মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকরে জল্লাদ রাজু প্রস্তুত
গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষনেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তাঁর সহযোগী বিপুলের ফাঁসির রায় আজ বুধবার রাতে যে কোনো সময় কার্যকর করা হতে পারে। তাঁদের ফাঁসি কার্যকরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কারাগারে জল্লাদ রাজু, তাঁর সহযোগী ইকবাল ও শফিক এবং ফাঁসির মঞ্চ সবকিছুই প্রস্তুত আছে। এরই মধ্যে ফাঁসির মহড়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
জল্লাদ রাজু এর আগে গত বছরের ১১ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন। এরপর ওই বছরের ১০ মে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করেন।
এর আগে ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর দিবাগত রাতে জল্লাদ শাহজাহানের সঙ্গে মিলে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করেন জল্লাদ রাজু।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা যায়, রাজু ১৬ বছর ধরে কারাগারে আছেন।
এদিকে কারাবিধি অনুসারে মুফতি আবদুল হান্নানের সঙ্গে আজ সকালে প্রথম দফায় শেষ দেখা করেন তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং বড় ভাই। পরে দুপুর ২টার দিকে একই মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অপর দুই ভাইকে মুফতি হান্নানের সঙ্গে শেষ দেখা করার ব্যবস্থা করে কারা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে বন্দি মহিবুলকে কাশিমপুর কারাগারে আনা হয় এবং কাশিমপুর কারাগারের পার্ট-২ তে বন্দি অপর ছোট ভাই আনিছকে হাইসিকিউরিটি কারাগারে নিয়ে দেখা করানো হয়।
ফাঁসির অপেক্ষায় থাকা এই জঙ্গি কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি আছেন। রাষ্ট্রপতি মুফতি হান্নানের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করার পর কারাবিধি অনুযায়ী গত মঙ্গলবার শেষ দেখা করার জন্য স্বজনদের কাছে বার্তা পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ।
ফাঁসি কার্যকরের সম্ভাবনার আলোকে বুধবার বিকেল থেকে কারাগার ও আশপাশের এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। পোশাকে-সাদা পোশাকে পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক ও তৎপর রয়েছে। কারাফটকের সামনের সড়কে যানবাহন ও জন সাধারণের চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব দোকানপাট।
এদিকে বেলা ৩টার দিকে ঢাকা থেকে কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছান কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন্স) তৌহিদুল ইসলাম। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করেছে।
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালালের (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামাল উদ্দিন। এ ছাড়া হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া। এ ঘটনায় আহত হন আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন।
এই মামলার রায়ে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রায়ে হরকাতুল জিহাদের প্রধান মুফতি হান্নান, সাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এই রায় আপিলেও বহাল থাকে।
আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া তিন আসামি রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। তাঁদের আবেদন গত ১৯ মার্চ সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হয়ে যায়। এরপর প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন দণ্ডপ্রাপ্তরা। কিন্তু রাষ্ট্রপতি তাঁদের সেই আবেদন খারিজ করে দেন।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া অপর দুই জঙ্গি হরকাতুল জিহাদের প্রধান মুফতি আবদুল হান্নান ও তাঁর সহযোগী সাহেদুল আলম ওরফে বিপুল গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে এবং রিপন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন।