ইউরোপ-শ্রেষ্ঠ বার্সেলোনার ‘ইতিহাস’
এফসি বার্সেলোনা আজ ইতিহাসের অংশ। ট্রেবল, অর্থাৎ এক মৌসুমে তিনটি ট্রফি জয়ের কৃতিত্ব একাধিক দলের আছে। কিন্তু দুবার এই কীর্তি আর কারো নেই। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে জুভেন্টাসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে বার্সা এখন সেই কীর্তিধন্য। স্প্যানিশ লা লিগা, কোপা দেল রে’র পর ইউরোপের সেরা ক্লাব টুর্নামেন্টেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে কাতালানরা পেছনে ফেলে দিল সবাইকে। সে সঙ্গে জাভি হার্নান্দেজকেও দিল অসাধারণ বিদায়ী উপহার। বার্সার জার্সি গায়ে এটাই ছিল জাভির শেষ ম্যাচ। বার্সার বহু সাফল্যের রূপকার, ক্লাবের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা এই মিডফিল্ডারের শেষটা নিশ্চয়ই এর চেয়ে ভালো হতে পারত না।
urgentPhoto
বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে ছিল বার্সেলোনার প্রাধান্য। গোলের জন্যও বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। চতুর্থ মিনিটেই লিওনেল মেসি আর আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার মধ্যে গড়ে ওঠা একটি চমৎকার আক্রমণকে পূর্ণতা দিয়ে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের এগিয়ে দেন ইভান রাকিতিচ। এগিয়ে যাওয়ার পরও বার্সার আক্রমণের ধার কমেনি, বরং বেড়েছে। কিন্তু কখনো নেইমার আর কখনো লুইস সুয়ারেজের ব্যর্থতায় কিছুতেই ব্যবধান বাড়াতে পারছিল না কাতালানরা।
জুভেন্টাস অধিনায়ক জানলুইজি বুফনও সে জন্য দায়ী। বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক একেবারে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বার্সার সামনে। সুয়ারেজের অন্তত দুটো জোরালো শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন বুফন। প্রথমার্ধে জুভেন্টাসের বলার মতো সুযোগ একটাই। অষ্টম মিনিটে আর্তুরো ভিদালের শট ক্রসবার উঁচিয়ে চলে গিয়ে হতাশ করে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেও আক্রমণাত্মক ছিল বার্সা। ৪৮ মিনিটে সুয়ারেজের পোস্টের বাঁ দিক থেকে নেওয়া শট ঠেকিয়ে আবারো জুভেন্টাসের রক্ষাকর্তা বুফন। এরপরই আস্তে আস্তে নিজেদের গুছিয়ে আক্রমণে উঠতে শুরু করে ইতালিয়ান সেরি আর সফলতম দলটি। তার সুফলও পেয়ে যায় ৫৫ মিনিটে। বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া কার্লোস তেভেজের শট বার্সার জার্মান গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেজেন ঠেকিয়ে দিলেও আলভারো মোরাতার ফিরতি শট সমতা নিয়ে আসে খেলায়।
গোল খেয়েই যেন জেগে ওঠে বার্সেলোনা। তাদের একের পর এক আক্রমণের তোড়ে ভেঙে পড়ে জুভেন্টাসের রক্ষণদুর্গ। কয়েকবার হতাশ হওয়ার পর ৬৮ মিনিটে আবার এগিয়ে যায় লুইস এনরিকের শিষ্যরা। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া মেসির জোরালো শট বুফন ঠেকিয়ে দিলেও সুযোগসন্ধানী সুয়ারেজকে কেউ বিমুখ করতে পারেনি (২-১)।
দুই মিনিট পর ব্যবধান ৩-১ হতে পারত; কিন্তু নেইমারের হেড জালে যাওয়ার আগে বল তাঁর হাত স্পর্শ করায় গোলটা বাতিল হয়ে যায়। ৭৭ মিনিটে এক আবেগঘন দৃশ্যের জন্ম। বদলি হিসেবে মাঠে নামেন জাভি। বার্সা-কিংবদন্তিকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যান ইনিয়েস্তা। যাওয়ার আগে অবশ্য জাভিকে অধিনায়কের বাহুবন্ধনী পরিয়ে দিতে ভোলেননি।
বার্সার তৃতীয় গোলটা একেবারে খেলার শেষ মুহূর্তে। পাল্টা আক্রমণ থেকে নেইমারের বাঁ পায়ের মাটি-কামড়ানো শট জুভেন্টাসের জালে জড়িয়ে উল্লাসে ভাসিয়ে দেয় বার্সা-ভক্তদের।