ওয়েবসাইট হালনাগাদে অনীহা জাবি প্রশাসক-শিক্ষকদের
বিশ্বসেরার তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেলেও পিছিয়ে রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটের মান উন্নয়ন করলেও গবেষণা তথ্য সংযুক্ত করতে অধিকাংশ শিক্ষকের কোনো আগ্রহ নেই।
ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের গবেষণাকাজের কোনো তথ্যই আপডেট করেননি। এর মধ্যে বাদ যায়নি উপাচার্য, উপ-উপচার্য, ট্রেজারার, অনুষদগুলোর ডিন এবং প্রক্টরও। আচার্যের সম্পূর্ণ তথ্যও দেওয়া নেই সেখানে।
ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদ, গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান ও আইন অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং অ্যান্ড জিআইএসের পরিচালদের কোনো গবেষণা কাজের তথ্যও সন্নিবেশ করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরার জন্য সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ছয়টি বিভাগের সন্নিবেশিত তথ্য পর্যালোচনা করে পাওয়া যায়, এই অনুষদে অর্থনীতি, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা, ভূগোল ও পরিবেশ, সরকার ও রাজনীতি, লোক প্রশাসন ও নৃবিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে। এসব বিভাগে মোট ১৩৩ জন শিক্ষক আছেন। এর মধ্যে ৫০ জন শিক্ষকের গবেষণা কাজের তথ্য দেওয়া রয়েছে। বাকি ৮৩ জন শিক্ষকের যোগাযোগের ঠিকানা ছাড়া কোনো তথ্য আপডেট করা নেই। কয়েকজন শিক্ষকের দেওয়া তথ্যের মধ্যে ভুল রয়েছে। শিক্ষকদের পদোন্নতি হলেও তাঁর তথ্য আপডেট করা হয়নি। এ রকম চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব অনুষদ ও বিভাগে।
এ বিষয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নবনীতা শবনম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের গবেষণা তথ্য ওয়েবসাইটে না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান যেমন ক্ষুণ্ণ হচ্ছে তেমনি র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ছে। উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের সুযোগ লাভে শিক্ষার্থীরা অনেকাংশে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত শিক্ষকদের গবেষণা কাজের তথ্য সন্নিবেশ নিশ্চিত করা ও তা প্রতিনিয়ত আপডেট রাখা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট অনেক উন্নত হয়েছে। শিক্ষকদের আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকরা নিজেই তাঁর তথ্য হালনাগাদ করতে পারবে। কিন্তু বারবার মেইল দেওয়ার পরও অধিকাংশ শিক্ষক নিজের তথ্য হালনাগাদ করেন না। শিক্ষকরা নিজেরা আপডেট হতে না চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় আগাবে না। সব শিক্ষক নিজের গবেষণা কাজ আপডেট করলে বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে যাবে।’
ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন আরো বলেন, ‘শিক্ষকদের নতুন নিয়োগ, বিদেশ গমণ, অবসর কাম নোটিশই আইসিটি সেলে আসে না। তাই আমরা চাইলেও সব সময় তথ্য আপডেট রাখেতে পারি না। ওয়েবসাইট আপডেট রাখার জন্য প্রসাশনের সঙ্গে সমন্বয় থাকা জরুরি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আমির হোসেন জানান, ‘শিক্ষকদের কয়েকবার নোটিশ করা হয়েছে। শিক্ষকরা নিজেরা আগ্রহী না হলে আমরা তো বাধ্য করতে পারি না। এ বিষয়ে আবারও উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
আরেক উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নরুল আলম বলেন, ‘সবাইকে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে। শিক্ষকরা তাঁদের তথ্য আপডেট করবেন।’ নিজের গবেষণাকাজের তথ্য আপডেটের বিষয়ে বলেন, ‘দ্রুতই আপডেট করা হবে।’
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এ মামুন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গবেষণা তথ্য আপডেটে অবহেলার জন্য আমরা র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়ছি। যেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে একটু সচেতনার অভাবে আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের শিক্ষকরা অনেক যোগ্য ও তাঁদের গবেষণার মান উন্নত। শুধু শিক্ষকদের গবেষণা তথ্য আপডেট করলেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় স্থান করে নিবে।’
এ সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার বলেন, ‘ওয়েবসাইটের কাজ চলছে। সবাইকে বলে বলে কাজ করাচ্ছি। আমার নিজেরও আপডেট নেই। তথ্য আপডেট করতে সময় প্রয়োজন। আস্তে আস্তে সবাই আপডেট করবে।’