লড়াই করেই হারল বাংলাদেশ
ড্রয়ের প্রত্যাশা ছিল তবে ভারতীয় বোলারদের দাপটে শেষ পর্যন্ত হেরেই গেল বাংলাদেশ। ৫৫৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পঞ্চম দিন খেলার শেষ হবার ঘন্টা দুয়েক আগে ২৫০ রানে অলআউট হয় মুশফিকের দল। ১৬ বছর পর ভারতে খেলতে এসে বাংলাদেশের হারটা ২০৮ রানের।
সাকিব-মাহমুদউল্লাহর কাছে অবিশ্বাস্য কিছু আশা করছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা। তবে ক্রিকেটে রোজ রোজ মিরাকল ঘটে না কথাটাকে প্রমাণ করতেই কিনা দিনের তৃতীয় ওভারেই ফিরে গেলেন সাকিব আল হাসান। রবীন্দ্র জাদেজার বলে পূজারার তালুবন্দি হন সাকিব। উইকেট পাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য উইকেটকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন জাদেজা। পঞ্চম দিনের দুর্বল উইকেটের ভাঙা অংশে বল লেগে বিশাল টার্ন পেয়েছিলেন জাদেজা। বলটাকে খেলতে গিয়ে মাটিতে পড়তে পারেননি সাকিব।
বাংলাদেশের রান তখন ১০৬। এরপর ৫৬ রানের জুটি বেঁধে বাংলাদেশের ইনিংসটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। তবে অশ্বিনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন মুশফিক। ৪৪ বলে ২৩ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
অধিনায়ক বিদায়ের পর দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নেন মাহমুদুউল্লাহ রিয়াদ। সাব্বির রহমানকে নিয়ে দারুণ ব্যাটিং করে চলেন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মূল স্তম্ভখ্যাত এই ব্যাটসম্যান। আস্থার পরিচয় দিচ্ছিলেন সাব্বির রহমানও। ১৮ ওভার খেলে ভারতীয় বোলারদের হতাশ করে চলেন তাঁরা। অর্ধশত রানের এই জুটিতেই টিতে ছিল বাংলাদেশের ড্রয়ের স্বপ্নটা। তবে ইশান্ত শর্মার কাছে হার মানতে হয় সাব্বিরকে। দারুণ এই ইন সুইংয়ে সাব্বিরকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন দীর্ঘদেহী এই পেসার।
আগের ওভারেই অবশ্য ফিরতে পারতেন সাব্বির। জাদেজার বলে লেগ বিফোরের আবেদন করেন ভারতীয় ফিল্ডাররা। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেন বিরাট কোহলি। তবে এই যাত্রায় বেঁচে যান সাব্বির। তবে পরের ওভারে ইশান্ত শর্মার বলে আর নিজেকে বাঁচাতে পারেননি এই ব্যাটসম্যান।
সাব্বিরের পর বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখানো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ফিরিয়ে দেন ইশান্ত শর্মা। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও প্রতিরোধ গড়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তবে শেষ রক্ষাটা করতে পারেননি। জাদেজার বলে উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহাকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন মিরাজ। শেষের দিক অসম এক লড়াইয়ে নেমেছিলেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। ৭০ বলে মাত্র ৩ রান করেন এই পেসার। তবে অপরপ্রান্তে তাসকিনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশের ইনিংসটাকে গুটিয়ে দেন অশ্বিন। জাদেজা ও অশ্বিন নেন চারটি করে উইকেট।
গতকাল রোববার ম্যাচের চতুর্থ দিন ৪৫৯ রানের জবাবে শুরুতেই তামিম ইকবালের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অশ্বিনের বলে কোহলিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান টাইগার দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানটি। আম্পায়ার অবশ্য প্রথমে আউট দেননি, কোহলি রিভিউ চাইলে আর রক্ষা পাননি তামিম।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সৌম্য সরকার ও মমিনুল হক ৬০ রানের জুটি বেঁধে পরিস্থিতি ভালোভাবেই সামলেছিলেন। তবে অশ্বিনকে ঠেকাতে পারেননি সৌম্য। স্লিপে অজিঙ্কা রাহানের দারুণ ক্যাচে আউট হওয়ার আগে ৪২ রান করেন সৌম্য।
অশ্বিনের আরেকটি ঘূর্ণিতে ফিরে যান মমিনুল হক। আস্থার সঙ্গে খেলতে থাকা বাঁ-হাতি এই ব্যাটসম্যান ২৭ রান করেন।
জয়ের জন্য এখনো ৩৫১ রান করতে হবে বাংলাদেশ। বাকি সাত উইকেট হাতে নিয়ে এই ম্যাচ জেতার চিন্তা করাটা বোধ হয় একটু বাড়াবাড়িই হবে।
এর আগে বাংলাদেশকে ফলোঅনে না ফেলে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। সেখানে ইনিংসটা খুব বেশি দীর্ঘও করেনি স্বাগতিক দল। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২৯ ওভার ব্যাটিং করেই ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ফলে হায়দরাবাদ টেস্ট জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে দাঁড়িয়েছে ৪৫৯ রানের দুরূহ লক্ষ্য।