মাদকবিরোধী অভিযানে ফায়ারিং হবেই : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে গেলে সেখানে ফায়ারিং হবেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে থাকা এই মন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে মাদক আছে, সেখানেই অবৈধ অস্ত্র ও অবৈধ টাকা আছে। তাই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে গেলে ফায়ারিং হবেই। সারা বিশ্বেই মাদকবিরোধী অভিযানে ফায়ারিং হয়ে থাকে।’
‘আমরা কাউকে হত্যা করছি না। সেটা আমাদের উদ্দেশ্যও নয়। আমাদের পাঁচটি গোয়েন্দা সংস্থা আলাদা আলাদা তালিকা করেছে। যাদের নাম কমন পড়েছে, তাদের কাছে যাচ্ছে আমাদের আইন প্রয়োগকারী বাহিনী’, যোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আজ শনিবার রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘মাদকবিরোধী অভিযান ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি’বিষয়ক এক গোলটেবিল আলোচনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সারা দেশে একযোগে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযান চলাকালে প্রায় দেড়শ ব্যক্তি মাদকবিরোধী অভিযানের সময় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের আরো দাবি, নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী।
চলমান এই মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। তাঁরা এই ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবি জানিয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফের আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলর একরামুল হক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখায় সাধারণ মানুষ।
পাশাপাশি এ অভিযানকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার বাণিজ্য ও সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগও রয়েছে। যদিও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ ধরনের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।
চলমান অভিযান সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজকের সভায় বলেন, ‘আমরা অলআউট যুদ্ধে গেছি। এ যুদ্ধে জিততে হবে। আমরা বর্ডার সিল করেছি। কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াচ্ছি, অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করছি। আমরা বলেছি, কাউকে মাদকের ব্যবসা করতে দেব না।’
কোনো হত্যাকাণ্ডই তদন্তের বাইরে নয়- উল্লেখ করে আজকের সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একরাম হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে, কমিটি এরই মধ্যে কাজও শুরু করেছে।’
যে মাদক ব্যবসায়ীদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না তাদেরই করুণ পরিণতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে আর কাউকেই মাদকের ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না।
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের সংসদ সদস্য জেলখানায় অন্তরীণ ছিল, আছে। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। হোক সে জনপ্রতিনিধি, হোক সে পুলিশ কর্মকর্তা, হোক সে সরকারি কর্মকর্তা, হোক সে সমাজের বিরাট অধিপতি। আমরা সবসময়ই বলছি যে, আমরা আইন মেনে কাজ করছি।’
অভিযান সস্পর্কে সমালোচনার জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমাদের কারাগারের ধারণক্ষমতা ৩৫ হাজার। সেখানে বর্তমানে আছে ৮৬ হাজার ৩৬৯ জন। এর ৪৪ ভাগই মাদক মামলার আসামি। আমরা প্রকৃত দোষীদের ধরতে আইন সংশোধন করছি।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।