হত্যাকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা সরকারের ভেতর থেকে
সরকারের ভেতর থেকে একটি মহল ব্লগারসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলে দাবি করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। তিনি বলেছেন, ‘সরকারের এই হত্যাকাণ্ডগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার যে অপচেষ্টা, সেই অপচেষ্টা কিন্তু এই হত্যাকারীদের উৎসাহিত করেছে এবং এর ফলে এই হত্যাকারীরা সব সময় নিবিঘ্ন থেকেছে, তাদের কোনো টিকিটি পর্যন্ত কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজে পায়নি।’
আজ রোববার শুদ্ধস্বরের কর্ণধারসহ তিনজনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ইমরান এইচ সরকার।
urgentPhoto
নিজের প্রতিক্রিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের এই মুখপাত্র বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড শুধু ব্লগারদের ওপর আক্রমণ নয়, এটি মুক্তচিন্তার ওপর আক্রমণ এবং যে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়বার জন্য, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র বিনির্মাণের যে আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে আন্দোলন সেটার ওপরে এই আক্রমণ। কিন্তু বারবারই এটাকে একদিকে চাপিয়ে দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডকে নানাভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।’
ইমরান আরো বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেখানে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করার কথা, সেখানে তারা হত্যাকারীদের না খুঁজে বরং কে কী লিখেছে, কে কী বলেছে, কে কী আন্দোলন করে, কে কীভাবে জীবনযাপন করে - এগুলো নিয়ে কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর ফলে বোঝা যাচ্ছে যে, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটাবার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারের স্পষ্ট ব্যর্থতা বিদ্যমান এবং খানিক ক্ষেত্রে সরকারের ভেতর থেকে যদি কোনো রকমের পৃষ্ঠপোষকতা না করা হয়, তাহলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই একের পর এক নির্বিঘ্নভাবে করে যাওয়া সম্ভব নয়। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সরকার এখানে সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ এবং সরকারের ভেতর থেকে এই হত্যাকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলেই হত্যাকারীরা নির্বিঘ্ন থাকছে এবং একের পর এক এই হত্যাকাণ্ডগুলো করছে।’
চারজন ব্লগার হত্যার ঘটনায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি মন্তব্য করে ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাদের গ্রেপ্তার করেছে তাদের কেন কিসের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এখন পর্যন্ত কিন্তু তারা জনসাধারণের কাছে তা পরিষ্কার করেনি। সুতরাং এর মাধ্যমে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক ধরনের রাজনীতি করা হচ্ছে এবং এর ফলে হত্যাকারীরা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হত্যাকারীরা একের পর এক হত্যাকাণ্ড করছে। আপনারা দেখেছেন যাঁরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছেন বা হত্যার হুমকি নিয়ে যাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন আমরা দেখতে পাচ্ছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে কাউকে গ্রেপ্তার করলেও দুইদিনের মধ্যে ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে সেই হত্যাকারী সেই অপরাধী আরেকটা হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।’
নিজের হুমকিদাতাকে আটক সম্পর্কে ইমরান এইচ সরকার বলেন, তাঁর হত্যাকারীকে আটক করাই সমাধান নয়। এখানে তার মতো হাজার হাজার মানুষ অনিরাপদ বোধ করছে এবং নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শুধু দেশের ভেতরে প্রগতিশীলদের হত্যা করা হচ্ছে না বিদেশিদেরও হত্যা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মাজারে হত্যা করা হচ্ছে, পীরদের হত্যা করা হচ্ছে। যাঁরাই এই ধর্মান্ধ উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সমালোচক তাঁরা যদি ধর্ম প্রচারকও হয়ে থাকেন তাঁদেরও হত্যা করা হচ্ছে। অর্থাৎ তাঁদের যে রাজনীতি বা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করবার জন্য যাঁরাই বাধা তাঁদেরই মূলোৎপাটন করবার জন্য যা করা দরকার এই মৌলবাদীরা তাই করছে এবং সরকারের ভেতর থেকে একটি গোষ্ঠী তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।’