জানা-অজানায় সাঙ্গাকারা
সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের তালিকায় প্রথম সারিতেই থাকবে কুমার সাঙ্গাকারার নাম। ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে অনেক আলো ছড়িয়ে সদ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার এই সফলতম ব্যাটসম্যান। মাঠ ও মাঠের বাইরে সবার প্রিয় ‘সাঙ্গা’র বেশ কিছু কীর্তি নিয়ে এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য এই আয়োজন।
১. সবচেয়ে কমবয়সী ক্রিকেটার হিসেবে লর্ডসে এমসিসি স্পিরিট অব ক্রিকেটে বক্তৃতা দেওয়ার কৃতিত্ব সাঙ্গাকারার। তিনিই প্রথম ক্রিকেটার, যিনি খেলোয়াড়ি জীবনেই বক্তৃতা দিয়েছিলেন এই সম্মানজনক মঞ্চে। সাঙ্গাকারার সেই বক্তৃতা ভীষণ প্রশংসিত হয়েছিল ক্রিকেট-বিশ্বে।
২. শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরনের সঙ্গে মিলে সাঙ্গাকারা প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। নাম ‘ফাউন্ডেশন অব গুডনেস’।
৩. ব্যাট আর গ্লাভস হাতে অনেক কীর্তি গড়লেও সাঙ্গাকারার ক্রীড়াঙ্গনে যাত্রা শুরু হয়েছিল টেনিস দিয়ে। স্কুলজীবনে টেনিস খেলতেন তিনি।
৪. ২০১২ সালে সাঙ্গাকারা জিতেছিলেন তিনটি আইসিসি পুরস্কার—বর্ষসেরা ক্রিকেটার, বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার ও দর্শকের ভোটে নির্বাচিত সেরা ক্রিকেটার। এক বছরে এই তিনটি পুরস্কার জয়ের কীর্তি আর কারো নেই।
৫. ২০১২ সালে মাহেলা জয়াবর্ধনের পর দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কান হিসেবে টেস্টে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন সাঙ্গাকারা। সবচেয়ে কম ইনিংস খেলে এই মাইলফলক স্পর্শ করে ‘সাঙ্গা’ ছুঁয়ে ফেলেছিলেন দুই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারা ও শচীন টেন্ডুলকারকে। তিনজনই টেস্টে ১০ হাজার রান পূর্ণ করেছেন ১৯৫ ইনিংস খেলে।
৬. টেস্ট ক্রিকেটে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ডে অংশীদার সাঙ্গাকারা। ২০০৬ সালে কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রিয় বন্ধু ও দীর্ঘদিনের সতীর্থ মাহেলা জয়াবর্ধনের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৬২৪ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি। সে ম্যাচে শ্রীলঙ্কার ইনিংস ব্যবধানে জয়ে বিশাল অবদান ছিল দুজনের। জয়াবর্ধনে ৩৭৪ আর ‘সাঙ্গা’ করেছিলেন ২৮৭ রান।
৭. ২০১৩ সালে আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন সাঙ্গাকারা।
৮. ২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়ানডেতে টানা চার ম্যাচে শতক করার অনন্য রেকর্ড গড়েছেন তিনি।
৯. টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কম ইনিংস খেলে ৮০০০, ৯০০০ ও ১১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শের কৃতিত্ব সাঙ্গাকারার। এই কীর্তি গড়তে তিনি পেছনে ফেলেছেন শচীন টেন্ডুলকার, গ্যারি সোবার্সের মতো কিংবদন্তিদের।
১০. দেশে বা বিদেশে যেখানেই খেলতে নেমেছেন, তাঁর ব্যাটে কখনো রানের ভাটা পড়েনি। ঘরের মাটিতে তাঁর ব্যাটিং গড় ৬১, আর বিদেশে ৫৪।
১১. ২০০২ সালে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক করেছিলেন সাঙ্গাকারা। টেস্টে তাঁর মোট ১১টি দ্বিশতক। ১২টি দ্বিশতক নিয়ে তাঁর সামনে আছেন শুধু ব্র্যাডম্যান।
১২. ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ডিসমিসালের রেকর্ড (৪৮২) সাঙ্গাকারার দখলে। তাঁর পরে আছেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। অস্ট্রেলিয়ার এই উইকেটরক্ষকের ডিসমিসাল ৪৭২টি।
১৩. ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি স্টাম্পিংয়ের রেকর্ডও (৯৯) সাঙ্গাকারার।
১৪. ওয়ানডেতে শচীন টেন্ডুলকারের পর সবচেয়ে বেশি রান সাঙ্গাকারার (১৪,২৩৪)। ১৮,৪২৬ রান নিয়ে সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন টেন্ডুলকার।
১৫. ক্রিকেট দিয়ে নিজেকে চিনিয়েছেন। কিন্তু সাঙ্গাকারা ক্রীড়াঙ্গনের এক সত্যিকারের ‘অলরাউন্ডার’। গলফ আর টেনিসেও তিনি দক্ষ। ‘সাঙ্গা’ একজন ভালো সাঁতারুও। স্কুলজীবনে টেনিসপ্রীতি থাকলেও ১৭ বছর বয়সে সিদ্ধান্ত নেন ক্রিকেটে পুরো মনোযোগ দেওয়ার।
১৬. সাত বছর বয়সে সুনীল ফার্নান্দোর কাছে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন সাঙ্গাকারা। ফার্নান্দোর কাছে কোচিং করতেন মুত্তিয়া মুরালিধরনও।
১৭. স্কুলজীবনেই বহুমুখী প্রতিভার জন্য সুখ্যাতি পেয়েছিলেন সাঙ্গাকারা। স্কুলের প্রার্থনাসংগীতে গান গাইতেন। শিখেছিলেন বেহালা বাজানোও। শ্রীলঙ্কার স্কুল পর্যায়ের সম্মানজনক পুরস্কার ‘ট্রিনিটি লায়ন’ পেয়েছিলেন তিনি।
১৮. ছেলেবেলা থেকেই সাঙ্গাকারার বইয়ের প্রতি ঝোঁক। পড়তে আজো ভালোবাসেন তিনি। তাঁর প্রিয় লেখক অস্কার ওয়াইল্ড।
১৯. ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তিনি। ২০০৯ ও ২০১২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০০৭ ও ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের রানার্সআপ দলেরও সদস্য সাঙ্গাকারা।
২০. টেস্ট-ওয়ানডে দুটোতেই তিনি শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।