এনটিভিতে আমার ভালোবাসার দিনগুলো
সময়টা ২০০২ সাল, মনটা খুব খারাপ। প্রাণপ্রিয় একুশে টেলিভিশন যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। উচ্চ আদালত থেকে ঘোষণা এসেছে, একুশে টিভি বন্ধ হওয়ার ঘোষণা। খুব দ্রুততার সাথে ওই দিন রাতেই রায় কার্যকর করা হলো।
তার পরদিন অনেকের সাথেই এ বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করলাম। আমাদের আসলে কী হবে? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? আমরা সবাই ভয়াবহ দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলাম।
হঠাৎ একদিন বিকেলে হাসনাইন খুরশেদ শুচি ভাই এসে আমাকে বললেন, ‘পাগলা, একটা টপ সিক্রেট ঘটনা আছে, একজন একটি টেলিভিশনের লাইসেন্স কিনবেন, যদি আমরা সেই চ্যানেলটি চালানোর জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করি।’
আমি এককথায় রাজি হয়ে গেলাম। তারপর তিন-চার দিনের মধ্যেই চ্যানেলটির বাজেট, কত জন লোক লাগবে, এইচআর অ্যাডমিন পলিসি, কী কী ধরনের যন্ত্রপাতি লাগবে, তার একটি বেসিক হিসাব শুচি ভাইকে দিলাম।
কারওয়ান বাজারের একটি ফাস্টফুডের দোকানে আমি, শুচি ভাই, দীপু ভাই, আমিন ভাই, সুপন রায়, শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম একসঙ্গে বসে পরিকল্পনা শুরু হলো। সেখানে তিন থেকে চার ঘণ্টা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তারপর শুচি ভাই বনানীর একটি অফিসে নিয়ে যান। দেখে পছন্দ হলো এবং সিদ্ধান্ত নিলাম, এটিই হবে আমাদের অস্থায়ী অফিস।
এই অস্থায়ী অফিসেই লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেল। বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের লোকজনকে ধীরে ধীরে ইন্টারভিউ নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হলো এবং দক্ষ করে তোলা হলো।
এরপর কারওয়ান বাজারের বিএসইসি ভবনের সপ্তম তলায় এনটিভির স্থায়ী অফিস নেওয়া হলো। ভবনের সপ্তম তলাটি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের উপযোগী করে ডিজাইন করে ব্যাপকভাবে কাজ শুরু হলো। তারপর সিদ্ধান্ত হয় ২০০৩ সালের ৩ জুলাই এনটিভি উদ্বোধন হবে।
নতুনভাবে নিউজ, প্রোগ্রাম, গ্রাফিক্স, প্রোমো, এনটিভি লোগো, থিম সং, উদ্বোধন অনুষ্ঠান ইত্যাদির কাজ শুরু হয়। ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতুর রহমান বাপ্পী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হানিফ সংকেতের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর মধ্যে আমি জনাব বাপ্পী ভাইয়ের কাছে এনটিভির স্লোগানের কথা জিজ্ঞেস করি। জানতে পারি, জনাব হানিফ সংকেত স্লোগান ঠিক করেছেন, ‘সময়ের সাথে আগামীর পথে’। সবার স্লোগানটি পছন্দ হয়। এরপর থেকে এটিই এনটিভির স্লোগান।
এনটিভিতে যোগ দিই চিফ কো-অর্ডিনেটর হিসেবে। প্রাথমিক পর্যায়ে সব ধরনের সবকিছুতে আমাকে কো-অর্ডিনেট করতে হতো। আর তখন লোকজন আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করত। সবার সহযোগিতার কারণেই এনটিভি খুব দ্রুত ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়।
তখনকার সময় এ রকম হেল্পফুল ম্যানেজমেন্ট আমার জীবনে কখনও পাইনি। এনটিভিতে থাকাকালে চেয়ারম্যান স্যারকে (আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী) তিন বার নিউজরুমে নিতে পেরেছি। কারণ, ম্যানেজমেন্ট আমাদের কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করত না। বিশেষ করে নিউজে। যে কারণে উনারা কোনও রুমে যেতেন না। এ জন্য আমরা সব ধরনের নিউজ প্রোগ্রাম খুব সহজে করতে পারতাম। প্রতিদিন আনন্দের সাথে অফিস করতাম। প্রতিটা লোকের জন্মদিন, বিয়ে, বিবাহবার্ষিকী অত্যন্ত আনন্দের সাথে উদযাপন করতাম। আমি ব্যক্তিগত ভাবে উচ্চ-স্বরে গান শুনতাম।
এক সন্ধ্যায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এর মধ্যে এমসিআর-এর একজন কর্মকর্তা এসে বলেন, যে সরঞ্জাম দিয়ে অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হবে, সেটিই আমাদের কাছে নেই। তার পর আমার বন্ধু হাসান আবেদুর রেজা জুয়েলকে ফোন করে তাঁর কাছ থেকে সেই সরঞ্জামটি এনে অনুষ্ঠানটি প্রদর্শনে সক্ষম হয়। এর মাধ্যমেই বোঝা যায়, মানুষ কী পরিমাণ এই চ্যানেলটিকে ভালোবেসেছে।
৩ জুলাই ১৮ বছর পেরিয়ে ১৯ বছরে পদার্পণ করেছেন এনটিভি। এই শুভ ক্ষণে এনটিভির সাবেক সহকর্মী, বর্তমানে যাঁরা কর্মরত, সবাইকে অভিনন্দন জানাই। এনটিভির পথচলা দীর্ঘ হোক। শুভ কামনা।