‘আল্লাহ তুমি ভিক্ষা দাও আমার স্বামীকে’
গাজীপুরের টঙ্গীতে ফয়েল কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আহত-নিহত শ্রমিকদের একে একে নিয়ে আসা হচ্ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছিল গোটা এলাকার বাতাস।
নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা সৃষ্টিকর্তার কাছে বারবার চিৎকার করে প্রিয়জনকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানাচ্ছিলেন।
তেমনই এক মাঝবয়সী নারীর দেখা মিলল। স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমি কিচ্ছু চাই না, আমার স্বামীরে চাই। আল্লাহ তুমি ভিক্ষা দাও আমার স্বামীকে।’
সঙ্গে আসা স্বজনরাও ধরে রাখতে পারছিলেন না কান্নারত ওই নারীকে।
আজ সকাল থেকেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কেউ স্বামী বা কেউ বাবার মৃত্যুর খবরে আহাজারি করছিলেন।
রাতের পালার কাজ শেষ করে যে শ্রমিকদের ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁদেরই কেউ কেউ এখন লাশ হয়ে পড়ে আছেন মর্গে আর কেউ গুরুতর দগ্ধ শরীর নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বার্ন ইউনিটে।
আজ শনিবার ভোর ৬টার দিকে কারখানাটির বয়লার বিস্ফোরিত হলে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আগুন। রাতের পালার কাজের শেষ সময়ে ব্যস্ত ছিলেন কর্মীরা। আকস্মিক এই বিস্ফোরণের আগুনে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১০ শ্রমিক। খবর পেয়ে আগুন নেভাতে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট। যোগ দেন স্থানীয় সাধারণ মানুষও।
দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুন পাশের দুটি ভবনে ছড়িয়ে পড়লে সেগুলোও ধসে পড়ে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শী নারী জানালেন, হঠাৎ করে বিকট আওয়াজ পান তাঁরা। বড় বড় কাচের টুকরো, ছাদের ঢালাই ধসে পড়তে দেখতে পান।
এ বিষয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ জানান, মালিকপক্ষ যদি প্রথম থেকেই তাঁদের জানাত তাহলে শুরুতেই গ্যাস, বিদ্যুৎ লাইনটা কেটে দিলে হয়তো ভয়াবহতা কিছুটা কমানো যেত।
প্রথমে আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গুরুতর অবস্থায় ২৩ জনকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।