উচ্ছেদের পর মওদুদের আসবাবপত্র যাচ্ছে স্ত্রীর বাড়িতে
রাজধানীর গুলশানে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের আসবাবপত্র নেওয়া হচ্ছে স্ত্রীর মালিকানাধীন বাড়িতে।
আজ বুধবার বিকেলে এনটিভি অনলাইনকে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘আমি এ মুহূর্তে বেশি কথা বলতে পারছি না। জিনিসপত্র আপাতত আমার স্ত্রীর গুলশানের ২-এর ৮৪ নম্বর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’ স্ত্রী হাসনা জে আহমদের বাড়িটি উচ্ছেদ হওয়া বাড়িটির পাশে।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক জানান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের গুলশানের বাসায় উচ্ছেদ অভিযান এখনো চলছে। তাঁর বাসার বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বাসার আসবাবপত্র দুটি বাড়িতে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে তাঁর একটি হচ্ছে শ্বশুড়বাড়ি এবং অপর বাড়িটির কথা জানা নেই বলে জানান ওসি।
এর আগে আজ দুপুরে গুলশান এভিনিউয়ের ১৫৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওই বাড়িতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এ অভিযান শুরু করে। এতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওয়ালিউর রহমান নেতৃত্ব দেন। রাজউকের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক পুলিশ অভিযানে অংশ নেয়। বাড়িটির পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
এদিকে, বাড়িতে অভিযানের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, রিভিউ খারিজ হয়ে যাওয়ার পর বাড়ি অধিগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে তিনি ঢাকার প্রথম জজ আদালতে দেওয়ানি মামলা করেছেন।
মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার কী করার আছে? কী করব? আমাদের মতো মানুষদের পেশিশক্তির বিরুদ্ধে কী করার আছে?’ তিনি বলেন, এটা প্রতিহিংসার সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত। আদালত তো বলেননি এই বাড়ি থেকে উচ্ছেদের কথা। রাজউকও উচ্ছেদের নোটিশ দেয়নি। বিরোধী দলের রাজনীতি করি বলেই বাসা থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সরকারি দলের নেতা হলে তো এমন হতো না।’
এর আগে গত ৪ জুন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের গুলশানের বাড়ির মালিকানা বিষয়ে করা রিভিউ খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
গত বছর ২ আগস্ট মওদুদ আহমদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির নামজারির নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজউকের আপিল গ্রহণ করেন আপিল বিভাগ। গত ৩০ আগস্ট এ মামলার ৮০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে পরে রিভিউ করেন মওদুদ।
এক আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট ওই বাড়ি মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করার জন্য হাইকোর্ট রায় দেন। রাজউক এ রায়ের বিরুদ্ধে ‘লিভ টু আপিল’ দায়ের করে ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ আপিল বিভাগ রাজউককে আপিলের অনুমতি দেন। এরপর চলতি বছর এ মামলার শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাড়িটি নিয়ে দুদকের উপপরিচালক হারুনুর রশীদ রাজধানীর গুলশান থানায় মওদুদ আহমদ ও তাঁর ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
২০১৪ সালের ১৪ জুন এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেন বিচারিক আদালত। এর বিরুদ্ধে তাঁদের আবেদন গত বছরের ২৩ জুন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ‘লিভ টু আপিল’ করেন মওদুদ আহমদ। এ আবেদনের শুনানি শেষ হওয়ার পর রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার দুটি বিষয়ে রায় দেন আপিল বিভাগ।
দুদকের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাড়িটির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির (রাজউক) কাছ থেকে এক বিঘা ১৩ কাঠার এ বাড়ির মালিকানা পান এহসান। ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্রে এহসানের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী অস্ট্রীয় নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন এহসান। তাঁরা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।
এরপর ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট মওদুদ তাঁর ইংল্যান্ডপ্রবাসী ভাই মনজুরের নামে একটি ভুয়া আমমোক্তারনামা তৈরি করে বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নেন বলে মামলায় অভিযোগ করে দুদক।