‘মিশন হেক্সা’: নেইমাররা যেখানে ছাড়িয়ে যেতে চান নিজেদেরই
শেষ তিন বিশ্বকাপ আসর ধরেই বিশ্বকাপের আসরে ব্রাজিল দল নামলেই ভেসে এসেছে একটা শব্দ—‘হেক্সা’। হেক্সাটা আসলে কী? মূলত লাতিন ভাষায় হেক্সা মানে হচ্ছে ছয় বা ষষ্ঠ। সাম্বা নাচের দেশটি যে দাঁড়িয়ে আছে নিজেদের ইতিহাসের ষষ্ঠ শিরোপার সামনে!
বিশ্বকাপের আসরে সবচেয়ে বেশি পাঁচবার সেরার মুকুট মাথায় পরেছে ব্রাজিল ফুটবল দল। প্রথম শিরোপাটার জন্য যে দলটাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২৮ বছর, সেই দলটাই কি না হয়ে গেল ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বেশিবার ট্রফি উঁচানো দল!
বিশ্বকাপের প্রথম দুই আসরেই ব্রাজিলকে ছিটকে পড়তে হয়েছিল একদম প্রথম পর্ব থেকেই। ১৯৩৮ সালের তৃতীয় আসরে এসে অবশ্য সেরা চারে জায়গা করে নিয়েছিল দলটি। তবে সেবারও আসেনি শিরোপা।
তৃতীয় আসরেও শিরোপা জিততে না পারায় ব্রাজিল দলের অপেক্ষাটা যেন বেড়েছিল একটু বেশিই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে ১২ বছর আর মাঠেই গড়ায়নি ফুটবল বিশ্বকাপের আসর।
১৯৫০ সালে যখন আবার বেজে উঠল বিশ্বকাপের দামামা, ব্রাজিলই হয়ে গেল সেবারের আয়োজক দেশ। আদেমির, চিকো আর জিজিনহোদের সমন্বয়ে দুর্দান্ত নৈপুণ্যে ফাইনালেও ওঠা হয়েছিল স্বাগতিকদের। বিশ্বকাপের সেবারের ফরম্যাট অনুযায়ী উরুগুয়ের বিপক্ষে ফাইনালে ড্র পেলেই চলত ব্রাজিলের।
নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরার সাক্ষী হতেই কি না বিশ্বকাপ ইতিহাসের রেকর্ড পরিমাণ দর্শক (প্রায় ২ লাখ) হাজির হয়েছিল মারাকানা স্টেডিয়ামে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ২-১ গোলের জয় দিয়ে উরুগুয়ে জিতে নিয়েছিল নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপাটা।
অপেক্ষার প্রহরটা আরো বেড়েছিল ব্রাজিলের। বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর পর থেকে দিন, মাস কেটে সময় যখন হলো ২৮ বছর, সুইডেনের মাঠে ১৯৫৮ বিশ্বকাপ দিয়েই ব্রাজিল পেল নিজেদের প্রথম শিরোপা। পেলে আর ভাভাদের হাত ধরে পাওয়া এত প্রতীক্ষার বিশ্বকাপ ঘরে পেয়ে সেলেসাওরা বোধ হয় শিরোপাকে আর অন্য কারো ঘরে যেতে দিতে চাইল না। ১৯৬২ বিশ্বকাপটাও জিতে নিয়েছিল ব্রাজিলই।
টানা দুবার শিরোপা জিতে ব্রাজিল একটা বিরতিই নিয়েছিল বোধ হয়। সেই অবসর শেষ করে আবারও ১৯৭০ সালে নিজেদের তৃতীয় শিরোপাটা তুলে ধরেছিল লাতিন দেশটি। তবে এরপর আবার ব্রাজিলিয়ান দর্শকদের গুনতে হয়েছিল অপেক্ষার প্রহর।
নিজেদের চতুর্থ শিরোপাটা জিততে ব্রাজিলকে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে গুনে গুনে ২৪ বছর। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মাঠে রোমারিও, দুঙ্গাদের বদৌলতে সাম্বা নাচের তালে আবারও নেচে উঠল ব্রাজিল।
এশিয়ার মাঠের প্রথম বিশ্বকাপটা গড়িয়েছিল ২০০২ সালে, জাপান আর কোরিয়ার মাঠে। সেবার ব্রাজিলকে মূল পর্বে জায়গা পেতে হয়েছিল বহু কাঠখড় পোড়ানোর পর। অথচ, প্লে-অফ খেলে বিশ্বকাপের মাঠে নামা সেই ব্রাজিল দলটাই হয়ে গেল কি না চ্যাম্পিয়ন! রোনালদো-রিভালদোরা সেবার দেশে ফিরেছিলেন একদম শিরোপা ‘পেন্টা’ বা ‘পঞ্চ’ পূরণ করেই।
অবশ্য ব্রাজিল দলের জেতা শেষ শিরোপা ওটাই। জার্মানিতে ২০০৬ সালে ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে ২০১০ সালে দুবারই কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল পাঁচবারের বিশ্ব-চ্যাম্পিয়নদের। নিজেদের মাঠে ২০১৪ সালেই ব্রাজিল দল ঘরে তুলতে চেয়েছিল ট্রফির ‘হেক্সা’। তবে সম্ভব হয়নি উল্টো সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ৭-১ গোলের পরাজয়ে লজ্জায় ডুবেছিল গোটা দেশ।
বিশ্বকাপ যখন আবারও দোরগোড়ায়, ব্রাজিল তখন ফের স্বপ্নের জাল বুনছে আবারও শিরোপা ঘরে তোলার। ব্রাজিলের চেয়ে বেশিবার কেউ এখনো তুলে ধরতে পারেনি বিশ্বসেরার মুকুটটা।
জার্মানি আর ইতালি শিরোপা জিতেছে সমান চারবার করে। ইতালি তো এবার নেই বিশ্বকাপের আসরেই আর জার্মানরা জিতে গেলে ছুঁয়ে দেবে সেলেসাওদের। আর যদি ষষ্ঠবারের মতো জিতে নেওয়া যায় শিরোপাটা, তবে নেইমাররা যে নিজেরাই ছাড়িয়ে যাবেন নিজেদের!
,