ঋণ নিয়ে পরিশোধ করছেন না চবি শিক্ষকরা
বকেয়া ঋণ পরিশোধ করছেন না বিভিন্ন সময়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশ যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কর্তৃপক্ষ একাধিকবার নোটিশ দিয়েও আদায় করতে পারছে না অর্থ। গত এপ্রিলে খেলাপি শিক্ষকদের একটি তালিকা সিন্ডিকেট সভায় পাঠায় রেজিস্ট্রার দপ্তর।
সিন্ডিকেটে তালিকা পাঠানোর প্রায় চার মাস হয়ে গেলেও অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো সফলতা নেই প্রশাসনের। দায়ের করা হয়নি কোনো মামলাও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষকরা চার বছর পর্যন্ত ছুটি নিতে পারেন। ছুটির আগে বিশ্ববিদ্যালয় ঋণ সুবিধাও দেয় তাঁদের। এ ছাড়া বেতন-ভাতা চালু থাকে শিক্ষকদের। তবে কোনো শিক্ষক বিদেশে থেকে গেলে বা ডিগ্রি গ্রহণের পর কর্মস্থলে যোগদান না করলে সব অর্থ ফেরত দেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩ জন শিক্ষক ওই নিয়মের তোয়াক্কা করেননি। অন্যদিকে অর্থ ফেরত পেতে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপও নেয়নি প্রশাসন।
সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা ওই তালিকায় উল্লেখ আছে, ১৯৮৫ সাল থেকে উচ্চশিক্ষায় দেশের বাইরে যাওয়া ৩৩ জন শিক্ষক ডিগ্রি নিয়ে কর্মস্থলে যোগ দেননি। তাঁদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা আছে দুই কোটি ৩৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৭ টাকা। এঁদের মধ্যে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক হাজেরা বেগমের কাছে ছয় হাজার ৮৮৮ টাকা, একই বিভাগের এস এম নজরুল ইসলামের কাছে পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৫৪২ এবং তারেক ইবনে সাফার কাছে এক লাখ ২৩ হাজার ৫১ টাকা পায় বিশ্ববিদ্যালয়।
এ ছাড়া ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. এন আর এম বোরহান উদ্দিন সাড়ে ১১ হাজার এবং ড. রাশেদা খানম এক লাখ ৭২ হাজার ৮৯৮ টাকা পরিশোধ করেননি।
ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষক আমিনুল করিমের কাছে দুই লাখ ৭৫ হাজার ৭৮৮, আনোয়ার আলীর কাছে তিন লাখ ৯৭ হাজার ৩৮০ এবং এ এস এম সোহেল আজাদের কাছে ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৫০২ টাকা পাওনা রয়েছে।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অবিনাশ চন্দ্র মিস্ত্রির কাছে এক লাখ ১৪ হাজার ৮০০ টাকা, ড. মো. হেয়ায়েত উদ্দিনের কাছে এক লাখ ৩০ হাজার ৭৬২ টাকা এবং ইমাম উদ্দিন ভুইয়ার কাছে দুই লাখ ৯৯ হাজার ১০৫ টাকা পাবে বিশ্ববিদ্যালয়।
এ ছাড়া মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এক লাখ ৩৯ হাজার ৩৪৮ টাকা এবং ড. এন এম নূরুল আমিন তাঁদের বকেয়া ঋণের ১১ লাখ দুই হাজার ৯৩৩ টাকা ফেরত দেননি প্রতিষ্ঠানকে।
প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামসাদ সুলতানা তিন লাখ ৩৯ হাজার ৫৫৮ টাকা, বোরহান উদ্দিন এক হাজার ৭৮৯ টাকা, গৌরি রানী বণিক আট লাখ ৯১ হাজার ৭৯৭ টাকা এবং মো. সাইফুল ইসলাম ১১ লাখ ২৬ হাজার ৯৫৮ টাকা পরিশোধ করেননি বিশ্ববিদ্যালয়কে।
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ চৌধুরী ৩৮ হাজার ৫৪০ টাকা, নূরুল আমিন তিন লাখ পাঁচ হাজার ১৭২ টাকা এবং মোহাম্মদ বদরুল মোত্তাকিন দুই লাখ ৯৩ হাজার ৪০২ টাকা পরিশোধ করেননি প্রশাসনকে।
এ ছাড়া অর্থনীতি বিভাগের কামাল উদ্দিন আহমেদ ছয় লাখ সাত হাজার ৪৮২ টাকা এবং একই বিভাগের নুসরাত আজীজ ১০ লাখ ১০ হাজার ৩০৯ টাকা পরিশোধ করেননি।
পরিসংখ্যান বিভাগের রহিম উদ্দিন চৌধুরী আট লাখ ৩৭ হাজার ৪২২ টাকা এবং মাসুম হাসান ১৫ লাখ চার হাজার ৮৫৭ টাকা, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের আবু মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ খান এক লাখ ৫৯ হাজার ৫৪৮ টাকা, ফলিত পদার্থবিদ্যা বিভাগের মো. আসাদ কবির এক লাখ ৫৪ হাজার ৭৭২ টাকা, আরবি বিভাগের আবু বকর রফিক আহমেদ ১৬ হাজার ৯৮৩ টাকা, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দেলোয়ার হোসেন ১৬ লাখ ৬১ হাজার ২৩ টাকা, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের মোহাম্মদ ইমাম হাসান রেজা ১৩ লাখ তিন হাজার ৯০৮ টাকা, দর্শন বিভাগের জান্নাতুল ফেরদৌস আফরিন ১৪ লাখ ৬৪ হাজার ২৫১ টাকা, ইতিহাস বিভাগের এ বি এম মোসলে উদ্দিন এক লাখ ৪৭ হাজার ৭১২ টাকা, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের জাহাঙ্গীর আলম ৬৬ লাখ ৩৯ হাজার ৯০১ টাকা এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সুভাষ চন্দ্র সাহা ১১ হাজার ৩১৮ টাকা পরিশোধ করেননি।
এদিকে, অর্থ আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে গত এপ্রিলে ৫০৮তম সিন্ডিকেটে ঋণের পরিমাণসহ শিক্ষকদের নামের তালিকা উপস্থাপন করে রেজিস্ট্রার দপ্তর। পরে বেশ কয়েকজন শিক্ষক প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঋণ পরিশোধের মৌখিক আশ্বাস দেন। কিন্তু ঋণ এখনো পরিশোধ করেননি বলে জানা গেছে। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি প্রশাসন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. কামরুল হুদা বলেন, ‘সিন্ডিকেটে শিক্ষকদের নামের তালিকা জমা দেওয়ার পর বেশ কয়েকজন শিক্ষক যোগাযোগ করেছেন। তবে অর্থ এখনো পাওয়া যায়নি। শিক্ষকদের কাছ থেকে বকেয়া অর্থ ফেরত নিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেব আমরা।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাপি শিক্ষকদের নামের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশের ব্যাপারে বললে এখনো পর্যন্ত তা করেননি রেজিস্ট্রার।