মিরাজ-সাকিবের দিনে স্বস্তিতে বাংলাদেশ
দিনের শুরুটা হয়েছিল হতাশা দিয়ে। প্রথম সেশনে বাংলাদেশি বোলারদের পরীক্ষা নিয়েছেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু সময় গড়াতেই ম্যাচের রূপ বদলাতে থাকল। স্পিনে জাদু দেখাতে থাকলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান। দুজন মিলেই নিয়েছেন স্বাগতিকদের ৯ উইকেট। ফলে বেশি দূর যেতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। বিপরীতে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে একটি উইকেটও হারায়নি বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে হারারে টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে স্বস্তিতে মুমিনুল হকের দল।
আজ শুক্রবার টেস্টের তৃতীয় দিন প্রথম ইনিংসে ২৭৬ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। ১৯২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৪৫ রানে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দিন শেষে উইকেটে ছিলেন দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও সাইফ হাসান। এরই মধ্যে মোট ২৩৭ রানের লিড নিয়েছে বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের হয়ে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৮৭ রান করেছেন কাইতানো। কাল ওপেনিংয়ে নেমে আজ দ্বিতীয় সেশন পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়েছেন তিনি। আক্রমণাত্মক খেলেছেন ব্রেন্ডন টেইলরও। ওয়ানডাউনে নেমেই ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিংয়ে করেন ব্রেন্ডন টেইলর। মারকুটে ব্যাটিংয়ে আগাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। কিন্তু শতকের ঘরে পৌঁছানোর আগেই টেইলরের প্রতিরোধ ভাঙলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৯২ বলে ৮১ রানে ফিরলেন টেইলর। তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল ১২ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায়।
মিরাজের পর বাংলাদেশকে আজ দ্বিতীয় সাফল্য এনে দিয়েছেন সাকিব। চারে ব্যাট করতে নামা দিয়ন মায়ার্সকে ফিরিয়ে দিলেন তিনি। এরপর ফিরিয়ে দেন মারুমাকে। সাকিবের সঙ্গে স্পিনে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন মিরাজ। কাইতানো, ডোনাল্ড তিরিপানো, ব্রেন্ডন টেইলর, মুজারবানিকে ভিক্টরকে নিজের শিকার বানান মিরাজ।
৮২ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে মিরাজই হয়েছেন সেরা বোলার। সমান রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সেরা বোলার সাকিব। তাসকিন নিয়েছেন একটি উইকেট।
গতকাল বৃহস্পতিবার টেস্টের দ্বিতীয় দিন ভালো কেটেছে বাংলাদেশের। মাহমুদউল্লাহর দেড়শ রানের ইনিংস এবং তাসকিনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে লড়াই করার বড় পুঁজি পেয়েছে সফরকারীরা।
এরপর প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে লড়াইয়ের আভাস দেয় জিম্বাবুয়ে। কাল দ্বিতীয় দিনের শেষ দিকে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ের মাত্র একটি উইকেট ফেলতে পেরেছে বাংলাদেশ। আজ তৃতীয় দিন দ্রুত স্বাগতিকদের আউট করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে সফলতা আসে তৃতীয় সেশনে।
গতকাল বোলিং নিয়ে কিছুটা ভুগতে দেখা গেছে বাংলাদেশকে। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ের উইকেট পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৭.২ ওভার পর্যন্ত। এরপর স্বাগতিক ওপেনার মিল্টনকে এলভির ফাঁদে ফেলেন সাকিব। ৮৩ বলে ৪১ রান করে ফেরেন জিম্বাবুয়ের ওপেনার। এরপর আর একটি উইকেটও ফেলতে পারেননি বাংলাদেশি বোলাররা।
কাল শেষ সেশনে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে এক উইকেটে ১১৪ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে জিম্বাবুয়ে। এর আগে ব্যাট করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪৬৮ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৫০ রান করেছেন ১৬ মাস পর টেস্টে ফেরা মাহমুদউল্লাহ। এটাই টেস্টে তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বোচ্চ ছিল ১৪৬ রান।
ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্ট খেলতে নেমে পঞ্চম সেঞ্চুরি করেছেন মাহমুদউল্লাহ। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সফরে শেষ নিজের ৪৯তম টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি।
হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কাল মাঠে নেমে দিনের ১৭ ও ইনিংসের ১০০তম ওভারে পরপর জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শতক করলেন তিনি। সেঞ্চুরি করতে মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন ১৯৫ বল। যেখানে ছিল ১১ চার ও একটি ছক্কার মার।
মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তাসকিন আহমেদও দারুণ খেলেছেন। যেখানে দলের নিয়মিত ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হয়েছেন। সেখানে এই পেসার যেন বনে গেছেন পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত করেছেন ৭৫ রান। তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল ১১ বাউন্ডারি দিয়ে। এর আগে ২০১৭ সালে ক্রাইস্টচার্চে করেছিলেন ৩৩ রান। সেটিই ছিল টেস্টে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর। সেটিকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১২৬ ওভারে ৪৬৮/১০ ( সাইফ ০, সাদমান ২৩, নাজমুল ২, মুমিনুল হক ৭০, মুশফিক ১১, সাকিব ৩, মাহমুদউল্লাহ ১৫০*, লিটন দাস ৯৫, মিরাজ ০, তাসকিন ৭৫, এবাদত ০; মুজারাবানি ২৯-৪-৯৪-৪, রিচার্ড ২৩-৫-৮৩-১, তিরিপানো ২৩-৫-৫৮-২, ভিক্টর ১৭-১-৯২-২)।
জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস : ১১১.৫ ওভারে ২৭৬/১০ ( মিল্টন ৪৩, টাকুদজয়নাশে ৮৭, টেইলর ৮১, মায়ার্স ২৭, মারুমা ০, রয় ০, তিরিপানো ২, ভিক্টর ০, মুজারবানি ২, চাকাভা ৩১ ও রিচার্ড ০ ; তাসকিন ২৪-১০-৪৬-১, সাকিব ৩৪/৫-১০-৮২-৪, এবাদত ২১-১-৫৮-০, মিরাজ ৩১-৫-৮২-৫ )।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ১৭ ওভারে ৪৫/০(সাদমান ২২, সাইফ ২০; মুজারাবানি ৫-৩-৬-০, রিচার্ড ১-০-৭-০, তিরিপানো ৪-০-১২-০, ভিক্টর ৩-১-১০-০)।