ডিএসই : দুর্বলদের দাপটে লেনদেনে পিছিয়ে ভালোরা
বিদায়ী সপ্তাহে (রোববার থেকে বৃহস্পতিবার) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। আলোচিত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। একই সাথে বেড়েছে পুঁজিবাজারে মূলধন। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর পতনের চেয়ে উত্থান দ্বিগুন। মোট লেনদেনের ২৯ শতাংশই দশ কোম্পানির দখলে রয়েছে। শীর্ষ দশ কোম্পানির লেনদেনে নয়টিই ‘বি’ ক্যাটাগরি বা দুর্বল কোম্পানির শেয়ার।
ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, গেল সপ্তাহে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৯০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। বাকি ১০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার টপটেনে অবস্থান করেছে। এদের মধ্যে ছয়টির দর বাড়লেও কমেছে চারটির শেয়ার দর। গেল সপ্তাহে মোট লেনদেনের ২৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। এই দশটি লেনদেন করেছে ৮৭৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ‘বি’ ক্যাটাগরির সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ার। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের লেনদেন করেছে ১৪২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ।
এছাড়া অলিম্পিক এক্সেসরিজের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১০৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা, খুলনা প্রিন্টিংয়ের (‘বি’ক্যাটাগরি) ৯৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, প্যাসিফিক ডেনিমসের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৮৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, ফু-ওয়াং সিরামিকের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৮৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, বিডি থাইয়ের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৭৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, এডভেন্ট ফার্মার (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৭১ কোটি ৭২ লাখ টাকা, ইয়াকিন পলিমারের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৭০ কোটি ৫ লাখ টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশেনর (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৬৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং এসকে ট্রিমসের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৬৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
দুর্বল কোম্পানি লেনদেনে এগিয়ে আসার প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ফ্লোর প্রাইজ আরোপের কারণে কোম্পানিগুলোর শেয়ার একটি জায়গায় স্থির হয়ে আছে। এতে আলোচিত কোম্পানিগুলোর লেনদেন গতি কম। আবার ওইসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা রয়েছে পিছিয়ে। লাভের আশার তারা বিকল্প ধারায় এগিয়েছে। এই জন্যই দুর্বল কোম্পানির দিতে ঝুঁকে পড়ছে তারা।
আবু আহমেদ আরও বলেন, দুর্বল কোম্পানিগুলোর প্রতি আগ্রহ বাড়াতে শেয়ারবাজার স্বাভাবিক লেনদেনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু পুঁজিবাজারের নিয়ম, এটি না। বাজারকে স্বাভাবিকভভাবে চলতে দিতে হবে। শেয়ারবাজারে উত্থান পতন থাকবে। শুধু উত্থান যেমন প্রত্যাশা করা বোকামি, তেমনি পতনও ভাল না।
ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশের পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে শেয়ারের যে সর্বনিম্ন দাম (ফ্লোর প্রাইস) বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তা পুঁজিবাজারের সুসময়ে তুলে নেওয়া হবে।
দুর্বলদের দাপট চলছে জানিয়ে অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ভাল কোম্পানির শেয়ারগুলোর প্রায় ৮০ ভাগ ফ্লোরপ্রাইজে আটকে আছে। এই সুযোগে মুনাফার লোভ দেখিয়ে শেয়ারবাজারের কারসাজি চক্র দুর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে খেলছে। তাদের এই খেলার কারণে দুর্বলসহ বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর হ্রাস বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র মতে, গেল সপ্তায় ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৯৮১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তায় লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ২৭৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৩০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৯৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১১০টির, দর কমেছে ৬৫টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২১২টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ১৮টি কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহে প্রধান সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪ দশমিক ২৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৬৬ দশমিক ৮৫ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস তিন দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৬৪ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৮ দশমিক ১৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১০৭ দশমিক ১২ পয়েন্টে।
গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপর ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর শেয়ারবাজার মূলধন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর শেয়ারবাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭৪ হাজার ৫৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকায়। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯০৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৬৭০ কোটি ২১ লাখ টাকা বা দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট।
এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৮২ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ৫৭ পয়েন্টে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবারের ডিএসইর পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।