জামিন পেলেন নাসির-তামিমা
ক্রিকেটার নাসির হোসেন এবং তাঁর স্ত্রী পরিচয় দেওয়া তামিমা সুলতানা তাম্মীসহ তিন জন জামিন পেয়েছেন। আজ রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম এই আদেশ দেন।
নাসির-তামিমার আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ হিরু এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শুনানিতে কাজী নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, ‘বিচারক ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় আসামিদের জামিন দিয়েছেন। এ ছাড়া বিচারক মামলাটি বদলির নির্দেশ দিয়েছেন। মাননীয় আদালত, পিবিআই যে তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছে এবং আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা জামিনযোগ্য ধারা। তাই আসামিরা জামিন পেতে হকদার। এ ছাড়া নাসিরের বিরুদ্ধে তালাক জালিয়াতির কোনো অভিযোগ নেই।’
শুনানিতে আইনজীবী নাসির-তামিমার পক্ষে কাজী নজিবুল্লাহ হিরু আরও বলেন, ‘বাদীর সঙ্গে পাঁচ বছর ধরে সম্পর্ক নেই। এতদিন পরে মনে হলো—তালাক জালিয়াতি হয়েছে? তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালাক রেজিস্ট্রি হয়েছে। কিন্তু যে কথাটা বলেছে—তালাকের ডাক রশিদ জাল, সেটা তো আমার বিষয় নয়। আমি কাজী অফিসে তালাক দিয়েছি, সেটা তাঁর ব্যাপার। আর, পাঁচ বছর পূর্বে তালাক হয়েছে, সেটা ডাক অফিস সংরক্ষণে না রাখাটা আমার ওপর বর্তায় না। আমি সঠিক নিয়মে তালাক দিয়েছি। এ ছাড়া নাসিরের যদি মামলা না থাকতো, তাহলে তিনি চলমান বিশ্বকাপে যেতেন। তাঁর অসংখ্য ফ্যান রয়েছে। আজ আদালতেও দেখতে এসেছে। আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আমি জামিন চাচ্ছি।’
অপরদিকে বাদীর আইনজীবী বলেন, ‘আসামিরা মামলার জামিনের দরখাস্তে ধারা সঠিকভাবে দেননি। এখানে দণ্ডবিধির ৪৬৮ ধারা অনুযায়ী যে অভিযোগ, তা জামিনঅযোগ্য এটা উল্লেখ করেননি। তাই ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুসারে অনুকম্পা পেতে পারেন না। এ ছাড়া তামিমা একজন বিমানবালা। তিনি প্রায় সময় বিদেশ যান। জামিন পেলে পলাতক হতে পারেন। হাইকোর্টেও বলা আছে, আসামি আদালতের অনুমতি ব্যতীত যেতে পারবেন না।’
বাদীর আইনজীবী আরও বলেন, ‘নাসিরের সঙ্গে বিয়ের আগে একসঙ্গে তামিমা থেকেছেন। হোটেলে তামিমার সাবেক স্বামীর নামে রুম বুক করা। এ ছাড়া পাসপোর্টে আগের স্বামীর নাম এখনও রয়েছে। তাই, আসামির জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ চাচ্ছি।’
এর আগে আজ রোববার সকালে নাসির ও তামিমা আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর নাসির হোসেন এবং তামিমা সুলতানা তাম্মীর বিরুদ্ধে এ মামলায় সমন জারির নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে মামলার তদন্তে ক্রিকেটার নাসির হোসেন, সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের বিমানবালা তামিমা সুলতানা তাম্মী এবং তামিমার মা সুমি আক্তারকে দোষী উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ডিভোর্স পেপার ছাড়াই অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে করা মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীমের আদালতে তামিমার সাবেক স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
রাকিবের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, ‘২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাদীর (রাকিব হাসান) সঙ্গে এক নম্বর আসামি তামিমা সুলতানার ইসলামি শরীয়ত অনুযায়ী, তিন লাখ এক টাকা দেনমোহরে বিয়ে এবং রেজিস্ট্রি হয়। বিয়ের পর থেকে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করতে থাকেন। তাঁদের তোবা হাসান নামে এক মেয়ে রয়েছে। যার বর্তমান বয়স আট বছর।’
মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, তামিমা পেশায় একজন বিমানবালা। তিনি সৌদি এয়ারলাইন্সে কর্মরত রয়েছেন। চাকরির সুবাদে তিনি ২০২০ সালের ১০ মার্চ সৌদিতে গিয়েছিলেন। মহামারির কারণে জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হইলে সেখানেই অবস্থান করেন। এ সময় ফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রাকিবের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হতো।
মামলায় বলা হয়, ‘চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি তামিমার সঙ্গে দুই নম্বর আসামির (ক্রিকেটার নাসির) কথিত বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা বাদীর নজরে আসে। বাদী এই ধরনের ছবি দেখে হতবাক হয়ে যান। পরবর্তীকালে পত্রিকায় এই বিষয়ে সংবাদ দেখে তিনি ঘটনার বিষয় নিশ্চিত হন।’
এ ছাড়া তাঁদের গায়ে হলুদ ও বিয়ে পরবর্তী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান যথাক্রমে ১৭ ও ২০ ফেব্রুয়ারি সম্পন্ন হয়। যা এরই মধ্যে বিভিন্ন সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘তামিমা বাদীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক চলমান থাকাবস্থায় নাসিরের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। নাসির বাদীকে ফোন করে জানান যে সম্পূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত এবং তার নিকট তামিমা আছেন। বাদীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক চলমান থাকাবস্থায় তামিমার নাসিরকে বিয়ে করা যা ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইনে সম্পূর্ণ অবৈধ। আসামির সঙ্গে তিনি অবৈধ বিয়ের সম্পর্ক দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, যা নিকৃষ্ট ব্যভিচার।’
অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘আসামিদের এরূপ অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে বাদী ও তার শিশু কন্যা মারাত্মকভাবে মানসিক বিপর্যস্ত হয়েছেন। আসামিদের এহেন কার্যকলাপে বাদীর চরমভাবে মানহানি হয়েছে, যা বাদীর জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’