বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস
চাই নিরাপদ খাদ্য
আজ ৭ এপ্রিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘খাদ্য নিরাপত্তা এবং সুস্থ জীবন’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্লোগান হলো ‘মাঠ থেকে খাবার টেবিল—সর্বত্র খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন’। খাবার নিরাপদ না হলে বেঁচে থাকাই তো দায়, স্বাস্থ্য তো দূরের কথা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যে খাবার তৈরি হচ্ছে এবং বিক্রি হচ্ছে তা-ই নয়, নানা কৃত্রিম উপায়ে কেবল অশুভ ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার প্রবণতা দেখে আতঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না।
২০১২ সালে ব্রিটেনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট নামে একটি সাময়িকী কর্তৃক প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্স’ শীর্ষক প্রতিবেদন এ বলা হয়, ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশ্বে পেছনের কাতারে রয়েছে বাংলাদেশ। খাদ্য সহজলভ্যতার সূচকে বিশ্বের ১০৫টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ৮১তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্য নিরাপত্তাহীন দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে বাংলাদেশ। এ ছাড়া প্রতিদিনের খাদ্যঘাটতি, খাদ্য বৈচিত্র্যের অভাব, কৃষি খাতে কম বরাদ্দসহ আটটি ঝুঁকির মধ্যে এ দেশের মানুষ বসবাস করছে বলে প্রকাশ করা হয়।
১ ফেব্রুয়ারি-২০১৫ থেকে কার্যকর হয়েছে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন, ২০১৩। এ আইনের আওতায় একজন ভুক্তভোগী খাদ্য গ্রহণের কোনো পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরাসরি মামলা করতে পারবেন।
প্রথমেই আসা যাক শিশুখাদ্যের প্রসঙ্গে। গুঁড়া দুধে বিষাক্ত মেলামিনের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে গেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, দুর্নীতিবাজদের তৎপরতা থেমে নেই। শিশুদের আরেকটি পছন্দের খাবার মুখরোচক চিপসের মধ্যে মেশানো হচ্ছে কৃত্রিম রং। ছোট কারখানায় তৈরি চিপসে মেশানো হয় কৃত্রিম রং, আর সে কাজটিও যে করা হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের কারখানায় তৈরি হওয়া চিপসের তুলনায় এই চিপসগুলো দামে সস্তা, ফলে বিক্রি হয় দেদার। অনেক খাবার ও পানীয়তে কমবেশি রং মেশানো হয়—এমন খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। ফলের ভেতর ইনজেকশনের সুই ফুটিয়ে তরল ইনজেক্ট করার মতো ভয়ানক ব্যাপার ঘটছে। মাছকে তাজা দেখানোর জন্য মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। সফট ড্রিংক, এনার্জি ড্রিংক আর খোলা বাজারের আইসক্রিম—এসব খাবারে যে রং মেশানো হচ্ছে, তা নাকি টেক্সটাইল রং ও লেদার কালার। ভেজাল উত্তেজকপূর্ণ এনার্জি ড্রিংকের নামে হতোদ্যম তরুণদের শরীর ও মনে অফুরন্ত শক্তি জোগানোর এই হীন ও অশুভ তৎপরতা আর কোনো দেশে আছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। দেহের প্রধান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, কিডনি, হৃৎপিণ্ড, মগজ, পেশি, পরিপাকতন্ত্র—এসব যে বিকল হতে চলেছে ভেজাল খাদ্যের জন্য, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।
শুধু তৈরি খাবার নয়, খাবার গ্রহণের আগের অবস্থাটিকেও করতে হবে নিরাপদময়। ফসল, সবজি এবং ফল তোলার কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে সার ও কীটনাশক দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে আরো বেশিদিন আগে সার ও কীটনাশক দেওয়া বন্ধ করে দিতে হয়। তা না হলে এসব রাসায়নিক পদার্থগুলো উৎপাদিত খাদ্যে থেকে যায়। মানুষ খাবার গ্রহণ করলে এসব পদার্থ দেহে প্রবেশ করে, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পরিমাণে সামান্য গ্রহণ করার ফলে আমরা তৎক্ষণাৎ ক্ষতির প্রভাব দেখতে পাই না। পাঁচ বা দশ বছর বা তারও পরে শরীরে নানা রকমের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ভেজাল নিয়ন্ত্রণকারী, মান নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কঠোর হলে আর আইনি প্রয়োগ কঠোর হলে এসব সমস্যা দূর হবে হয়তো। সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভোক্তাসাধারণের সচেতন হতে হবে ভেজাল খাদ্য গ্রহণ রোধে।
ডা. আবদুল্লাহ শাহরিয়ার : সহকারী অধ্যাপক, শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল