বাংলাদেশকে উড়িয়ে সিরিজ জিতল জিম্বাবুয়ে
বোলিংয়ের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। ইনিংসের শুরুতেই জিম্বাবুয়ের টপ অর্ডার নাড়িয়ে দেন বাংলাদেশের বোলাররা। কিন্তু সিকান্দার রাজা ও রেজিস চাকাভা মিলে পাল্টে দেন দৃশ্যপট। অধিনায়ককে সঙ্গে নিয়ে বিপদে পড়া জিম্বাবুয়ের ঢাল হয়ে দাঁড়ান সিকান্দার রাজা। দুজনেই তুলে নেন সেঞ্চুরি। চাকাভা-রাজার জোড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে সহজে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করেছে জিম্বাবুয়ে।
আজ রোববার তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। এই জয়ে তিন ম্যাচের এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ ব্যবধানে জিতে নিল জিম্বাবুয়ে। ২০১৩ সালের পর এই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জিতল স্বাগতিকরা।
হারারের স্পোর্টস ক্লাবে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ২৯০ রান তুলেছে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮০ রান করেছেন মাহমুদউল্লাহ। ৮৪ বলে তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল তিন বাউন্ডারি আর তিন ছক্কায়।
জবাব দিতে নেমে ১৫ বল হাতে রেখে জয় তুলে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। দলের পক্ষে জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন রাজা ও চাকাভা। ১০ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় ৭৫ বলে ১০২ রানের ইনিংস উপহার দেন চাকাভা। তাঁর সঙ্গে ১১৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস উপহার দেন সিকান্দার রাজা। ১২৭ বলে তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল ৮ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কায়।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয়ের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা করে বাংলাদেশ। শুরুর জুটিতে দুই ওপেনার বাংলাদেশকে উপহার দেন ৬৬ বলে ৭১ রানের জুটি।
ছুটতে থাকা এই জুটি অবশেষে ভাঙেন টানাকা চিভাঙ্গা। বিদায় করেন হাফসেঞ্চুরি করা তামিমকে। টানাকা চিভাঙ্গার বলে পুল করে ওড়ানোর চেষ্টায় ডিপ স্কয়ার লেগে টাকুডজোয়ানাশে কাইটানোর হাতে ক্যাচ দিয়ে দেন বাঁহাতি ওপেনার। ৪৫ বলে ১০ চার ও এক ছক্কায় ৫০ করে থামেন তামিম।
তামিম ফেরার পর রানআউটে কাটা পড়েন আরেক ওপেনার এনামুল হক বিজয়। ২৫ বলে তিন চারে ২০ রান করে ফেরেন তিনি। দলীয় ৭৭ রানে দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে সেই চাপ কাটানোর চেষ্টা করেন মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনে মিলে গড়েন ৫০ রানের জুটি। কিন্তু এই জুটি স্বস্তির চেয়ে দিয়েছে অস্বস্তি। কারণ দুজনেই করেন মন্থর ব্যাটিং। জুটির হাফসেঞ্চুরি করতে দুজন খরচ করেন ৬৪ বল।
মুশফিককে বিদায় করে শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভাঙেন মাধাভেরে। স্বাগতিক অফ স্পিনারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্লগ সুইপে ছক্কায় ওড়াতে চেয়েছিলেন মুশফিক। টাইমিং ঠিক রাখতে পারেননি। উল্টো ধরা পড়েন ডিপ মিডউইকেটে। ৩১ বলে এক চারে ২৫ রান করে থামেন মুশফিক।
মন্থর ব্যাটিং করা নাজমুল শান্তও এরপর বেশিক্ষণ স্থায়ী হলেন না। মাধাভেরে বলেই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ৩৮ রান করতে ৫৫ বল খেয়ে দলের বিপদ বাড়ান এই এই ব্যাটার।
দ্রুত উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেটে জুটি বাঁধেন মাহমদউল্লাহ ও আফিফ হোসেন। এই জুটিতে বাংলাদেশ পায় ৮১ রান। আফিফকে আউট করে জমে ওঠা এই জুটি ভাঙেন সিকান্দার রাজা। ৪১ বলে ৪১ করে বিদায় নেন আফিফ।
এরপর বাকিদের নিয়ে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে মোটামুটি লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ পর্যন্ত ৮৪ বলে ৮০ রান করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ করেন ১২ বলে ১৫ রান। তাসকিনের আহমেদের ব্যাট থেকে আসে ১ রান।
২৯১ রানের জবাব দিতে নেমে শুরুতেই অবশ্য ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে জিম্বাবুয়ের টপ অর্ডার নাড়িয়ে দেন হাসান মাহমুদ। এরপর আরো দুটি উইকেট তুলে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম।
কিন্তু ধাক্কা সামলে চমৎকার জুটি গড়ে তোলেন সিকান্দার রাজা ও রেজিস চাকাভা। এই জুটিতেই বাংলাদেশকে শাসন করে জিম্বাবুয়ে। শক্ত জুটিতে দুজন মিলে উপহার দেন ২০১ রান। এই জুটিতেই জয়ের পথ সহজ হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯০/৯ (তামিম ৫০, এনামুল ২০, শান্ত ৩৮, মুশফিক ২৫, মাহমুদউল্লাহ ৮০*, আফিফ ৪১, মিরাজ ১৫, তাসকিন ১, তাইজুল ৬, শরিফুল ১; ইভান্স ৭.৪-০-৬৪-০, নিয়াউচি ৮-০-৩৯-১, চিভাঙ্গা ৮.২-০-৪৯-১, রাজা ১০-০-৫৬-৩, মাধেভের ৯-০-৪০-২, জঙ্গুয়ে ৭-০-৪০-০)।
জিম্বাবুয়ে: ৪৭.৩ ওভারে ২৯১/৫ (মারুমানি ২৫, কাইটানো ০, কাইয়া ৭, মাধেভেরে ২, রাজা ১১৭*, চাকাভা ১০২, মুনিয়োঙ্গা ৩০*; মাহমুদ ০-০-০-০, মিরাজ ০-০-০-০, শরিফুল ০-০-০-০, তাসকিন ০-০-০-০, তাইজুল ১০-০-৪৮-১)।
ফল ৫ উইকেটে জয়ী জিম্বাবুয়ে।