হাশেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ড : নিহত আটজনের খোঁজে আসেনি কেউ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে মোট নিহত হয়েছে ৫২ জন। এর মধ্যে ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনজন আর গতকাল শুক্রবার দুপুরে কারখানা থেকে উদ্ধার করা হয় ৪৯টি লাশ। লাশগুলো পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসা হয়।
এসব লাশ অনেকটাই পুড়ে গেছে। ফলে তাদের শনাক্ত করা জটিল হয়ে পড়েছে। পুলিশ স্বাভাবিকভাবে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করতে পারছিল না। এ কারণে মরদেহ শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য স্বজনদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এজন্য সেই দায়িত্ব পালন করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ঢাকা মেডিকেলে বুথ বসিয়ে এই নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। স্বজনদের কাছ থেকে নেওয়া ডিএনএ নমুনার সঙ্গে লাশের ডিএনএ মিললে তবেই বুঝিয়ে দেওয়া হবে লাশ।
আজ শনিবার রাতে সিআইডির ডিএনএ অ্যানালিস্ট আশরাফুল আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আমরা মোট ৪৮টি মরদেহের ডিএনএ নমুনা বুঝে পেয়েছি। এর মধ্যে ৪০ জনের সন্ধানে এসেছে স্বজনরা। তাদের নুমনা রাখা হয়েছে। কিন্তু এখনো বাকি আটটি মরদেহের সন্ধানে কোনো স্বজন যোগাযোগ করেনি সিআইডির সঙ্গে।
গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে লাশ নিয়ে আসা হয়। তারপর থেকে মর্গের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে পোড়া লাশের গন্ধে। একই সঙ্গে স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে মর্গের আশপাশের পরিবেশ।
সিআইডির কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, ‘৪০টি লাশের খোঁজ নিতে আসা ৫৬ জনের কাছ থেকে ডিএনএ-এর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই পরিবারের দুজনের কাছ থেকেও ডিএনএ-এর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।’
আশরাফুল আলম বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডে নিহতের ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত আটটি লাশের জন্য কোনো স্বজন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। হয়তো আগামীকাল নতুবা অন্যদিন যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা স্বজনদের অপেক্ষায় রয়েছি। যদিও স্বজনদের কাছে এ লাশ বুঝিয়ে দিতে অন্তত ২১ দিনের বেশি সময় লাগবে। কারণ, স্বজনদের ডিএনএ সংগ্রহের পর তা লাশের ডিএনএন-এর সঙ্গে মিলিয়ে লাশ ফেরত দিতে হলে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।’
গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মোট ১৮টি মরদেহ শনাক্তে ডিএনএ-এর নমুনা দিয়েছিলেন নিহতের স্বজনরা। আর আজ শনিবার ২২টি লাশ শনাক্তে নমুনা দিয়েছেন স্বজনরা। গতকাল শুক্রবার যে ১৮টি লাশের সন্ধানে এসেছিলেন স্বজনরা, সেই তালিকাটা পাওয়া যায়নি। তবে আজ শনিবার যে ২২টি লাশের সন্ধানে এসেছিলেন স্বজনরা, সেই ২২ জনের নামের তালিকা হাতে পেয়েছে এই প্রতিবেদক।
যে ২২ জন নিহতের খোঁজ নিতে স্বজনরা এসেছিলেন, তাঁরা হলেন- রিয়া আক্তার, মোছা. মিতু আক্তার, নাঈম ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, মো. রাকিব দেওয়ান, সাজ্জাদ হোসেন সজীব, মোছা. রাবেয়া আক্তার, মো. জিহাদ রানা, মো. নাজমুল হেসেন, মোছা. সেলিনা আক্তার, মোছা. তাসলিমা আক্তার, মোছা. ফাহিমা আক্তার, মো. আকাশ মিয়া, মো. স্বপন মিয়া, মোছা. নাজমা খাতুন, মো. সাগরিকা শায়লা, অমৃতা বেগম, নুসরাত জাহান টুকটুকি, রহিমা আক্তার, ইসরাত জাহান তুলি, হিমা আক্তার ও তাকিয়া আক্তার।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুডসের এই কারখানায় আগুন লাগে। আগুন লাগার পরপরই মিনা আক্তার (৪০) ও স্বপ্না রানী নামে দুই শ্রমিকের লাশ কারখানা থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে মুরসালিন (২২) নামে এক কর্মী রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি আগুন লাগার পর তিনতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার পর পরই গোটা ভবনে আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। আজ বিকেলে ফায়ার সার্ভিস এই তল্লাশি অভিযান শেষ করেছে। আহতদের মধ্যে ১০ জনকে ঢামেক হাসপাতালে এবং ১৬ জনকে রূপগঞ্জ ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।