খুলনা বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ২৩ জনের মৃত
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে খুলনা বিভাগে মোট ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় নতুন করে এক হাজার ৩২২ শরীরে শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ১১৭ হাজার, আর সুস্থ হয়েছেন ৩৫ হাজার ৮৭৬। ফলে বর্তমান রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার ১৯৫ জন।
এত রোগীর চিকিৎসার জন্য এ বিভাগের হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বা চিকিৎসা উপকরণ নাই। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩৯। বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আজ শুক্রবার দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা জানান, খুলনা বিভাগে গতকাল মোট শনাক্ত ১৩২২ জন, যা বুধবারে ছিল ৯১৭ জন । বৃহস্পতিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৮৬জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৯৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, শতকরা হিসাবে ৫৪ ভাগ। গতকাল যশোরে শনাক্ত হয়েছে ৩৭০ জন।
মঙ্গলবার (২৩) জুন ৯০৩ শনাক্ত, সোমবার (২২জুন) শনাক্ত ৯৯৮ রোরবার (২০জুন) ৯৪৫ শনাক্ত, শনিবার (১৯জুন) ৭৬৩, শুক্রবার (১৮ জুন ) ৬২৫, বৃহস্পতিবার ছিল (১৭ জুন) ১০৩৩ জন, বুধবার (১৬ জুন) ৭৬৫, মঙ্গলবার (১৫ জুন) ৮১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। লকডাউনে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও কমছে না বরং প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে সংক্রমণ।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক আরও জানান, ২৪ ঘণ্টায় খুলনা ৫, বাগেরহাট একজন, সাতক্ষীরা একজন, কুষ্টিয়া সাত, যশোরে পাঁচ, ঝিনাইদহে দুই, চুয়াডাঙ্গায় এক এবং মেহেরপুর একজন নিয়ে মোট ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা বিভাগে গতদিনের চেয়ে কম।
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে আজ সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৫০ হাজার ১১৭ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩৯ জনে। এ সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৫৯২২ জন। ফলে এই মুহূর্তে খুলনা বিভাগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সংখ্যা ১৪ হাজার ১৯৫ জন। কিন্তু খুলনা বিভাগের দশ জেলার হাসপাতালে এত রোগীর ধারণ ক্ষমতা বা চিকিৎসা উপকরণ কোনোটাই নাই। তবে এই রোগীর বড় অংশই নিজ বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
খুলনা করোনা ডেডিকেটড হাসপাতাল ১০০ শয্যা নিয়ে শুরু হলে এখন তা বৃদ্ধি করে ১৩০ শয্যার এবং সঙ্গে খুলনা সদর হাসপাতালে যুক্ত হয়েছে আরও ৭০ শয্যা। বেসরকারিভাবে গাজী মেডিকেল কলেজ হা্সপাতালে ৫০ শয্যা চালু করেছে। তবে আজ শুক্রবার খুলনা করোনা ডেডিকেট্ড হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ১৫৪ জন, সদর হাসপালে ৬৯ জন, আর গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯৪ জন।
খুলনা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সমন্বয়ক ও খুলনা মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. মেহেদী নেওয়াজ স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালককে খুলনা পরিদর্শনে আহ্বান জানিয়েছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিভাগে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে খুলনা জেলা শীর্ষে রয়েছে ২৩৩ জন, তারপর কুষ্টিয়া ১৮০ জন এবং যশোর ১২৪ জন, ছোট জেলার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা ৮২ ।
খুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৩৩২ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ১৬১ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৩৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৩৪৯ জন।
বাগেরহাটে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭৩ জনের। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হলো দুই হাজার ৮৬৭ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৩৪ জন।
সাতক্ষীরায় ৪৮ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ১৭৭ জন এবং মারা গেছেন ৬৬ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুই হাজার ২৩২ জন।
যশোরে নতুন আক্রান্ত ৩৭০ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৭২০ জন। এ সময় মারা গেছেন ১২৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ছয় হাজার ৮৮৯ জন।
নড়াইলে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৩৮ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৪৬১ জন। মারা গেছেন ৩৬ জন এবং সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৯২৯ জন।
মাগুরায় ১০ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৪৩৬ জন। এ সময় মারা গেছেন ২৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ২৩৫ জন।
ঝিনাইদহে শনাক্ত হয়েছেন ১৭৯ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ৮৯০ জন। মারা গেছেন ৮০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৯৩৯ জন।
কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১১১ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ছয় হাজার ৯১২ জন। মারা গেছেন ১৮০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন পাঁচ হাজার ২২২ জন।
চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১১৬ জনের। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৯৫৩ জন। মারা গেছেন ৮২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৪৯ জন।
মেহেরপুর ৪৫ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৫৪০ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৯ জন এবং সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৪০ জন।
খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. গাজী মিজানুর রহমান জানান, গ্রামঞ্চলে সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বড় সমস্যা সংক্রমণ হওর পরও তারা নমুনা পরীক্ষা না করেই স্বাভাবিক কাজ করছে । পরে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসা করতে এসে বুঝছেন করোনায় অক্রান্ত হয়েছে। তখন ফুসফুসে ড্যামেজ ৫০ থেকে ৬০ ভাগ। ফলে তারা মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।