বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস
হাত ধুলে রোগ থাকবে দূরে
হাত ধোয়া নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। আগের দিনে মানুষ জন এত সচেতন ছিল না। এতে তাদের রোগবালাইও ছিল বেশ। শুধু হাত ধুলেই কিন্তু অনেক রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পেটের পীড়া থেকে শুরু করে সর্দিজ্বর অনেক কিছুই হাত ধোয়ার সাথে জড়িত।
আমাদের দেশে এক সময় স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব ছিল। এখন এ অবস্থার উন্নতি হলেও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে এখনো আগের মতোই রয়ে গেছে। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দরিদ্র দেশগুলোতে এখনো স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব বেশ। এসব মানুষকে সচেতন করতে ১৫ অক্টোবর পালন করা হয় বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস।
হাত ধুলে উপকারিতা কী? এর উপকারিতা লিখে শেষ করা যাবে না। প্রথমে আসি ডায়রিয়াতে। আমাদের দেশে শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এটি। এ রোগ ছড়ায় অপরিচ্ছন্ন হাতের মাধ্যমে। হাত ধুয়ে নিলে ডায়রিয়ার প্রকোপ কমে। এক সময় ডায়রিয়ায় গ্রামের পর গ্রাম উজার হয়েছে। এখন তা আর হয় না। কারণ ওরস্যালাইন ডায়ারিয়া কমাতে সাহায্য করলেও হাত ধোয়া কিন্তু কম ভূমিকা পালন করেনি।
শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় নাই এমন পরিবার পাওয়া যাবে না। এটি প্রতিরোধ করতে চান? তাতেও কিন্তু হাত ধোয়ার ভূমিকা অনেক। শিশুকে ধরার আগে,খাওয়ানোর আগে হাত ধুলে এ রোগের জীবাণু শিশুর শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। এতে শিশু রোগমুক্ত থাকে।
কিছুকাল আগেও দেশে এমন কাউকে পাওয়া যেত না যার পেটে কৃমি নেই। আগে তো শিশুদের পেট ভর্তি থাকত কৃমিতে। এখন অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কারণ, শুধু একটু খানি সচেতনতা। আগে শিশুরা খালি পায়ে হাটত, হাত না ধুয়ে খাবার খেত, শৌচকর্মের পর হাত ধুত না। এখনকার মা- বাবারা শিশুকে অন্তত হাত ধোয়া শিখাতে ভুলেন না।
শুধু হাত ধোয়ার কারণে শিশুদের গলায় ক্ষত, কানের ইনফেকশন, চোখের ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
আমি যে তথ্যগুলো দিচ্ছি তা কিন্তু আমার মনগড়া না। আমেরিকান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) গবেষণায় এগুলো প্রমাণিত হয়েছে। তারা আরো বলেছে, শুধু হাত ধুলেই ২০টি মারাত্মক রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। তাদের মতে, আমেরিকায় প্রতিবছর প্রায় এক লাখ লোক মারা যায় হাত না ধোয়ার কারণে। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা কিন্তু অনেক বেশি হবে।
তো হাত আপনাকেও ধুতে হবে। সন্তানকেও ধোয়া শেখাতে হবে। হাত ধুবেন শৌচকর্মের পর, খাবারের আগে, হাঁচিকাশির পর, অসুস্থ রোগীর সেবা করলে,শিশুর রান্না করার আগে, শিশুকে খাওয়ানোর আগে।
অনেকে শুধু হাতে পানি লাগান। এতে কিন্তু হাত ধোয়া হয় না। এতে কিছুটা ময়লা পরিষ্কার হয় হয়তো কিন্তু জীবাণু কিন্তু থেকে যায়। তাই অবশ্য সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। সাবান না থাকলে ছাই দিয়ে ধুতে পারেন।
সাবান সবসময় বহন করা যায় না। সেক্ষেত্রে আগে থেকেই সচেতন হতে হবে। বর্তমানে বাজারে সেনিটাইজার পাওয়া যায়। এটা হাতকে করে জীবাণু মুক্ত। যেখানেই থাকুন, হাত জীবাণু মুক্ত রাখুন। নিয়মিত হাত ধোন, সুস্থ থাকুন।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ