদস্যরা যেহেতু আইন প্রণয়ন করেন আর বিচার বিভাগ সেটা বাস্তবায়ন করে, তাই সংসদ সদস্যরা কিন্তু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সুতরাং আইনসভা ও বিচার বিভাগ মুখোমুখি, আমি সেটা গ্রহণ করতে রাজি নই।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সকলেই মানুষ। সুতরাং এ রায়ের পর আবেগের কিছু প্রকাশ সংসদের মধ্যে হয়েছিল। সেটা যখন প্রকাশিত হয়েছে, নিশ্চয়ই কিছু কিছু কথা হয়তো কাউকে আঘাত করতে পারে। তবে তাতে এটা বোঝায় না যে, বিচার বিভাগ আর আইনসভা সংঘাতের মুখোমুখি।’
যেটুকু বিতর্ক হয়েছে, সেটি নিরসনযোগ্য উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, ‘আমাদের সমস্যা আমরা নিজেরা নিরসন করতে পারি। দেশের বিচার বিভাগ এবং আইনসভা মিলেই তবে সেটা নিরসন করা যায়। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি না এই রায় এবং তার পর সংসদে যে বিতর্ক হয়েছে, সেটা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।’
সেদিন সংসদে নিজের দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মামলাটি শুনানির সময় সরকারপক্ষের সাবমিশনের (শুনানি) মধ্যে ব্যাপারটা বলা হয়েছিল। যেহেতু মূল সংবিধান যেটি ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদ অনুমোদন দিয়েছিল; সেই সংবিধানের মধ্যে এই বিধানটা ছিল, যা কোনোরকম পরিবর্তন না করে হুবহু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। পরে ১৯৭৭-৭৮ এ মার্শাল ল’র মাধ্যমে সেটা পরিবর্তন করা হয়। সেই বিধানটিই (ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে) পরিবর্তন করা হয়েছে।’
‘সে ক্ষেত্রে একটা সিদ্ধ আইনি তর্ক আছে যে, যদি মূল সংবিধান সব রকম বিচারিক পর্যালোচনার ঊর্ধ্বে। এটা একটা যুক্তি। সেই কথাটাই আমি সংসদে বলেছিলাম। যেহেতু আমি আইনের মধ্যেই ছিলাম, সেহেতু এতে আদালত অবমাননা হয়নি। তা ছাড়া সংসদের ভেতরে যা কথা বলা হয়, সেটা আদালত অবমাননার এখতিয়ারের মধ্যে আনা যায় না।’
সংসদে দেওয়ার বক্তব্যের সময় আবেগতাড়িত ছিলেন না উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কিন্তু সেদিন সুপ্রিম কোর্ট জাজেস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) আইন সংসদে উত্থাপন করেছি। আমার যদি আবেগ থাকত, তাহলে কি আমি এভাবে কাজ করতাম? দেশটা আমাদের সকলের। দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আমি শ্রদ্ধা করি।’