বাংলাদেশের লড়াই করে হার
বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহর টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, বোলিংয়ে ওপেন করতে এসে সাকিব আল হাসানের চমক এবং ৪ উইকেট শিকার, শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া—বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচটা মনে রাখবেই। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের তাতে মন ভরেছে কি না সন্দেহ! অনেক লড়াই করে নিউজিল্যান্ডের কাছে যে হার মানতে হয়েছে ৩ উইকেটে।
হেরে যাওয়ায় সম্ভবত ‘এ’ গ্রুপের চতুর্থ দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ। সে ক্ষেত্রে শেষ আটের প্রতিপক্ষ হবে ভারত। শনিবার অস্ট্রেলিয়া স্কটল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে গেলে অবশ্য গ্রুপে তৃতীয় হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ। ছয়টি করে ম্যাচ খেলে নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের পয়েন্ট ১২, ৮ ও ৭। এক ম্যাচ কম খেলে বাংলাদেশের সমান ৭ পয়েন্ট সংগ্রহ করা অস্ট্রেলিয়া মাশরাফির দলের চেয়ে নেট রানরেটে এগিয়ে আছে।
২০১০ ও ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সফরে দুটো ওয়ানডে সিরিজে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হওয়া কিউইদের শুরুতেই জোড়া ধাক্কা দেন মাশরাফি বিন মুর্তজার অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব করা সাকিব। পঞ্চম ওভারে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (৮) ও কেইন উইলিয়ামসনকে (১) ফিরিয়ে দলকে দারুণ সূচনা এনে দেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার।
তৃতীয় উইকেটে ১৩১ রানের জুটি গড়ে কিউইদের লড়াইয়ে ফেরান মার্টিন গাপটিল ও রস টেলর। গাপটিলের ষষ্ঠ ওয়ানডে সেঞ্চুরির সুবাদে কিউইরা যখন এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই আবার সাকিবের আঘাত। ৩১তম ওভারে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে রুবেল হোসেনের ক্যাচে পরিণত গাপটিল করেছেন ১০৫ রান। এরপর গ্র্যান্ট এলিয়টকে রুবেল হোসেন ও রস টেলরকে নাসির হোসেন ফিরিয়ে দিলে স্কোর দাঁড়ায় ২১৯/৫। ওয়ানডেতে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা টেলর ৫৬ রান করেছেন। এলিয়টের অবদান ৩৯ রান।
৪৫তম ওভারে লুক রনকিকে নাসির হোসেনের ক্যাচ বানিয়ে বাংলাদেশকে ষষ্ঠ উইকেট এনে দেন সাকিব। দুই ওভার পর মাহমুদউল্লাহর বলে ড্যানিয়েল ভেট্টরির ক্যাচ ফেলে দেন নাসির।
তবে পরের ওভারে আবার সাফল্য পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ২৬ বলে তিনটি করে চার-ছক্কায় ৩৯ রান করা কোরি অ্যান্ডারসনকে বোল্ড করেন নাসির। কিন্তু ভেট্টরি আর টিম সাউদির দৃঢ়তা ৭ বল হাতে রেখে জয় এনে দেয় কিউইদের।
এর আগে হ্যামিল্টনের সেডন পার্ক সাক্ষী হয়েছে এক অসাধারণ সেঞ্চুরির। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও শতক করে মাহমুদউল্লাহ এখন ইতিহাসের পাতায়! এতদিন ওয়ানডের সেরা টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি ছিল না। ইংল্যান্ড ম্যাচে সেই অপ্রাপ্তি ঘোচানোর পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও তিন অঙ্ক ছোঁয়ার আনন্দে বিভোর মাহমুদউল্লাহ। আগের ম্যাচে ১০৩ রান করে আউট হয়ে গেলেও শুক্রবার তাঁকে কেউ আউট করতে পারেননি। তাঁর অপরাজিত ১২৮ রানের সুবাদে ৭ উইকেটে ২৮৮ রান করেছে বাংলাদেশ। ১২৩ বলের দুর্দান্ত ইনিংসটা সাজানো ১২টি চার ও তিনটি ছক্কায়।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ২৭ রানে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল (১৩) ও ইমরুল কায়েসকে (২) হারিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে তৃতীয় উইকেটে সৌম্য সরকারের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর ৯০ রানের জুটিতে দলকে আর দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়নি।
২৮তম ওভারে ড্যানিয়েল ভেট্টরির বলে কোরি অ্যান্ডারসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সৌম্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ফিফটির দেখা পাওয়া সৌম্যর ৫৮ বলে ৫১ রানের দৃঢ়তাভরা ইনিংসে ৭টি চার।
সাকিব উইকেটে এসেই শুরু করেন আক্রমণ। কিন্তু ১৮ বলে তিনটি বাউন্ডারিতে ২৩ রান করার পর অ্যান্ডারসনের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে যান তিনি।
আগের ম্যাচে ৮৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা মুশফিকুর রহিম বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, ফিরে গেছেন ১৫ রান করে। তবে ৪০তম ওভারে মুশফিকের বিদায়ে ১৮২/৫-এ পরিণত বাংলাদেশকে তিনশর কাছাকাছি নিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বিরের ঝড়ো ব্যাটিং। ষষ্ঠ উইকেটে মাত্র ৪৮ বলে ৭৮ রানের জুটি গড়েছেন দুজনে। ২৩ বলে পাঁচটি চার ও দুটি ছক্কায় সাব্বিরের অবদান ৪০ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৮৮/৭ (তামিম ১৩, ইমরুল ২, সৌম্য ৫১, মাহমুদউল্লাহ ১২৮*, সাকিব ২৩, মুশফিক ১৫, সাব্বির ৪০, নাসির ১১, রুবেল ০*; এলিয়ট ২/২৭, অ্যান্ডারসন ২/৪৩, বোল্ট ২/৫৬, ভেট্টরি ১/৪২)
নিউজিল্যান্ড : ৪৮.৫ ওভারে ২৯০/৭ (গাপটিল ১০৫, ম্যাককালাম ৮, উইলিয়ামসন ১, টেলর ৫৬, এলিয়ট ৩৯, অ্যান্ডারসন ৩৯, রনকি ৯, ভেট্টরি ১৬*, সাউদি ১২*; সাকিব ৪/৫৫, নাসির ২/৩২, রুবেল ১/৪০)
ফল : নিউজিল্যান্ড ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : মার্টিন গাপটিল।