কাঁদলেন সাঙ্গাকারা, কাঁদালেনও অনেককে
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কেটেছে দীর্ঘ ১৫ বছর। বিদায়বেলায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়াই স্বাভাবিক। কুমার সাঙ্গাকারা অবশ্য আবেগ নিয়ন্ত্রণের অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি। বিদায়ী টেস্ট শেষে বক্তব্য দেওয়ার সময় পরিবারের কথা বলতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি সবার প্রিয় ‘সাঙ্গা’। ধরা গলায় ধন্যবাদ-কৃতজ্ঞতা-ভালোবাসা জানিয়েছেন সবার প্রতি। নিজে কেঁদেছেন, কাঁদিয়েছেন বাবাসহ অনেককে। সাঙ্গাকারার বিদায়ী ভাষণ তুলে ধরা হলো এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের সামনে।
‘অনেকের কথাই বলতে হবে। প্রথমে যাঁরা এখানে এসেছেন, তাঁদের কথা বলতে চাই। বলতে চাই আমার কলেজ ট্রিনিটি কলেজের কথাও। দারুণ একটা প্রতিষ্ঠানে আমি কাটিয়েছি। আমার জীবনের ভিত গড়ে উঠেছে সেখানে। বলতে চাই আমার সব কোচের কথা। সুনীল ফার্নান্দো এখানে আছেন। তিনি ছিলেন আমার প্রতিদ্বন্দ্বী স্কুলের কোচ। কিন্তু তিনি আমাকে কোচিং করিয়েছেন। মিস্টার বার্টি উইজেসিংহে, যাঁর বয়স এখন ৯০-এর ঘরে। তিনি ছিলেন আমার বিশাল অনুপ্রেরণা। ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার সব সাবেক অধিনায়ক, সতীর্থদের। তাঁদের সহায়তা, তাঁদের অনুপ্রেরণাকে আমি খুব গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করি। সাজঘরে আমরা যে সময়টা কাটিয়েছি তা আমার মনে পড়বে। কৃতজ্ঞতা জানাই চার্লি আর সুঠামি অস্টিনকে। আমার ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করা তাঁদের জন্য সহজ ছিল না। কিন্তু আপনারা আমার ব্যবস্থাপকের চেয়েও আরো বেশি কিছু ছিলেন।
‘অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, কী আমাকে অনুপ্রাণিত করে। এর জন্য বাবা-মা ছাড়া আর কারো দিকে তাকাতে হয় না আমাকে। আমি তোমাদের বিব্রত করতে চাই না। কিন্তু তোমরাই ছিলে আমার অনুপ্রেরণা। ভাই-বোনরাও আমার কাছে অনেক কিছু। তবে সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ আম্মা ও আপাচিকে (বাবা-মা)। সবাই বলে যে নিজের পরিবার বেছে নেওয়া যায় না। কিন্তু আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই তোমাদের ছেলে হয়ে জন্ম নেওয়ার জন্য। আর এমন চমৎকার ভাই-বোনদের পাওয়ার জন্য। আমি সব সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি না। কিন্তু বাবা-মা আর ভাই-বোনরা এখানে থাকায় এটা আমার জন্য খুবই বিরল মুহূর্ত।
‘অনেকেই আমার বড় অর্জনগুলো সম্পর্কে জানতে চান। আমার শতক, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় নিয়ে জানতে চান। কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমার বন্ধুরা। যখন দেখি ৩০ বছরের পুরনো বন্ধুরা আমার খেলা দেখতে এসেছে, খুশিতে মন ভরে যায়। এখন আমি পরিবারের সঙ্গে অনেক বেশি সময় কাটাতে পারব। হারি বা জিতি সবার ভালোবাসা পাব। এটাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন।
‘বিরাট (কোহলি) আর ভারতীয় দলের উদ্দেশে কিছু বলতে চাই। আমার সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমাদের এখানে লড়াকু ক্রিকেট নিয়ে আসার জন্য আরো বেশি ধন্যবাদ জানাতে চাই আপনাদের। বিদায়বেলায় এমন তীব্র লড়াইয়ের চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ার ছিল না আমার। আপনাদের দলটি আমার জীবনের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। এই টেস্টে আপনাদের হারানোর অনেক পরিকল্পনা করেছিলাম। কখনো সফল হওয়া যায়, কখনো যায় না। কিন্তু এখানে আসার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।
‘সবশেষে অ্যাঞ্জি (অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস) আর আমার বাকি সতীর্থদের বলি, তোমরা একটা দারুণ দল। তোমাদের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। তোমরা সবাই নির্ভীক হও। সব সময় জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে আর কখনো হারের কথা ভেবে ভয় পাবে না।’