‘অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়ায় স্কুলছাত্রের মৃত্যু’, অভিযুক্ত হাসপাতাল কর্মচারী গ্রেপ্তার
দাবির চেয়ে ৫০ টাকা কম বকশিশ দেওয়ায় রোগীর অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিলে স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে—এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মী মো. আসাদুল ইসলাম মীর ধলুকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা থেকে আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
পরে আসাদুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, বগুড়ার একটি সরকারি কলেজ হাসপাতালে গত ৯ নভেম্বর আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টায় দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মী চিকিৎসারত গুরুতর আহত এক রোগীর মুখের অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলার কারণে একজন গুরুতর আহত রোগীর মৃত্যু ঘটে বলে জানা যায়। ভিকটিম স্কুলছাত্র বিকাশ চন্দ্র দাশ (১৭) গাইবান্ধার স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে ওয়েল্ডিং-এর কাজ করে নিজের পড়াশোনার ও পরিবারের খরচ চালাত বলে জানা যায়।
র্যাব আরও জানায়, গত ৯ নভেম্বর বিকাশ চন্দ্র দাশ সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে গাইবান্ধার সাঘাটায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরে পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে আনুমানিক রাত ১০টার সময় অভিভাবকেরা (শজিমেক) হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছালে হাসপাতালের দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মী মো. আসাদুল ইসলাম মীর ধলু আহত বিকাশের অভিভাবকের কাছে চিকিৎসা দালালির নামে ৫০০ টাকা দাবি করে এবং পরবর্তীকালে ২০০ টাকায় রাজি হয়।
বিকাশকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসক রোগীকে জরুরি সেবা দিয়ে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে দেন এবং ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেন।
এরপর বিকাশকে মো. আসাদুল ইসলাম মীর ধলু সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে নিয়ে যান। নিয়মিত শয্যা না থাকায় বিকাশকে ফ্লোরে বেড দেওয়া হয়। এর পর বিকাশের অভিভাবকের কাছে ধলু টাকা চাইলে তাদের কাছে ১৫০ টাকা থাকায় ধলুকে ১৫০ টাকা দেওয়া হয়। তখন তিনি আরও টাকা দাবি করলে বিকাশের অভিভাবকেরা জানান, তাঁদের কাছে আর কোনো টাকা নেই। তখন মো. আসাদুল ইসলাম ধলু উত্তেজিত হয়ে বিকাশের অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিয়ে গালিগালাজ করেন। এর পরই শ্বাসকষ্টজনিত কারণে বিকাশের মৃত্যু হয়। তখন হাসপাতালে অন্যান্য রোগী এবং পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন লোকজন জড়ো হয়। এ সময় হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্ট করেন। তখন সুযোগ বুঝে ধলু পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
র্যাব আরও জানায় বিকাশ চন্দ্র দাশের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কতৃপক্ষ বুধবার দিবারাত সাড়ে ১২টায় বগুড়া সদর থানায় মো. আসাদুল ইসলাম মীর ধলুকে আসামি করে ৩০৪(ক) পেনাল কোড ধারায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নম্বর-২৯।
র্যাব আরও জানায়, বিকাশের ‘নির্মম হত্যাকাণ্ডের’ ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়। র্যাব এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আসামিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১২-এর অভিযানে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকার আব্দুলাহপুর থেকে মো. আসাদুল ইসলাম মীর ধলুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মো. আসাদুল ইসলাম মীর ধলু ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র দাশ চিকিৎসারত অবস্থায় তার অক্সিজেন মাস্ক বিচ্ছিন্ন করায় বিষয়টি স্বীকার করেছেন। মো আসাদুল ইসলাম মীর ধলু ছয় বছর ধরে শজিমেক হাসপাতালে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে অস্থায়ীভাবে কাজ করছেন। প্রতিদিন তিনি দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করার পর বিকেল থেকে হাসপাতালের জরুরি আউটডোরে রোগীদের ট্রলিতে করে পৌঁছে দেওয়া বা অন্যান্য দালালিসহ বিভিন্ন কাজ করতেন। তিনি এ কাজের মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান।
স্কুলছাত্র বিকাশের মৃত্যুর ঘটনার পর বগুড়া থেকে ধলু প্রথমে নওগাঁ এবং পরবর্তীকালে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে র্যাব সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে।