শেষটা রাঙাতে পারল না বাংলাদেশ
ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। গুটিয়ে গেছে মাত্র ১১৫ রানে। ব্যাটিংয়ের হতাশা ধরা দিল বোলিংয়েও। প্রথম ওভার থেকে শুরু করে পুরো ম্যাচেই ক্যাচ মিসের চিত্র দেখালেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। যার খেসারত দিতে হলো পুরো দলকে। ক্যাচ মিসের মহড়ায় ফল আর নিজেদের পক্ষে আনতে পারল না লাল-সবুজের দল। দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৮ উইকেটে হেরে গেল বাংলাদেশ।
সিরিজের শুরুটা স্বপ্নের মতো করেছিল। ব্যাটে-বলের দাপটে আফগানিস্তানকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে হেরে শেষটা রাঙাতে পারল না মাহমুদউল্লাহর দল। ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতলেও টি-টোয়েন্টিতে ১-১ ব্যবধানের ড্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হলো।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১১৫ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩০ রান করেন শততম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা মুশফিকুর রহিম।
বাংলাদেশের দেওয়া ১১৬ রান তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারেই জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান। যদিও শুরুর মোমেন্টাম ছিল বাংলাদেশেরই। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সুযোগ তৈরি করেছিলেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। তৃতীয় বলে বলেই হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের ব্যাটের কানায় লেগে বল উপরে উঠে যায়। উইকেট থাকা নাসুম দাঁড়িয়ে থেকে সহজ ক্যাচ পেয়েও নিতে পারেননি।
জীবন পেয়ে জাজাই খেলেন ৫৯ রানের ইনিংস। তাঁর সঙ্গে থাকা উসমান গনিকেও দুবার জীবন দেয় বাংলাদেশ। সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করে তাঁকে জীবন দেন আফিফ হোসেন। এরপর দ্বিতীয়বার জীবন দেন নাঈম শেখ। দুবার জীবন পাওয়া উসমান খেলেন ৪৭ রানের ইনিংস। আর ক্যাচ মিসের মহড়ার ম্যাচে বাংলাদেশকে মাঠ ছাড়তে হয় চরম হতাশা নিয়ে।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই জোড়া ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচের মতো এদিনও ওপেন করেছেন দুই তরুণ মুনিম শাহরিয়ার ও মোহাম্মদ নাঈম। কিন্তু জুটি বড় হয়নি। একবাউন্ডারি মেরে শুরু করার পর দ্বিতীয় ওভারেই ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেছেন মুনিম। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা মুনিম ১০ বলে করেছেন ৪ রান।
আগের ম্যাচে বাংলাদেশের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন লিটন দাস। এবার আর পারলেন না। পঞ্চম ওভারেই বিদায় নিয়েছেন ওয়ানডাউনে নামা লিটন। এক ছক্কায় ১০ বলে ১৩ করে ফেরেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
টানা ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকা নাঈম এই ম্যাচেও ছিলেন নড়বড়ে। ব্যাটিং নেমেই এলবির ফাঁদে পড়েছিলেন। প্রথম যাত্রায় রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। কিন্তু জীবন পাওয়ার পরও নিজের ইনিংস লম্বা করতে পারেননি তিনি। নবম ওভারেই কাটা পড়েন রানআউটে। ১৯ বলে ১৩ রান করে সাজঘরের পথে হাঁটেন এই তরুণ ব্যাটার।
উইকেট হারানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের রানের চাকাও ছিল মন্থর। ৩৮ রানে তিন উইকেট হারানো বাংলাদেশ পাওয়ার প্লেতে তোলে মাত্র ৩৩ রান। এই চাপের মধ্যেই দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হন সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে রানের খরায় থাকা সাকিব ফেরেন মাত্র ৯ রানে। আজমতউল্লাহ ওমরজাইর বল উড়িয়ে মারার চেষ্টায় কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন সাকিব।
সাকিবের বিদায়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। দুজনে মিলে গড়েন ৩১ বলে ৪৩ রানের জুটি। তবে এই জুটি জমে ওঠার আগেই ভেঙে দেন রশিদ খান। মেরে খেলা মাহমুদউল্লাহকে এলবির ফাঁদে ফেলেন আফগান স্পিনার। রশিদের শিকার হয়ে ১৪ বলে ২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
মাহমুদউল্লাহ ফেরার ধাক্কা না কাটাতেই ১৬তম ওভারে জোড়া ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। এক ওভারেই মুশফিক-মেহেদীর উইকেট তুলে নেন ফারুকি। প্রথমে বিদায় করেন থিতু হয়ে যাওয়া মুশফিককে। এরপর আউট করেন ক্রিজে নতুন আসা মেহেদীকে। শততম টি-টোয়েন্টিতে ২৫ বলে ৩০ রান করে আউট হন মুশফিক। দ্রুত উইকেট হারানোর দ্ধাক্কা সামলে বেশিদূর যেতে পারল না বাংলাদেশ। আফগানদের দাপুটে বোলিংয়ে আটকে গেল মাত্র ১১৫ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১১৫/৯ (মুনিম ৪, লিটন ১৩, নাঈম ১৩, সাকিব ৯, মুশফিক ৩০, মাহমুদউল্লাহ ২১, আফিফ ৭, মেহেদী ০, নাসুম ৫, শরিফুল ০, মুস্তাফিজ ৬; রশিদ ৪-০-৩০-১, ফারুকি ৪-০-১৮-৩, নবী ৪-০-১৪-১, আজমতউল্লাহ ৪-০-২২-৩, জান্নাত ২-০-১৭-০, আশরাফ ২-০-১০-০)।
আফগানিস্তান : ১৭.৪ ওভারে ১২১/২ (গুরবাজ ৩, জাজাই ৫৯, উসমান ৪৭, রাসোলি ৯ ; সাকিব ৩-০-৩২-০, নাসুম ৩.৩-০-২৯-০, মুস্তাফিজ ৩-০-১৩-০, শরিফুল ৩-০-২৫-০, মেহেদী ৪-০-১৯-১, মাহমুদউল্লাহ ১-০-২-১)।
ফল : ৮ উইকেটে জয়ী আফগানিস্তান।
সিরিজ : ১-১ ব্যবধানে ড্র।