মাহমুদউল্লাহ-তাসকিনের ব্যাটে বাংলাদেশের রানের পাহাড়
মাহমুদউল্লাহ যখন ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন, তখন চরম বিপর্যয়ে ছিল বাংলাদেশ। সেই অবস্থা থেকে দলকে টেনে তুললেন তিনি। আরও একবার দলের বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন তিনি। খেললেন টেস্টে ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়ালেন পেসার তাসকিন আহমেদও। তাই হারারেতে প্রথম ইনিংসে ৪৬৮ রানের বড় সংগ্রহ গড়েছে বাংলাদেশ।
আজ বৃহস্পতিবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪৬৮ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৫০ রান করেছেন ১৬ মাস পর টেস্টে ফেরা মাহমুদউল্লাহ। এটাই টেস্টে তাঁর ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ। এর আগের সর্বোচ্চ ছিল ১৪৬ রান।
লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহর লড়াইয়ে গতকাল বুধবার টেস্টের প্রথম দিন ভালো-মন্দে শেষ করে বাংলাদেশ। দিনের শেষ দিকে লিটন ফিরলেও তাসকিনকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে গেছেন মাহমুদউল্লাহ। আজ তাসকিনকে নিয়েই দলকে বড় ইনিংস গড়ে দিলেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার।
ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্ট খেলতে নেমে পঞ্চম সেঞ্চুরি করেছেন মাহমুদউল্লাহ। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সফরে শেষ নিজের ৪৯তম টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি।
হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আজ মাঠে নেমে দিনের ১৭ ও ইনিংসের ১০০তম ওভারে পরপর জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শতক করলেন তিনি। সেঞ্চুরি করতে মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন ১৯৫ বল। যেখানে ছিল ১১ চার ও একটি ছক্কার মার।
মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তাসকিন আহমেদও দারুণ খেলেছেন। যেখানে দলের নিয়মিত ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হয়েছেন। সেখানে এই পেসার যেন বনে গেছেন পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত করেছেন ৭৫ রান। তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল ১১ বাউন্ডারি দিয়ে। এর আগে ২০১৭ সালে ক্রাইস্টচার্চে করেছিলেন ৩৩ রান। সেটিই ছিল টেস্টে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর। আজ সেটিকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি।
এ ছাড়া তাসকিন-মাহমুদউল্লাহর জুটিতে রেকর্ড হয়েছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এর আগে নবম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি ছিল ৩৫ রানের। সেটি ছিল ২০০৫ সালে মাশরাফী ও তাপস বৈশ্যের। এবার সেই রেকর্ডও ছাপিয়ে গেলেন তাসকিন-মাহমুদউল্লাহ। দুজনে মিলে গড়েন ১৯১ রানের রেকর্ড জুটি।
গতকাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের প্রথম দিন আট উইকেটে স্কোরবোর্ডে ২৯৪ রান তোলে বাংলাদেশ।
প্রথম দিন ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর লিটন-মাহমুদউল্লাহ মিলে সপ্তম উইকেটে খেলেছেন ১৩৮ রানের ইনিংসে। তাতেই লড়াই জমিয়ে তোলে বাংলাদেশ।
দলের বিপর্যয়ে মাঠে নামা লিটন সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন। কিন্তু সেঞ্চুরির থেকে ঠিক ৫ রান দূরে থেকে আউট হলেন তিনি। ফেরার আগে ১৪৭ বলে ৯৫ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। এটাই তাঁর টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। আগে সেরা ছিল ৯৪ রানের। লিটনের পর উইকেটে এসে ফিরে যান মেহেদী হাসান মিরাজও। শেষ দিক তাসকিনকে নিয়ে দিন পার করেন মাহমুদউল্লাহ।
কাল টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। ৮ রান তুলতেই দুই উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে নামা সাদমান ইসলাম ও সাইফ হাসান দুজনেই ব্যর্থ হন। আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত।
তিন টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন মুমিনুল। কিন্তু ১১ রানের মাথায় ব্লেসিং মুজারাবানির করা ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি ছেড়ে দিয়ে এলবিডব্লিউ হন মুশফিকুর রহিম। অবশ্য টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল স্টাম্পের ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু বল না বুঝেই ছেড়ে দিলেন তিনি।
মুশফিককে হারানোর পরপরই আরেকটি ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। দলে ফেরা সাকিব এই ম্যাচেও দেখান ব্যর্থতা। ভিক্টর নিয়াউচির অনেক বাইরের বল মোকাবিলা করতে গিয়ে তিন রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
দ্বিতীয় সেশনে চা বিরতিতে যাওয়ার আগে সাজঘরে ফেরেন মুমিনুল। তখন বাংলাদেশের রান ছিল ১৩২। যার অর্ধেকই আসে মুমিনুলের ব্যাট থেকে। ৯২ বল মোকাবিলা করে ১৩ বাউন্ডারিতে ৭০ রান করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১২৬ ওভারে ৪৬৮/১০ ( সাইফ ০, সাদমান ২৩, নাজমুল ২, মুমিনুল হক ৭০, মুশফিক ১১, সাকিব ৩, মাহমুদউল্লাহ ১৫০*, লিটন দাস ৯৫, মিরাজ ০, তাসকিন ৭৫, এবাদত ০; মুজারাবানি ২৯-৪-৯৪-৪, রিচার্ড ২৩-৫-৮৩-১, তিরিপানো ২৩-৫-৫৮-২, ভিক্টর ১৭-১-৯২-২)।