সাক্ষাৎকার
‘আমাদের ক্রিকেটের কাঠামোতে পরিবর্তন জরুরি’
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ‘রান মেশিন’ হিসেবে খ্যাত তুষার ইমরান। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে ১২ হাজার রানের মাইলফলকের কাছাকাছি যাওয়া একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনি। গড়েছেন সর্বাধিক সেঞ্চুরির করার রেকর্ড। ১৮২ ম্যাচে ৩২ সেঞ্চুরি ও ৬৩টি হাফসেঞ্চুরিতে বিশ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সংগ্রহ করেছেন ১১ হাজার ৯৭২ রান। তবে মাত্র ২৮ রানের জন্য ছুঁতে পারেননি ১২ হাজারের মাইলফলক। ইনজুরির কারণে সম্প্রতি অবসরে গেছেন সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার।
তুষার ইমরান ১৯৮৩ সালের ১০ ডিসেম্বর যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ২০০০-২০০১ মৌসুমে মাত্র সতের বছর বয়সে ঘরোয়া ক্রিকেটে খুলনা বিভাগের হয়ে ১৩২ রান করে আলোচনায় আসেন। পরের বছর তিনি টেস্ট দলে জায়গা পান। অবশ্য এর আগে ২০০১ সালে ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। তিনি বাংলাদেশের হয়ে ৫ টেস্ট ও ৪১টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলেছেন তিনি। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য তাঁর বিস্তারিত সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো :
এনটিভি অনলাইন : ক্রিকেটে আপনার শুরুটা কেমন?
তুষার ইমরান : ১৯৯৮ সালে যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করি। তারপর খেলাধুলার জন্য ঢাকায় চলে আসি। এইচএসসি পরীক্ষাটা ঠিক সময়ে দেওয়া হয়নি। তবে পরবর্তীতে পরীক্ষা দেই। খেলাধুলার কারণে দেশে থাকা হতো না। তখন জাতীয় দলের সঙ্গে বিভিন্ন সফরে যেতাম। যে কারণে পড়াশোনার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
এনটিভি অনলাইন : ক্রিকেটে আসার আগ্রহটা কবে থেকে শুরু?
তুষার ইমরান : ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করতাম। ফুটবল, হকি ও ক্রিকেটসহ সব খেলাই খেলতাম। ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় ১৯৯৭ সালের দিকে। তখনও আমি ওইভাবে ক্রিকেট খেলি না। এমনিতে স্কুল পর্যায়ে খেলাগুলো খেলতাম। পরবর্তিতে হকিতে এডমিশন দেওয়ার জন্য বিকেএসপিতে যাই। তিন মাসের ক্যাম্প করার পর সেখানে সুযোগ পাই। এডমিশন ক্যাম্প শেষ হওয়ার পর একদিন ছুটি ছিল। সেদিন আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে বের হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চলে যাই। তখন হলুদ রঙের বেবি টেক্সি ছিল। সেগুলোর ভেতর মারামারির মতো কিছু হচ্ছিল। বিকেএসপির নিয়ম ছিল সাদা ড্রেস পরতে হবে। সেখানে সবার সাদা ড্রেস দেখি লাল হয়ে গেছে। পরে জানলাম বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জিতেছে। তখনও আমি খুব একটা ক্রিকেট খেলতাম না। টার্গেট ছিল, বিকেএসপিতে হকি খেলব। কিন্তু পরে মাইন্ড চেঞ্জ করে, হকির পরিবর্তে ক্রিকেট খেলার সিদ্ধান্ত নেই।
অবশ্য বিকেএসপিতে আমি হকিতে ছিলাম। খেলোয়াড় হতে হলে বিকেএসপিতেই ভর্তি হতে হবে, এমন না। আমি তখন স্কুল ও জেলা পর্যায়ে ক্রিকেট খেলতাম। পরবর্তীতে একটা দলে সঙ্গে যুক্ত হই। এভাবেই মূলত আমার ক্রিকেটে আসা। যশোরের সাজ্জাদ হোসেন নামের এক ভাই আমাকে ঢাকাতে নিয়ে আসেন। তৃতীয় বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগে খেলে ধানমণ্ডি ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি করি।
এনটিভি অনলাইন : ক্যারিয়ারে কেমন সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়েছে আপনাকে?
তুষার ইমরান : শুরুর দিকে একটু কষ্ট হয়েছিল। প্রথম বছরে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের হয়ে খেলি। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার জন্য আবার যশোর চলে যাই। সেখান থেকে আসার পর আসাদুল্লাহ খান বিপ্লব ভাই কোয়ালিফাই খেলার জন্য আমাকে নিয়ে যান প্রান্তিক ক্লাবে। সেই মৌসুমে আবার কাঠাল বাগান ক্লাবের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগ খেলি। তারপর থার্ড ডিভিশনেও একটা দলে খেলা হয়েছে। পরে এক স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি কিছুদিন পর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখান থেকে আসার পর আবার আমাকে তিনি দেখাশোনা করেন। সেই সময় প্রথম এক বছর একটু কষ্টে কাটে। তখন ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া কঠিন ছিল। কিন্তু তৃতীয় বিভাগ লিগের একটি ম্যাচে ধানমণ্ডি ক্লাবের এক বড় ভাই অসুস্থ থাকায় তাঁর জায়গায় স্যার আমাকে একটি সুযোগ দেন। সেই ম্যাচেই আমি হাফসেঞ্চুরি করি। এর পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি আমাকে।
এনটিভি অনলাইন : আপনার জীবনে কোন ম্যাচকে স্মরণীয় বলে মনে রাখবেন?
তুষার ইমরান : এমন অনেকগুলো ম্যাচ আছে। টার্নিং পয়েন্ট বলতে, প্রথম বিভাগ লিগের খেলা তখন শেষ। প্রিমিয়ার লিগে যাওয়ার জন্য তখন আমার দুটি সুযোগ ছিল। প্রথম বিভাগ লিগে খেললাম ধানমণ্ডি ক্লাবের হয়ে। পরে একই ক্লাব প্রিমিয়ার জন্য দলে রাখলো। স্যারের একটা বিশ্বাস ছিল, প্রিমিয়ারে ভালো করব দল। প্রথমে ৫-৬টা ম্যাচ খারাপ হয়েছিল। দল সাফল্য পাচ্ছিল না। পরবর্তীতে শেষের দিকে টানা ৬টা ম্যাচ আমরা জিতে যাই, সুপার লিগে উঠে দল। যখন দল খারাপ করছিল স্যার আমাকে সুযোগ দিয়েছিল। সেই সময় মোহামেডানের বিপক্ষে ১৩২ রানের একটা ইনিংস খেলি। সেটিই মনে হয়, আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। পরে জাতীয় দলে সুযোগ পাই। প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কিছু করতে পারিনি। সেই ম্যাচে ৬ রান করি। পরবর্তীতে নিউজিল্যান্ডে চলে যাই। নিউজিল্যান্ড থেকে খেলে আসার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে আমি তিনটি ম্যাচেই ভালো খেলি। মনে রাখার মতো অনেক ইনিংসই আছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে জেতানোর পেছনে আমার অবদান ছিল।
এনটিভি অনলাইন : আপনার জার্সির নম্বর ‘৫৫’। এর পেছনে কোনো কারণ আছে?
তুষার ইমরান : না, এর পেছনে কোনো কারণ নেই। প্রথমে আমার জার্সির নম্বর ছিল ‘১৪’। পরে বিশ্বকাপে যাওয়ার সময় সবাই আমাকে বলল, চাইলে জার্সির নম্বর পরিবর্তন করতে পারো। তখন আমি ‘৫৫’ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।
এনটিভি অনলাইন : ব্যাটিং পার্টনারশিপে কার সঙ্গে বেশি উপভোগ করেছেন?
তুষার ইমরান : জাতীয় দলে আসলে সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারিনি। কিন্তু যে দলের বিপক্ষেই খেলেছি, যাঁদের সঙ্গে খেলেছি, বড় পার্টনারশিপ না হলেও সবার সঙ্গেই কম-বেশি খেলা হয়েছে। তবে কার সঙ্গে বেশি উপভোগ করেছি, তা সেভাবে মনে নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে হয়তো বড় ইনিংস আছে কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তেমন বড় ইনিংস নেই। সবার সঙ্গেই তখন ছোট-বড় জুটি হয়েছে।
এনটিভি অনলাইন : প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১২ হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়ার জন্য খুব বেশি রানের দরকার ছিল না। আরেকটা সিজনে খেললে হয়তো হয়ে যেতো। সেক্ষেত্রে হঠাৎ আপনার অবসর নেওয়ার কারণ কী?
তুষার ইমরান : অবসর নেওয়ার আগে গত মৌসুমেই আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, এটাই আমার শেষ মৌসুম। গত মৌসুমে দুটি ম্যাচ খেলেছিলাম। একটিতে ১১৪ ও আরেকটিতে ৯৯ রান করি। দুই ম্যাচ খেলার পর করোনার কারণে আর খেলা হয়নি। পরে বলে দিয়েছিলাম, এই বছরই শেষ। যে কয়েকটা ম্যাচ আছে, আশা করেছিলাম সেগুলো খেললেই ১২ হাজার রান পূর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। আমি যত দিন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছি, প্রতি বছরই রান করেছি। বিশেষ করে ২০১০ ও ২০১১ সালের পর থেকে অনেক রান করেছি। কিন্তু এই বছরটা আর ভালো করতে পারলাম না। আর ১২ হাজার রানও করা হয়নি। এছাড়া তখন ইনজুরিতেও পড়লাম। চিন্তা করলাম, ১২ হাজার রান আমার দরকার নেই। কেউ যেন বলতে না পারে, রান করেনি তাই খেলার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি ভাবলাম, অবসর নিয়ে একটা নতুন ক্রিকেটারকে সুযোগ করে দেই। এ কারণেই অবসর নেওয়া।
এনটিভি অনলাইন : ক্রিকেটের ২২ গজের বাইরে জীবন কীভাবে কাটাবেন বলে ভেবেছেন?
তুষার ইমরান : গত এক বছর ধরে কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। করোনাকালে শেখ জামাল ক্রিকেট একাডেমি থেকে অফার পাই। চেষ্টা করব, একজন কোচ হতে। খেলোয়াড় হিসেবে তো ক্রিকেটকে উপভোগ করলাম। এখন কোচ হিসেবে উপভোগ করতে চাই। আপাতত এর বাহিরে আর কোনো কিছু করার পরিকল্পনা নেই। এখানেই মনোযোগ দিচ্ছি।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশের বর্তমান ক্রিকেট দল নিয়ে আপনার মতামত কেমন?
তুষার ইমরান : আমাদের সময়ে টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে যে পরিকল্পনা করেছিলাম সেটা আসলে বিফলে গিয়েছে। টেস্ট ক্রিকেট এতটা সহজ নয়। টেস্ট ক্রিকেট খেলতে হলে মানসিক দৃঢ়তার প্রয়োজন। আমার কাছে মনে হয়, টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করলে অনায়াসে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও ভালো করা যাবে। বর্তমানে ওয়ানডে ক্রিকেট ভালো খেলছে, কারণ কিছু সিনিয়র ক্রিকেটার অনেক দিন ধরে ভালো সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। তাদের কারণেই ওয়ানডতে সাফল্য আসছে। এদের অনেকেই টেস্ট খেলে না বলেই সাফল্য কম। ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিবেশ, উইকেট পরিবর্তন করা হলে আমার মনে হয় দল ভালো করতে পারে। সব ঠিক থাকলে ৫-১০ বছর পরে দেশ থেকে ভালো ক্রিকেটার বের হতে পারে। তা না হলে খুবই কঠিন হয়ে যাবে। ২০১০ সালের পর থেকে ওয়ানডেতে ভালো খেলে আসছি আমরা। একটা সময় আসবে যখন সিনিয়র ক্রিকেটাররা চলে যাবে, তখন জুনিয়র ক্রিকেটারদের দায়িত্ব নিতে হবে। তখন তারা কীভাবে দায়িত্ব নিবে, সেটা তাদের ব্যাপার। আর ক্রিকেট বোর্ডেরও তো একটা দায়িত্ব আছে। তারাও চেষ্টা করতেছে ক্রিকেটার তৈরি করতে। হয়তো দু-এক বছর একটু কঠিন হবে। কিন্তু এর পর থেকে হয়তো ওয়ানডেতে আমরা আরও ভালো খেলতে পারব।
এনটিভি অনলাইন : বর্তমান বাংলাদেশ টেস্ট দল নিয়ে আপনি কতোটা আশাবাদী?
তুষার ইমরান : স্পিন উইকেটে হোম এডভান্টেজের বাহিরে যখন আমরা ট্যুরে যাই, তখন বেশি ভালো খেলতে পারি না। আসলে এখন আশা করাটা কঠিন। কদিন আগে কয়েকটা সিরিজ খারাপ খেললাম। টেস্ট ক্রিকেট খেলতে হলে কাঠামতে পরিবর্তন আনতে হবে। অনেকে বলছে, টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ২০ বছর হয়ে গেছে, কিন্তু সে অনুয়ায়ী উন্নতি হয়নি। আসলে টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করতে হলে আরও ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে। তা না হলে দুই-একটা ম্যাচ ভালো খেলে বাকিগুলো খারাপ করবে দল। পরিকল্পনা অনুযায়ী না এগুতে পারলে একটু কঠিন হবে। টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতে হলে আরও সময় দেওয়া লাগবে।
ওয়ানডে ফরম্যাটে যে দল আছে সেটা বিশ্বের যেকোনো দলকে হারনোর যোগ্যতা রাখে। তবে তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ যদি সরে যায় তাহলে কঠিন হবে। কারণ ওদের জায়গায় এখনো কোনো খেলোয়াড় তৈরি হয়নি। খেলে ফেলেছে অনেক ম্যাচ, কিন্তু সেভাবে ভালো পারফর্মার নাই। কেউ হয়তো একটা ম্যাচ ভালো করছে, আর দশটা ম্যাচে কোনো সাফল্য নেই। তবে তামিম, সাকিবরা ধারাবাহিক ভাবে ম্যাচ জেতাতে না পারলেও তারা তাদের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু এই জিনিসটা নতুন জেনারেশনের ক্রিকেটারদের মধ্যে নেই। অবশ্য সময় দিতে হবে নতুনদেরও।
এনটিভি অনলাইন: সুযোগ পেলে বিসিবির সঙ্গে কাজ করতে চান কি না?
তুষার ইমরান : অবশ্যই। যেহেতু কোচিং নিয়ে কাজ করছি। ব্যাটিং কোচ হিসেবে যদি ভালো কোনো অফার পাই তাহলে কাজ করব।
এনটিভি অনলাইন : ইনজুরি আপনার ক্যারিয়ারে কতাটা প্রভাব ফেলেছে?
তুষার ইমরান : খারাপ খেলে বাদ পড়েছি অনেকবার। ফিরেও এসেছি। পরবর্তীতে দুবার ইনজুরির পর ২০০৭ সাল থেকে আর কাম ব্যাক করতে পারিনি। তখন হয়তো আমার জায়গায় কেউ চলে এসেছে। ফিরে আসার সুযোগও পেয়েছি। তবে আমি নিজের সঙ্গে লড়াই করেছি। ভেবেছি, আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলব। কিন্তু ইনজুরির কারণে দুই বছর আমার কোনো খেলাই হয়নি। সুস্থ হয়ে ফিরতে প্রায় তিন বছর লেগে গিয়ে ছিল। সেখানে আক্ষেপ তো কিছু ছিলই। তবে দশ বছর পর ২০১৭-২০১৮ সালে ফিরে আসার সুযোগটা আর হয়ে ওঠেনি। তারা সেই সুযোগ আর আমাকে দেয়নি। টেস্ট ক্রিকেটে আরেকটা সুযোগ দিলে হয়তো কাজে লাগাতে পারতাম।
আমার কাছে মনে হয়, আমি ১৯-২০ বছর বয়সে যে টেস্ট ক্রিকেট খেলে ফেলি। তখন আমার এভারেজ ততোটা ভালো ছিলো না। ২০-২৫ বছর বয়সের দিকে হয়তো ইনজুরি ও খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়তাম। তারপরও আমাকে একটা সুযোগ দিতে হতো। এভারেজটা ১০ নিচে চলে আসছিল তখন। হয়তো এ কারণেই আমি আর সুযোগটা পাইনি। কিন্তু তারা আমাকে একটা সুযোগ দিলেই পারত। পারফর্ম করার পরেও যেহেতু সুযোগটা দেয়নি, সেই দোষটা তাদের ঘাড়ে না দিয়ে নিজেকেই দোষ দিচ্ছি। হয়তো এভারেজ আরেকটু ভালো হলে হয়তো দ্বিতীয়বার সুযোগ পেতাম।
এনটিভি অনলাইন : তরুণ প্রজন্মদের উদ্দেশ্য কী বলবেন?
তুষার ইমরান : এখন অনলাইনে সব জায়গার ক্রিকেটকেই ফলো করা যায়। আমাদের সময়ে সেটা পারতাম না। এখন যে হারে ক্রিকেটার তৈরি হচ্ছে, আমাদের সময়ে এত ক্রিকেট একাডেমি, কোচিং স্টাফ ছিল না। ঘরের পাশে দেখা যাচ্ছে, কেউ কিছু না পারলেও ক্রিকেটের জন্য ক্রিকেট কোচসহ সবকিছুই আছে। যদি তারা মন দিয়ে খেলতে পারে তাহলে হয়তো বড়সড় ক্রিকেটার হতে পারবে। আগে আমাদের বাবা-মায়েরা ক্রিকেট খেলায় এত উদ্বুদ্ধ করত না। এখন তো তারা নিজেরাই ছেলেমেয়েদের ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করায়। এখন সুযোগও অনেক। আমরা আকরাম ভাই, নান্নু ভাইদের দেখে শিখছি। এখন কেউ যদি চায় যে বড় মাপের খেলোয়াড় হবে, তাহলে সাকিব, মুশফিক ও তামিমদের ফলো করতে পারে। মুশফিক কীভাবে তার ক্যারিয়ার তৈরি করেছেন, সেগুলো যদি কেউ ফলো করে তাহলে অনেক ক্রিকেটারই দেশকে ভালো সার্ভিস দিতে পারবে।
এনটিভি অনলাইন: বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের উদ্দেশ্য আপনার কিছু বলার আছে?
তুষার ইমরান : দর্শকরা এখন খেলা বোঝেন। তাদেরকে টিম নির্বাচন করতে বলা হলে তারা আগে থেকেই ১৫ জনের স্কোয়াডও দিয়ে দেয়। আর কী কারণে জয়-পরাজয় হচ্ছে, তারা কিন্তু একদম বলে দিতে পারবে। এটা সব সময়ই থাকবে। এভাবে যদি দর্শকরা সাপোর্ট দিয়ে থাকে তাহলে হয়তো ভালো কিছু করা সম্ভব। তবে দর্শকদের নেতিবাচক মন্তব্য আমাদের ক্রিকেটের ওপর কিছুটা প্রভাব ফেলে। আমরা গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সেটা ভালোভাবে লক্ষ্য করেছি। খেলোয়াড়দের মধ্যে অনেকে ফেসবুক ব্যবহার করে। তারা এ ধরণের নেতিবাচক মন্তব্যের চাপ নিতে পারে না। তবে বলাটা যত সহজ, করে দেখানো বেশ কঠিন।