‘ন্যায়বিচার পেলাম না, সালমান মুক্তি পেয়ে গেল’
ইচ্ছা করে হত্যা করেননি সালমান খান। পুরোটাই ছিল দুর্ঘটনাবশত। তাই বলে স্বজনহারাদের ক্ষতি তো আর পোষানো যাবে না।
বলিউডের এই তারকা দীর্ঘ ১৩ বছরের মামলা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ায় চলচ্চিত্রাঙ্গনে যেমন চলছে উচ্ছ্বাস, তেমনি বেদনা গ্রাস করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে। আদালতের রায়ে সালমান বেকসুর খালাস পাওয়ার পর ক্ষোভ আর শোকে কাতর তাঁরা।
সালমানের গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত চার ব্যক্তির একজন আবদুল্লাহ। ১৩ বছর ধরে এ মামলা চলার কোনো অর্থই খুঁজে পাননি তিনি।
রায় নিয়ে আক্ষেপ করে আবদুল্লাহ ডিএনএ ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘১৩টা বছর ধরে আমরা বিচারের অপেক্ষা করেছি। আমরা ন্যায়বিচার পেলাম না, সালমান মুক্তি পেয়ে গেল। আজ সালমান সব দোষ থেকে ছাড় পেয়ে গেছে। সালমানের পক্ষেই যদি কোর্টের এভাবে রায় দেওয়ার ছিল, তাহলে তো বহু আগে দিয়ে দিলেই হতো। এতটা বছর ধরে আমাদের এভাবে অপেক্ষা করানোর কি কোনো মানে হয়?’
সেই ঘটনার পর থেকে আর কাজ করতে পারেন না আবদুল্লাহ। আঘাত পেয়ে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন তিনি।
‘আমি আহত হয়েছিলাম। আমার পা ভেঙে গিয়েছিল। আমার ছোট ছোট বাচ্চা রয়েছে; কিন্তু এই আঘাতের জন্য আমি কাজ করতে পারি না। আমি কীভাবে আয় করব, কীভাবে আমার বাচ্চাদের খাওয়াব? আমি জানি না, আমার সন্তানদের কীভাবে পড়ালেখা করাব, কীভাবে ওদের বড় করে তুলব? ১৩ বছরেও ন্যায়বিচার পেলাম না’, যোগ করেন আবদুল্লাহ।
সেই দিন চালকের আসনে সালমানকে দেখেছিলেন কি না, সে প্রশ্নের জবাবে অবশ্য আবদুল্লাহ স্পষ্ট উত্তর দেননি। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁকে (সালমান খান) গাড়ি চালাতে দেখিনি, কিন্তু অন্যরা দেখেছিল। সবাই বলেছে যে সালমানই গাড়ি চালাচ্ছিল।’
সেই দুর্ঘটনার শিকার আরেকজন আবদুল শেখ। তিনি ও তাঁর পরিবারও বোম্বে হাইকোর্টের এ রায়ে অসন্তোষ ও হতাশা প্রকাশ করেন। তাঁরা সালমানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ ও ভরণপোষণের খরচ চেয়েছেন।
দুর্ঘটনায় আবদুল শেখের পা একেবারে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল। তাঁর স্ত্রী রেশমা বলেন, ‘আদালতের উচিত ছিল আমাদের নিয়ে ভাবা। সালমানের অবশ্যই উচিত আমাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং ভরণপোষণ দেওয়া।’
রেশমা বলেন, চার সন্তানকে নিয়ে উত্তরপ্রদেশের গন্ডা এলাকায় থাকেন তাঁরা। ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে তীব্র অভাব-অনটনের মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে তাঁদের।
‘ঘটনার পর আমার স্বামী আর দিনমজুর হিসেবেও কাজ করতে পারেন না। জমিতে সামান্য একটু কাজ করেন। আামাদের আয়ের আর কোনো পথ নেই। সালমান যদি আমাদের ১০-১৫ লাখ রুপি দিতেন, আমরা সন্তানদের বড় করে তুলতে পারতাম’, যোগ করেন রেশমা।
অবশ্য দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য এরই মধ্যে বোম্বে হাইকোর্টে ১৯ লাখ রুপি জমা দিয়েছেন সালমান খান ।
২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকায় মদ্যপ অবস্থায় ল্যান্ড ক্রুজার চালাচ্ছিলেন সালমান খান। ওই সময় একটি ফুটপাতে পাঁচজন ঘুমন্ত মানুষের ওপর তাঁর গাড়িটি তুলে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই নুরুল্লাহ শরীফ নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরো চারজন।