গ্রুপ ‘এ’ চ্যাম্পিয়ন নেদারল্যান্ডস, রানার্সআপ সেনেগাল
অবশেষে দ্বিতীয় পর্বে খেলছে সেনেগাল। এই সুযোগের জন্য দলকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ২০ বছর। কাতার বিশ্বকাপে ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ হয়েছে সেনেগাল এবং চ্যাম্পিয়ন নেদারল্যান্ডস। আগামী ৩ ও ৪ ডিসেম্বর এই দুদল মুখোমুখি হবে ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ দলের।
মঙ্গলবার রাত ৯টায় ইকুয়েডর-সেনেগাল ম্যাচে ১-২ গোলের জয় পেয়েছে সেনেগাল। একই সময়ে কাতার-নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার ম্যাচটিতে ২-০ গোলে জয় পেয়েছে নেদারল্যান্ডস। তাতে অপরাজিত থেকে গ্রুপ পর্ব পার করল দলটি। প্রথম ম্যাচে তাঁরা সেনেগালকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে ১-১ গোলে হয়েছিল ড্র। শেষ ম্যাচে স্বাগতিক কাতারকে ২-০ গোলে হারাল ভার্জিল ফন ডাইকের দল।
এদিকে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হার দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও কাতারকে ১-৩ গোলে হারিয়ে জয়ে ফেরে সেনেগাল। শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরকে ১-২ গোলে হারিয়ে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করেছে ইসমাইলা, ইদ্রিসা, কালিদোওরা।
ইকুয়েডরকে বিদায় করে পরের পর্বে সেনেগাল:
অর্জন এসেছে সেনেগালের। তবে সেটি সাদিও মানের অনুপস্থিতিতেই। দলের সঙ্গে নেই সাদিও। তবুও বাকিরা মিলে সাদিওর কষ্টকে বৃথা যেতে দিলেন না। বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়া সেনেগাল এবার পৌঁছে গেল দ্বিতীয় পর্বে। ইকুয়েডরকে ১-২ গোলে বিদায় করে বিশ্বকাপ যাত্রা অব্যাহত রাখল সেনেগাল।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টায় কাতারের খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ইকুয়েডরের মুখোমুখি হয়েছিল সেনেগাল। জয় না পেলে সেনেগালের দ্বিতীয় পর্বে ওঠা হবে না। তাই এবারের আসরের প্রথম জয়ী দল ইকুয়েডরকে হারিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের টিকিয়ে রাখল তারা। প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল সেনেগাল। তাই দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই সমতায় ফেরার তাড়া অনুভব করেছে ইকুয়েডর। চালিয়েছে সেনেগাল শিবিরে তাণ্ডব। ঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতেও পেরেছিল ইনার ভ্যালেন্সিয়ার দল। ৬৭ মিনিটে কর্নার কিক নেওয়া বলটি দখলে নেন ফেলিক্স তরেস। তিনি হেড দিয়ে বলটি কিছুটা সামনে দেন। সেখান থেকে পায়ের ছোঁয়ায় গোল করেন মইসেস ক্যাইসেডো। ইকুয়েডর সমতায় ফেরে ১-১ গোলে।
কিন্তু হাল ছেড়ে দিতে রাজি নয় সেনেগাল। কারণ আজ ড্র করা চলবে না। স্রেফ জয় চাই। দুই মিনিট আগে ইকুয়েডরের হয়ে তরেস-ক্যাইসেডো যেভাবে গোল করেছেন, সেটি রপ্ত করেন কালিদোও-ইদ্রিসা। দুজনে মিলে একই কায়দায় করেন দলের দ্বিতীয় গোলটি। ১-২ গোলে লিড পায় সেনেগাল। এরপরে ম্যাচে আর ফিরতে পারেনি ইকুয়েডর। ফলে হারের সঙ্গে বিদায় নিতে হলো এবারের বিশ্বকাপ থেকে।
এদিন প্রথমার্ধের ৪১ মিনিটে এসে পেনাল্টির গোলে এগিয়ে যায় সেনেগাল। স্ট্রাইকার ইসমাইলা সর বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ইকুয়েডরের গোলের দিকে। সে সময়ে ডি-বক্সের মধ্যেই ফাউল করে বসেন পিয়েরো হিঙ্কাপিয়ে। দেওয়া হয় পেনাল্টি।
পেনাল্টির সুযোগ মিস করেননি স্বয়ং ইসমাইলা। গোলরক্ষক হার্নান গ্যালিন্দেজকে ফাঁকি দিয়ে বলা জড়ান জালে। এর আগে প্রথমার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণে নেমেছিল সেনেগাল। তবে ইকুয়েডরের ইনার ভ্যালেন্সিয়াও বসে থাকেননি। নষ্ট করেছেন বেশ কয়েকটি গোল করার সুযোগও।
অন্যদিকে বিশ্বকাপের আগেই চোটে ছিটকে গেছিলেন দলের মূল ভরসা সাদিও মানে। তাতে দলের দুর্বলতা নিয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হেরে যায় সেনেগাল। তবে কাতারের বিপক্ষে জয় পেয়ে দ্বিতীয় ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। এবার ইকুয়েডরকে হারিয়ে অর্জনকে সমৃদ্ধ করল সেনেগাল।
কাতারকে ডুবিয়ে নক আউট পর্বে নেদারল্যান্ডস:
টানা দুই হারে আগেই বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল স্বাগতিক কাতারের। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি ছিল স্রেফ নিয়ম রক্ষার। কিন্তু শেষটাও রাঙাতে পারল না আয়োজক দেশটি। উল্টো দাপট দেখিয়ে কাতারকে ডুবিয়ে বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে পা রাখল নেদারল্যান্ডস।
গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বকাপে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে স্বাগতিক কাতারকে ২-০ গোলে হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস। দলের জয়ের ম্যাচে গোল করেছেন কোডি গ্যাকপো ও ডি জং। ডাচদের প্রথম দুই ম্যাচেও গোল জালের দেখা পেয়েছিলেন কোডি। আজও প্রথম গোল আসে তাঁর পা থেকেই।
গ্রুপ পর্বে দুই জয় ও এক ড্রতে মোট ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে ডাচরা। দিনের অন্য ম্যাচে ইকুয়েডরকে হারিয়ে রানার্সআপ হয়ে পরের রাউন্ডের টিকেট পেয়েছে সেনেগাল। এই গ্রুপ থেকে বাদ পড়েছে কাতার ও ইকুয়েডর।
আল বাঈত স্টেডিয়ামে 'এ'- গ্রুপের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক কাতারের মুখোমুখি হয় নেদারল্যান্ডস। এদিন ম্যাচের শুরু থেকে আধিপত্য বিস্তার করে খেলে ডাচরা। কাতারের গোলমুখে ১৩টি শট নেয় তারা। যাতে অন টার্গেট শট ৪টি। ২৬তম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে কাতারের রক্ষণ ভেঙে গোল করেন গ্যাকপো। ৩৩ মিনিটে সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় কাতার।
৫-৩-২ ফর্মেশনে পুরোপুরি ডিফেন্সিভ দল সাজিয়েও গোল আটকাতে ব্যর্থ হয় কাতার। অপরদিকে ৩-৪-১-২ ফরম্যাটে মাঝমাঠের দখল নিয়ে এগিয়ে যাবার ছক কষে নেদারল্যান্ডস। ফলও পায় প্রথমার্ধজুড়ে আধিপত্য ধরে রেখে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আরেকটি সুযোগ পায় নেদারল্যান্ডস। তবে কাজে লাগাতে পারেনি।
বিরতির পর ফিরে অবশ্য লিড বাড়াতে দেরি করেনি কমলা সৈন্যরা। বিরতি থেকে ফিরেই স্কোরলাইন ২-০ করেন ডি জং। এই ব্যবধান ধরে রেখেই শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নেয় নেদারল্যান্ডস।
এদিন ম্যাচের ৬৩ শতাংশ বল পজিশন দখলে রেখে আক্রমণ সাজায় নেদারল্যান্ডস। তবে ম্যাচে ফাউলের ছড়াছড়ি দেখে আল বাঈতের দর্শকরা। নেদারল্যান্ডসের ১৯ ফাউলের বিপরীতে কাতার করে ৯টি ফাউল।