মোহাম্মদ আলীর শেষকৃত্য বিশ্ববাসীর জন্য উন্মুক্ত
প্রয়াত মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর শেষকৃত্য হবে তাঁর জন্মস্থান যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের লুইসভিলে। আগামী শুক্রবারের এই অনুষ্ঠান বিশ্ববাসীর জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করেছে দ্য গ্রেটেস্ট খ্যাত মুষ্টিযোদ্ধার পরিবার।
বিবিসি জানায়, মোহাম্মদ আলীর শেষকৃত্যে লুইসভিলে বিপুল পরিমাণ মানুষ সমবেত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মোহাম্মদ আলীর পরিবারের মুখপাত্র বব গানেল বলেন, তিনি ছিলেন বিশ্ব নাগরিক। তাঁর শেষকৃত্যে সারা বিশ্ব থেকেই অতিথিরা লুইসভিলে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আলীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান হবে স্থানীয় সময় দুপুর ২টায়। কেএফসি ইয়াম সেন্টারে ২০ হাজারের বেশি অতিথির জন্য বসার জায়গা করা হচ্ছে।
মোহাম্মদ আলীর পরিবার জানিয়েছে, ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ীই মুসলিম রীতিতে আলীর শেষকৃত্য হবে। একজন ইমাম এতে অংশ নেবেন। কেএফসি সেন্টারের ওয়েবসাইটে আলীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলীকে স্মরণ করে বক্তব্য দেবেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। ওই অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত কৌতুক অভিনেতা বিলি ক্রিস্টাল ও ক্রীড়া সাংবাদিক ব্রায়ান্ট গাম্বেলও বক্তব্য রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিবিসি জানায়, শেষকৃত্যের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুক্রবার হলেও এর আগের দিন বৃহস্পতিবার পারিবারিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। আর শুক্রবারের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শেষে আলীর কবর দেওয়া হবে লুইসভিলের কেভহিল কবরস্থানে।
স্থানীয় সময় গত শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফনিক্স শহরের এক হাসপাতালে মোহাম্মদ আলীর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। সংক্রমণ জটিলতা বা সেপটিক শকে আলীর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তিনি শ্বাস-প্রশ্বাস জটিলতায় ভুগছিলেন। এ সমস্যার কারণেই সম্প্রতি তাঁকে ফনিক্সের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পারকিনসন রোগের কারণে আলীর শ্বাস-প্রশ্বাস জটিলতা গুরুতর হয়ে দেখা দেয়।
বিবিসি জানায়, আগামী দুদিনের মধ্যেই মোহাম্মদ আলীর মরদেহ অ্যারিজোনার ফনিক্স থেকে কেন্টাকির লুইসভিলে নেওয়া হবে।
মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুর খবর গতকাল শনিবার সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়। সব বিশ্বনেতাই মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে লাইট হেভিওয়েট বক্সিংয়ে সোনা জয়ের মধ্য দিয়ে মোহাম্মদ আলী খ্যাতি অর্জন করেন। এর পরপরই পেশাদার মুষ্টিযুদ্ধে লড়েন আলী। ১৯৬৪ সালে মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা সনি লিস্টনকে হারিয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন মোহাম্মদ আলী। প্রথম মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে তিনবার হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন আলী। ৬১টি মুষ্টিযুদ্ধের ৫৬টিতেই জয় পান তিনি, এর মধ্যে ৩৭টিই ছিল নকআউট (প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী)। ১৯৮১ সালে অবসর নেন মোহাম্মদ আলী।
১৯৯৯ সালে ক্রীড়া সাময়িকী ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড’ মোহাম্মদ আলীকে ‘স্পোর্টসম্যান অব দ্য সেঞ্চুরি’ ঘোষণা করে। একই বছর বিবিসি তাঁকে ঘোষণা করে ‘স্পোর্টস পার্সোনালিটি অব দ্য সেঞ্চুরি’।
মুষ্টিযুদ্ধের বাইরেও বিখ্যাত ছিলেন মোহাম্মদ আলী। নাগরিক অধিকারকর্মী এবং কবি হিসেবে খেলা, বর্ণ ও জাতিসত্তার ঊর্ধ্বে ছিলেন তিনি। ১৯৬৪ সালে ইসলামী সংগঠন নেশন অব ইসলামে যুক্ত হন মোহাম্মদ আলী এবং ১৯৭৫ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তাঁর নাম পরিবর্তিত হয়।