রাডার দুর্নীতির মামলায় এরশাদসহ সবাই খালাস
রাডার ক্রয় দুর্নীতি মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ তিন আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা এই রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে বেলা সোয়া ৩টার দিকে এরশাদ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে হাজির হন। দুপুর আড়াইটায় এ মামলায় এরশাদ আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দাখিল করেন।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এরশাদের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। ১৯৯২ সালে রাডার ক্রয় দুর্নীতির অভিযোগে মিথ্যা মামলা করা হয়। রায়ে আজ এরশাদসহ সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ মামলা। রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে এরশাদ নির্দোষ। আমি মনে করি এরশাদ আদালতে এসে সুবিচার পেয়েছেন। দেশে ন্যায়বিচার থাকলে আদালতে এসে সবাই সুবিচার পাবেন।’
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রায়ে আমরা অসন্তোষ প্রকাশ করছি। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে আমরা আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
এই মামলায় দুদকের আইনজীবীদের গাফিলতি ছিল-আদালতের মন্তব্যের জবাবে মীর আহমেদ বলেন, ‘এই মামলায় মোট ৩৮ জন সাক্ষী ছিল। মাত্র ১২ জন সাক্ষী তাঁদের সাক্ষ্য দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের আদেশের পর মামলাটি যখন স্থগিত হয়ে যায় পরবর্তী সময়ে আর সাক্ষীদের আনা সম্ভব হয়নি। অন্য সাক্ষীদের হাজির করা গেলে মামলার অবস্থান আরো দৃঢ় হতো। রায় পর্যালোচনা করে আমরা এই বিষয়ে আপিলের সিদ্ধান্ত নেব।’
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, গত ১২ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা।
এ রায়কে কেন্দ্র দুপুরের পর থেকেই জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতাকর্মীরা আদালত চত্বরে জড়ো হতে থাকেন।
এরশাদের মামলাটি আগে ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন ছিল। ২০১৩ সালের ১১ জুন মামলাটিতে যুক্তিতর্কের শুনানি পর্যায়ে ওই আদালতের বিচারক বিব্রত বোধ করে মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠিয়ে দেন। এর পর এ আদালতে মামলাটির বিচার অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত হয়।
খালাস পাওয়া মামলার অপর দুই আসামি হলেন সুলতান মাহমুদ ও মমতাজ উদ্দিন আহমদ। মামলার অপর আসামি এ কে এম মুসা রায়ের আগেই মারা গেছেন।
নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর এরশাদসহ চারজনের বিরুদ্ধে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো (বর্তমানে দুদক) অভিযোগপত্র দাখিল করে।
পরবর্তী সময়ে ১৯৯৫ সালের ১২ আগস্ট এরশাদসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এর পর ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আদেশে স্থগিত ছিল। ২০১০ সালের ১৯ আগস্ট মামলায় বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিয়ে ফ্রান্সের থমসন সিএসএফ কোম্পানির অত্যাধুনিক রাডার না কিনে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টিং কোম্পানির রাডার কিনে সরকারের ৬৪ কোটি চার লাখ ৪২ হাজার ৯১৮ টাকা ক্ষতি করেন।