ওয়ানডে বলেই উজ্জীবিত বাংলাদেশ
বিশ্বকাপে দারুণ সাফল্য, পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের পর ভারতকেও ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে যেন হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছিল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দুটো টি-টোয়েন্টিতে হার মাশরাফির দলের জন্য তাই বড় ধাক্কা। তবে টি-টোয়েন্টির হতাশা ভুলে স্বাগতিকরা এখন তাকিয়ে ওয়ানডের দিকে। শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের আগে বাংলাদেশ উদ্দীপ্ত। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সাফল্যই তার কারণ। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স কখনোই ভালো নয়। গত এপ্রিলে পাকিস্তানকে হারালেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণটি বাংলাদেশের জন্য হতাশার প্রতিশব্দ। এ পর্যন্ত ৪৪টি টি-টোয়েন্টি খেলে ৩১টিতেই হার (জয় মাত্র ১২টি, অন্যটি পরিত্যক্ত) যেন সে সাক্ষ্যই দিচ্ছে। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের দারুণ সাফল্য। নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ-জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করেছে আগেই। এবার সে লজ্জায় ডুবিয়েছে পাকিস্তানকেও। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে বিতর্কিত হারের নির্মম প্রতিশোধও নিয়েছে বাংলাদেশ। এখন সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা। তিন ম্যাচের সিরিজের একটিতে জয় পেলেই ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের।
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স অবশ্য হতাশাজনক। আটটি টেস্ট ও চারটি টি-টোয়েন্টির সব কটিতে হার মানতে হয়েছে। এর আগে ১৪টি ওয়ানডে খেললেও জয় মাত্র একটিতে, ২০০৭ বিশ্বকাপে ৬৭ রানে। এবার কি প্রোটিয়া-বধের অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে?
টি-টোয়েন্টি সিরিজে পরাস্ত হলেও ওয়ানডেতে ভালো করার ব্যাপারে আশাবাদী তামিম ইকবাল, ‘কয়েক বছর ধরে আমাদের দলের খেলোয়াড়রা ওয়ানডে ক্রিকেট বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারছে। আর এ কারণে আমি নিশ্চিত, এই ফরম্যাটে আমরা আরো অনেক সাফল্য পাব।’ তিন ম্যাচের সিরিজ নিয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের এই ওপেনার, ‘দলগতভাবে আমরা অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী। একটি বা দুটি ম্যাচে হেরে যাওয়া মানেই আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরা নয়।
ওয়ানডে সামনে চলে এলে আমরা অনেক আত্মবিশ্বাসী দলে পরিণত হই। আর এ ক্ষেত্রে আমাদের আত্মবিশ্বাস দিন দিন বেড়েই চলেছে।’
ইদানীং বাংলাদেশের সাফল্যের অন্যতম রূপকার মুশফিকুর রহিম। বিশ্বকাপে ৭১, ৬০ ও ৮৯ রানের তিনটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন। ১০৬, ৬৫ ও ৪৯ রানে অপরাজিত থেকে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করতেও বড় অবদান রেখেছিলেন মুশফিক। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে একটি ক্যাচ ধরতে গিয়ে আঙুলে চোট পাওয়ার পর থেকে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’-এর ব্যাটে রান-খরা।
টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলে সর্বশেষ আট ইনিংসে মাত্র ১৫১ রানে মুশফিকের সেই আস্থাপূর্ণ ব্যাটিং যেন খুঁজে পাওয়াই ভার। কিপিংয়েও প্রায়ই ক্যাচ ছেড়ে মাশরাফির দলকে ভোগাচ্ছেন তিনি। এই সিরিজে তাই কঠিন পরীক্ষার সামনে মুশফিক।
তবে বাংলাদেশের জন্য সুখবর, মাহমুদউল্লাহর প্রত্যাবর্তন। ভারত সিরিজ শুরু হওয়ার ঠিক আগে প্র্যাকটিসে ক্যাচ ধরতে গিয়ে আঙুলে চোট পাওয়ায় একটি ম্যাচও খেলতে পারেননি। বিশ্বকাপে দুটো শতক করা এই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানকে ফিরে পাওয়া স্বাগতিকদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক তথ্য।
মাশরাফির দলকে আরেকটি তথ্যও অনুপ্রাণিত করবে। সন্তান জন্মের সময় স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য টেস্ট দলে এবি ভিলিয়ার্সকে রাখা হয়নি। তবে ওয়ানডে সিরিজেও খেলছেন না বিশ্বের অন্যতম বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ধীরগতির ওভার রেটের জন্য এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে এমনিতেই খেলতে পারতেন না। বাকি দুই ম্যাচে এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে বিশ্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার টিম ম্যানেজমেন্ট।
ডি ভিলিয়ার্সের জায়গায় ওয়ানডে সিরিজে অতিথিদের নেতৃত্ব দেবেন হাশিম আমলা। প্রোটিয়াদের কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো অবশ্য দলের সেরা ব্যাটসম্যানের অনুপস্থিতিকে এক ধরনের ‘আশীর্বাদ’ হিসেবে দেখছেন, ‘আমাদের পরের প্রজন্মের ব্যাটসম্যানদের নিজেদের গড়ে তোলার জন্য এই সিরিজটা দারুণ এক সুযোগ।’