‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো হত্যার বিচার হয়েছে শুনিনি’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইতিহাসে কোনো হত্যাকাণ্ডেরই বিচার হয়নি বলে দাবি করেছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু হত্যার বিচারের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে এমন অভিযোগ করা হয়।
আজ ব্শ্বিবিদ্যালয়ে মানববন্ধনের পাশাপাশি শোকর্যালি করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা লিপু হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করে।
মানববন্ধন থেকে জানানো হয়, আগামীকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় মানববন্ধন করা হবে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় লিপু হত্যার বিচারের দাবিতে রাবিতে মানববন্ধন করে ঝিনাইদহ জেলা সমিতি। পরে তারাও এসে বিভাগের এই কর্মসূচিতে যোগ দেয়। কুষ্টিয়া জেলা সমিতিও লিপু হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে।
মানববন্ধনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, ‘লিপুর লাশ যেখানে পাওয়া গেছে সেটা সংরক্ষিত জায়গা। সেখানে ডাইনিং কিংবা হল কর্তৃপক্ষ ছাড়া কেউ সাধারণত যেতে পারে না। সেখানে লাশ গেল কীভাবে? আর লিপু যদি বাইরে থাকত, তাহলে খালি গায়ে থাকত না। এটা হলো কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব, এটা নিয়ে তদন্ত করা।’
‘গতকালও পুলিশ আমাকে বলেছে, এটা হত্যাকাণ্ড। সে জন্য পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলতে চাই কালক্ষেপণ করবেন না। লিপুর হত্যাকারী কে বা কারা, তাদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করুন। এ ক্ষেত্রে সবার প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করুন। নিজেরা তদারকি করুন। বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা আছি।’
বিভাগের প্রভাষক আব্দুল্লাহ হিল বাকি বলেন, ‘মানুষ মেরে ফেলার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ এটা হওয়ার কথা ছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থান। আমরা যদি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস দেখি, তাহলে দেখব, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক যাই হোক না কেন, কোনো হত্যার বিচার হয়েছে, সেটা আমি শুনিনি। কিংবা কোনো ধরনের অপরাধেরই বিচার দেখতে পাওয়া যায় না। তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয় খুনি-অপরাধীদের অভয়ারণ্য হবে না কেন?’
বিভাগের শিক্ষার্থী হুসাইন মিঠু বলেন, ‘রাবির এই বিভাগে আমরা ঝিনাইদহ থেকে তিনজন একসঙ্গে ভর্তি হয়েছিলাম। স্বপ্ন ছিল অনেক। অথচ লিপুকে লাশ হয়ে ফিরে যেতে হলো।’
‘নিজে ওকে কবর দিয়ে আসলাম। এসে সংবাদ করলাম, রাবির ৬৩ বছরের ইতিহাসে ৪৬ মৃত্যু। আগে এই বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ভালোবাসতাম। কিন্তু লিপুর লাশ দেখার পর থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে খুব ঘৃণা করতে ইচ্ছে করছে।’
বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাতিল সিরাজ বলেন, ‘লিপুকে তার হলের ভিতর হত্যা করা হলো, অথচ হলের প্রহরী-নিরাপত্তাকর্মী কেউই বিষয়টি দেখল না। লিপুকে যখন হত্যা করা হয়, ওই সময় হলের নিরাপত্তাকর্মীরা কোথায় ছিল, তারা কী করছিল, এসব জানা দরকার।’
‘আমরা শিক্ষকরা আবাসিক এলাকায় থাকি, সেখানে অনেক প্রহরী-নিরাপত্তাকর্মী। কিন্তু আলাদা করে আমাদের প্রহরী ভাড়া করতে হয়। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনরায় খতিয়ে দেখতে হবে।’
বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মশিহুর রহমান বলেন, ‘খুব সাধারণভাবে যদি কেউ ঘটনাস্থল ও লাশ দেখে তাহলেই বলবে এটা হত্যাকাণ্ড। এদিকে পুলিশও স্বীকার করছে এটা হত্যাকাণ্ড। আর এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্বও পুলিশের।’
কাঁদতে কাঁদতে সহপাঠী রাইসা জান্নাত বলেন, ‘আমি তো অমার বন্ধুকে ফিরে পাব না, দেখতেও পাব না। তবে তাকে যারা হত্যা করেছে, তাদের আমি দেখতে চাই। শুধু লিপু হত্যার বিচার না, আজ আমি এখানে আমার নিরাপত্তার জন্য দাঁড়িয়েছি। বাড়ি থেকে বারবার ফোন করে, সবাই আমরা আতঙ্কে। আমি আমার নিরাপত্তা চাই। লিপু হত্যার বিচার চাই।’
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খাদেমুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক এ বি এম সাইফুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হোসেন বকুল, সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান প্রমুখ।
গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় রাবির নবাব আব্দুল লতিফ হলের ডাইনিংয়ের পাশের নর্দমা থেকে লিপুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই হলেরই ২৫৩ নম্বর কক্ষে থাকতেন লিপু। এ ঘটনায় গতকাল মো. বশির রাজশাহী নগরীর মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলাও করেন।