দ্বিতীয় দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্য
ইয়ান চ্যাপেল বাংলাদেশকে সাবধান করে বলেছিলেন যে, এই অস্ট্রেলিয়া আহত বাঘের মতো। পাল্টা আক্রমণ করার সুযোগ পেলে বিন্দুমাত্র সময় নেবে না। প্রথম টেস্টে হারের পর দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্টিভেন স্মিথের দল। বাংলাদেশের ৩০৫ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া এগোচ্ছে দুরন্ত গতিতে। দ্বিতীয় দিন শেষে ২ উইকেটে ২২৫ রান করেছে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্নার ৮৮ ও পিটার হ্যান্ডসকম্ব ৬৯ রানে ব্যাট করছেন।
এর আগে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থেমেছে ৩০৫ রানে। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এই সংগ্রহ খুব একটা খারাপ নয়। এই রানের বিপরীতে অস্ট্রেলিয়া তাদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে। সফরকারী দলটি হারিয়ে ফেলে ওপেনার ম্যাট রেনশর উইকেট। বাংলাদেশি পেসার মুস্তাফিজের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটে ইনিংস গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া। অনেকটা সফলও ছিলেন এ দুজন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৯৩ রান যোগ করেন তাঁরা। জুটিটা ভাঙার সব চেষ্টাই করেন মুশফিক। অবশেষে তাইজুলকে বলের দায়িত্ব সঁপেন অধিনায়ক। প্রথম বলেই স্মিথকে বোল্ড করেন তাইজুল। আউট হওয়ার আগে ৯৪ বলে ৫৮ রান করেন অসি অধিনায়ক।
এরপর ১০০ রানের জুটি বেঁধে বাংলাদেশের কাজটা আরো কঠিন করে তোলেন ওয়ার্নার-হ্যান্ডসকম্ব জুটি। ওয়ার্নারকে ফেরানোর বেশ কয়েকটি সুযোগ পেলেও সেগুলো কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। শর্ট লেগে মুমিনুল ওয়ার্নারের ক্যাচ ছাড়েন। এরপর ব্যক্তিগত ৭৩ রানে আরেকটি সুযোগ পান মুশফিক। মিরাজের বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়েছিলেন ওয়ার্নার। সহজ স্টাম্পিংয়ের সুযোগ মিস করেন অধিনায়ক মুশি।
ম্যাচে এর আগে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থামে ৩০৫ রানে। অবশ্য আজ দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে ধাক্কা খায় স্বাগতিক শিবির। দিনের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরে যান মুশফিকুর রহিম। প্রথম দিন ৫ উইকেট নেওয়া নাথান লায়নের শিকার হন টাইগার অধিনায়ক। লায়নের বলটা ব্যাট দিয়ে কোনোমতে ঠেকাতে পারলেও গড়িয়ে সেটা আঘাত হানে স্টাম্পে। ৬৮ রান করেন মুশি। এরপর দলীয় ২৯৩ রানে অ্যাশটন অ্যাগারের বলে আউট হন নাসির হোসেন। উইকেটের পেছনে দারুণ এক ক্যাচ নেন ম্যাথু ওয়েড। ৪৫ রান করেন নাসির। এরপর রানআউট হয়ে ফিরে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে লায়নের বলে স্মিথকে ক্যাচ দেন তাইজুল ইসলাম। লায়ন একাই নেন সাতটি উইকেট।
গতকাল টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দিনের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে ফিরে যান তামিম ইকবাল। দলের রান তখন ১৩। নাথান লায়নের বলে লেগবিফোর হন এই টাইগার ওপেনার। প্রথম টেস্টের উভয় ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করা তামিম আউট হন ৯ রান করে।
১৪তম ওভারের লায়ন ফেরান ইমরুলকে। লেগবিফোর হয়েছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। অসি ফিল্ডারদের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। তবে রিভিউ চেয়ে বসেন লায়ন। রিপ্লেতে দেখে ইমরুলকে আউট ঘোষণা করেন টিভি আম্পায়ার। বাংলাদেশের স্কোর তখন ২১।
এরপর ৪৯ রানের জুটি বেঁধে ম্যাচে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে চলছিলেন সৌম্য-মুমিনুল। দলীয় ৭০ রানে নাথান লায়নের তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান ৩৩ রান করা সৌম্য সরকার। লাঞ্চের পর নাথান লায়নের চতুর্থ শিকার হন মুমিনুল হক। ৬৭ বলে ৩১ রান করেন প্রথম টেস্টের দলে না থাকা ‘বাংলাদেশের ব্র্যাডম্যান’খ্যাত মুমিনুল।
এরপর সাকিব-মুশফিক মিলে যোগ করেন ৩২ রান। তবে অ্যাশটন অ্যাগারের বলে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। ৫২ বলে ২৪ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
সাকিব ফেরার পর মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমানের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশ। এই জুটি থেকে আসে ১০৫ রান। মুশফিক কিছুটা দেখেশুনে খেললেও সাব্বির খেলেন ওয়ানডের মেজাজে। তবে এক বিতর্কিত আউটে সাজঘরে ফিরে যান সাব্বির। তখন তাঁর ঝুলিতে ছিল ৬৬ রান। দিনের শেষ সময়ে অবশ্য আর কোনো বিপদ ঘটতে দেননি মুশফিক ও নাসির।