কারাগারে সঙ্গী চেয়েছেন ধর্ষক রাম রহিম
দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের দায়ে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পেয়ে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের রোহতাক জেলার সোনারিয়া কারাগারে আছেন স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু গুরমিত রাম রহিম সিং। সেখানে সাধারণ কয়েদিদের মতো নিরিবিলি একটি সেলে রাখা হয়েছে। ওই পরিস্থিতিতে থাকা রাম রহিমের স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা জানিয়ে দুই সঙ্গী চেয়েছেন তাঁর আইনজীবী।
গতকাল সোমবার সোনারিয়া কারাগারে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (সিবিআই) অস্থায়ী আদালত দুই মামলায় রাম রহিমকে ১০ বছর করে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। এ রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাম রহিম।
১৫ বছর আগে দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের অভিযোগে ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রধান ৫০ বছর বয়সী রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইর বিশেষ আদালতের বিচারপতি জগদীপ সিং রায় পড়ার সময় রাম রহিম ফুঁপিয়ে কেঁদে বলেন, ‘আমি নির্দোষ…দয়া করে আমায় ক্ষমা করুন।’
কারাগারের বাসিন্দার বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, রোহতাক জেলার সোনারিয়া কারাগার প্রশাসনের পাশেই নির্ধারিত সেলে রাম রহিমকে রাখা হয়েছে। তাঁর কয়েদি নম্বর ১৯৯৭। সেখানে তিনি সঙ্গে কাউকে রাখতে পারবেন না। সাধারণ কয়েদিদের মতোই তাঁকে রাখা হয়েছে।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাম রহিমের নিরাপত্তার জন্য তাঁকে নিরিবিলি স্থানে রাখা হয়েছে। তবে তাঁর আইনজীবী বলেছেন, মাইগ্রেন ও পিঠে ব্যথা আছে তাঁর মক্কেলের। সে জন্য দুজন লোক দরকার, যারা সার্বক্ষণিক তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রাখবে।
কারাবন্দিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার থেকেই কারাগারে কারো সঙ্গে কথা বলছেন না রাম রহিম। ওই দিন থেকেই তিনি তরল খাবার পান পেয়েছেন। তিনি সামান্য পানি অথবা দুধ পান করেছেন।
২০০২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি এবং পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের প্রধান বিচারপতিদ্বয়ের কাছে বেনামি চিঠিটি লেখেন হরিয়ানার সিরসা শহরের ‘গুরু’ রাম রহিমের ডেরার (আস্তানা) এক নারী। সেখানে আনা হয় রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকির অভিযোগ। তুলে ধরা হয় ডেরার ভেতরে বিভিন্ন অনাচারের কথা।
বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পার হওয়ার পর শুক্রবার দেওয়া রায়ে প্রমাণিত হয় সেই চিঠিতে লেখা অনেক অভিযোগ। ভারতের বিশেষ আদালত রাম রহিম সিংকে দোষী সাব্যস্ত করেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৩৭৬ (ধর্ষণ) ও ৫০৬ (সন্ত্রাসী হুমকি) ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ধারাবলে তাঁর সর্বনিম্ন সাত ও সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে শুক্রবার রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করার পর থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সহিংসতায় নিহত হন কমপক্ষে ৩৮ জন। আহত হন ২০০ জনের বেশি মানুষ।