তিন মাস ধরে ডা. মুরাদকে পরিবর্তিত লেগেছে : তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, তিন মাস ধরে ডা. মুরাদ হাসানকে তাঁর কাছে একটু পরিবর্তিত লেগেছে। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডা. মুরাদের তিন মাসের বিভিন্ন ঘটনা ও কর্মকাণ্ড আমার কাছে পরিবর্তিত মনে হচ্ছিল। তবে তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমার অনেক কাজে সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ডা. মুরাদ, সরকার ও দলকে বিব্রত করেছে। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী ডা. মুরাদকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। সে অনুযায়ী নিজের স্বাক্ষর করা পদত্যাগপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছেন।’
আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘পুরো বিষয়টি আসলে দুঃখজনক। তিনি (ডা. মুরাদ) আমাকে মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সব সময় সহযোগিতা করেছেন। সেজন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। তাঁর সুস্থতা ও মঙ্গল কামনা করি।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ডা. মুরাদ জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক। তাঁর বহিষ্কারের বিষয়ে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেবে।
ডা. মুরাদের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ বিলুপ্ত করার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, কারো যদি নৈতিক স্খলন হয় বা কারো কর্মকাণ্ডে নৈতিক স্খলনের মতো ঘটনা ঘটে তাহলে প্রধানমন্ত্রী যে কাউকে পদত্যাগ করতে বলতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দলের বিষয়টি দল বৈঠক করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার কাছে ডা. মুরাদের কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন মনে হয়েছে। আগে যেমন ছিলেন, তার থেকে ভিন্ন মনে হয়েছে। এটা অনুভবের বিষয়।’
এ সময় ডা. মুরাদের ‘অস্থিরতা’র বিষয়ে একজন গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ডাক্তার নই। ডাক্তার হলে দেখতাম। এ ছাড়া, ডা. মুরাদ বেশ কিছু বক্তব্য দিয়েছে, যা তিনি দলের সঙ্গে যোগাযোগ না করে দিয়েছেন। সেগুলোর কারণে আমাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাঁর সাম্প্রতিক কিছু কথা ও আচরণে সরকার ও দলকে বিব্রত হতে হয়েছে, তাই প্রধানমন্ত্রী তাঁকে পদত্যাগ করতে বলেছেন।’
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘ডা. মুরাদ প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে কথা বলেছেন- এমনটি আমার জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী এই কথাগুলো সমর্থন করেন বলে আমার মনে হয় না। আমি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করেছি। দল বিব্রত হয়, সরকার বিব্রত হয়, এমন কোনো কথা প্রধানমন্ত্রী কখনো সমর্থন করেন না।’
এ সময় তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ডা. মুরাদ হাসান সংসদ সদস্য হিসেবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, যে কেউ চাইলেই তাঁকে বাদ দিতে পারবেন না।’
সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে মন্তব্যের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের পদত্যাগের দাবি তোলে বিএনপি। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও চিত্রনায়ক ইমনের সঙ্গে ডা. মুরাদের একটি ফোন আলাপের অডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেশের একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে মুরাদ হাসানকে অশালীন ভাষায় কথা বলতে এবং তাঁকে হুমকি দিতে শোনা যায়।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। একপর্যায়ে গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন।