ঈদের আগের দিন শিমুলিয়াঘাটে উপচেপড়া ভিড়, অপেক্ষায় শতশত যানবাহন
রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের আগের দিন আজ মঙ্গলবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার ঘরমুখী মানুষের উপচেপড়া ঢল দেখা গেছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে। সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার যাত্রী ভিড় করছে লঞ্চ ও ফেরিঘাট এলাকায়। শৃঙ্খলা রক্ষায় ঘাটে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। এর পরও যাত্রীদের চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে, উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। যে যেভাবে পারছে লঞ্চ-ফেরিতে পারি দিচ্ছে পদ্মা।
এ ছাড়া, পদ্মায় তীব্র স্রোতে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরি পারাপারে বেশি সময় লাগছে এবং ঘাটে গণপরিবহণ ও ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বাড়ায় যানবাহন পারাপারে বেগ পেতে হচ্ছে। পারাপারের অপেক্ষায় অবস্থান করছে শতশত ব্যক্তিগত গাড়ি ও পণ্যবাহী ট্রাক। এ ছাড়া ঘাটের অভিমুখে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতেও কয়েক কিলোমিটার জুড়ে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
সিদ্দিকুর রহমান নামের এক যাত্রী জানান, কেরানীগঞ্জের একটি গার্মেন্টসের সুপারভাইজার পদে কাজ করেন তিনি। সপরিবারে যাচ্ছেন বাগেরহাটে। পথে একবার যানবাহন পরিবর্তন করতে ভাড়া একটু বেশি গেছে। ঘাট এলাকায় এসে বৃষ্টির জন্য বিপাকে পড়েছেন পরিবার নিয়ে। যাত্রী ছাউনি অথবা আশপাশে দোকানপাট না থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরির জন্য।
রহিমা বেগম নামের আরেক যাত্রী জানান, তিনি এসেছেন ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে। তিনিও একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। তাঁর সঙ্গে গার্মেন্টসের আরও কয়েকজন পরিচিত রয়েছেন। নদী পারি দিয়ে মাদারীপুরের শিবচরে যাবেন তিনি। কিন্তু, বৃষ্টির কারণে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন আশিক আহমেদ। তিনি জানান, পরিবারের দুই সদস্য নিয়ে মোটরসাইকেলে করে ফরিদপুরের ভাঙায় বাবার বাড়ি ঈদ করতে যাবেন। খুব সহজে ঢাকা থেকে শিমুলিয়া ঘাট এসেছেন। তবে, ফেরির জন্য ঘাট এলাকায় অপেক্ষা করছেন।
ঘাট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে বর্তমানে ১৫টি ফেরি ও ৮৪টি লঞ্চ সচল রয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) শিমুলিয়া নদীবন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, বরাবরই ঈদের আগে শেষ দুদিনে যাত্রীদের চাপ বাড়ে। ৮৪টি লঞ্চ দিয়ে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাজিরকান্দি রুটে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক ফয়সাল আহমেদ জানান, নৌরুটে বর্তমানে ১৫টি ফেরি সচল রয়েছে। ঘাট এলাকায় পারাপারের জন্য যাত্রী ও পণ্যবাহী মিলিয়ে আট শতাধিক যানবাহন রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব যানবাহন পারাপার করা হবে। তবে সকাল থেকে যাত্রী ও মোটরসাইকেলের চাপ রয়েছে ফেরিগুলোতে। বেশ কয়েকটি ফেরি ছাড়তে হয়েছে শুধু যাত্রী ও মোটরসাইকেল নিয়ে।
লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসাইন বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও লঞ্চে নির্ধারিত যাত্রী ধারণের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে৷ পুরো ঘাটজুড়ে বিভিন্ন স্তরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তিন শতাধিক সদস্য মোতায়েন রয়েছে।’
সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রাসেল মনির জানান, রাতে বেশ কয়েকটি ফেরি স্রোতের কারণে বন্ধ ছিল। এ জন্য ঘাট এলাকায় প্রচুর যানবাহন অপেক্ষায় আছে। দুই ঘণ্টার মধ্যে চৌরাস্তায় যানজটসহ অনেক ভিড় কমে যাবে। সকাল থেকে দু-তিনটি ফেরিকে শুধু মোটরসাইকেল নিয়ে পারি দিতে হয়েছে। মোটরসাইকেলের চাপ সবচেয়ে বেশি।