কার্লাইলকে কেন বাংলাদেশের ভিসা দেওয়া হলো না, প্রশ্ন মঈনের
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, ‘লর্ড কার্লাইলকে ভারত ঢুকতে দিল কি দিল না, সেটা নিয়ে আমার কথা নেই। কিন্তু আমার কথা তাঁকে কেন বাংলাদেশের ভিসা দেওয়া হলো না? তাঁকে তো খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত আলোচনা সভায় মঈন এসব কথা বলেন।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘লর্ড কার্লাইল কেন ভারতের ভিসা নেবেন? তাঁকে কেন বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হলো না? আমরা তো তাঁকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছি। আওয়ামী লীগ কি নিজেদের ইতিহাস ভুলে গেছে? আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় বিদেশ থেকে আইনজীবী নিয়োগ দেয়নি? তাঁকে তো তখন বাংলাদেশে আসতে বাধা দেওয়া হয়নি!’ তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কেন লর্ড কার্লাইল তো একজন আইনজীবী, তাঁকে কেন বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হলো না। তিনি তো আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তাহলে তাঁকে কেন খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনি পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি? কেন তাঁকে বাংলাদেশের ভিসা দেওয়া হয়নি?’
উল্লেখ, গতকাল বুধবার যু্ক্তরাজ্যের উচ্চকক্ষ পার্লামেন্ট হাউস অব লর্ডসের সদস্য ও আইনজীবী লর্ড আলেক্সান্ডার কার্লাইলের ভিসা বাতিল করে ভারত সরকার। ফলে নয়াদিল্লি বিমানবন্দর থেকে ফিরে যেতে হয় তাঁকে।
মঈন খান আরো বলেন, ‘দেশের প্রত্যেক মানুষের গণতান্ত্রিক, আইনি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু খালেদা জিয়াকে সেটি দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর জন্য নিয়োগ দেওয়া আইনজীবীকেও আসতে দেওয়া হচ্ছে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকার চায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে আবারও ২০০৮ সালের মতো পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপিকে গৃহপালিত বিরোধী দল বানাতে। কিন্তু সরকারের সেই প্রচেষ্টা কখনো সফল হবে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের আগে সরকারকে অবশ্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে বাধ্য করা হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করা হবে। ইনশাআল্লাহ, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে খালেদা জিয়া চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন।
মঈন খান বলেন, ‘আমরা কোথাও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে পারি না। জাতীয় প্রেসক্লাব বা দলীয় কার্যালয়ের সামনে যেখানেই যে কর্মসূচি দেওয়া হোক না, সেখানে সরকার বাধা দিচ্ছে। হোক সেটি কালো পতাকা প্রদর্শন বা অনশন কর্মসূচি।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘শুধু বিএনপির কর্মসূচি বা বিএনপির ওপর নয়, যারাই আন্দোলন করছে তাদের ওপর সরকার নির্যাতন করছে। কিছুদিন আগেও কোটা আন্দোলনকারীদের কীভাবে হামলা করে নিয়ন্ত্রণ করেছে । বিএনপি বা বিরোধী রাজনৈতিক দল নয়, সরকারে ভিন্নমতে যারাই কথা বলুক, তাদেরই দমন করা হচ্ছে।’
মানবাধিকারের বিষয়ে মঈন খান বলেন, ‘আজ তো মানুষের জীবনেরই নিরাপত্তা নেই। সেখানে মানবাধিকার দিয়ে কী হবে? আগে তো মানুষ বাঁচতে হবে, তার পরেই তো মানবাধিকারের প্রশ্ন আসবে। আজ দেশে কারো জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। যখন যেই সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে, তাকেই কঠোরভাবে দমন করছে এ সরকার।’
বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না—সরকারের নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে একমত। বিএনপি আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো লগি-বৈঠার আন্দোলন করতে পারি না। আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাস করি। তাই আমাদের আন্দোলন তাদের কাছে পছন্দ হবে না।’
মঈন খান সরকারের নেতাদের সমালোচনা করে বলেন, ‘আমরা আপনাদের একটা চ্যালেঞ্জ করি। আসুন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যারাকে রেখে রাস্তায় নামুন, আমরাও আসি। দেখি কার আন্দোলন কত বেশি হয়। কারা টিকে আন্দোলনে সেটা রাজপথেই প্রমাণ হয়ে যাবে। সামনে পিছে ডানে বাঁয়ে পুলিশ, র্যাব রেখে বড় বড় অনেক কথা বলা যায়। রাজপথে সাপের মতো লাঠি দিয়ে মানুষ পিটিয়ে মারা কখনো আন্দোলন হয় না। আমরা সে আন্দোলনে বিশ্বাস করি না।’ তিনি বলেন, ‘আজ দেশে আইনকানুনের কোনো বালাই নেই। সরকারের বিরুদ্ধে যেই কথা বলছে তাকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় একটা নির্জন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু যেখানে কোনো মানুষ থাকে না, সেখানে কেন খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে আমি সরকারের কাছে জানতে চাই।’
সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের বিষয়ে মঈন বলেন, ‘আজ সরকার গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের টুঁটি চেপে ধরে রেখেছে। নিজেদের পছন্দমতো লিখে দেওয়া কথা প্রচার করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সরকার গণমাধ্যমকে জোর করে নিজেদের পক্ষে বলে জনগণকে শোনাচ্ছে।’
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হকের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, ড্যাবের সহসভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ড্যাব নেতা প্রফেসর ডা. গাজী আজিজুল হক, ড্যাব নেতা ও কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ ডা. শহীদুল আলম, বিএনপির পরিবারকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডা. মহসিন, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যপরিষদের সভাপতি সেলিম ভুইয়া।