সাক্ষাৎকার
ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ে যেতে চাই : নাফিসা কামাল
তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি আইসিসি ও বিসিবির সাবেক সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়ে। কিন্তু নাফিসা কামাল এখন নিজের পরিচয়েও ক্রিকেটাঙ্গনে পরিচিত। তিনি বিপিএলের দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের চেয়ারপারসন। তাঁর দলই সবার আগে প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেছে। এনটিভি অনলাইনকে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার গল্প শোনালেন নাফিসা কামাল।
প্রশ্ন : ক্রিকেটে আসার আগ্রহ কীভাবে হলো?
নাফিসা কামাল : আমি একটি ক্রীড়াপ্রেমী পরিবারের মানুষ। বাবা একজন বিখ্যাত ক্রীড়া সংগঠক। তাঁকে দেখে, তাঁর অনুপ্রেরণায় ক্রিকেটের প্রতি আমি আগ্রহী হয়ে উঠি। তা ছাড়া ছোটবেলা থেকেই দেশ-বিদেশের অনেক বিখ্যাত স্টেডিয়ামে প্রচুর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছি। সেসব খেলা দেখে ক্রিকেটের প্রতি ভালো লাগা জন্মেছে। এই ভালোলাগা আর বাবার প্রেরণায় বিপিএলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের নারীদের অনেকেই ঘরের বাইরে যেতে অনাগ্রহী। সেখানে আপনি একেবারেই আলাদা। বিপিএলের মতো এত বড় প্রতিযোগিতার একটা দলের মালিকানা আপনার অধিকারে। বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?
নাফিসা : আসলে আমি নারী-পুরুষকে আলাদাভাবে দেখতে চাই না। আমি মনে করি যার যোগ্যতা আছে সে-ই এগিয়ে যাবে। তা ছাড়া ক্রিকেট আমার রক্তে মিশে আছে। সে কারণেই ক্রিকেটে আসা।
প্রশ্ন : একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে ভবিষ্যতে নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চান?
নাফিসা : আমি মনে করি ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে বিপিএল হলো আমার সূচনা। এখান থেকে আমি অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই। আমার বাবা যেমন ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেছেন, আমিও ঠিক সেখানে পৌঁছাতে চাই। আপাতত আমার লক্ষ্য হচ্ছে বিসিবির সঙ্গে যুক্ত হওয়া। তারপর সেই পথ ধরে চলে যেতে চাই আইসিসি পর্যন্ত।
প্রশ্ন : তাহলে কি ভবিষ্যতে আমরা বিসিবি এবং আইসিসির প্রথম নারী সভাপতির আসনে আপনাকে দেখতে পাচ্ছি?
নাফিসা : আমার সে রকমই লক্ষ্য। আমার মতে, চেষ্টা থাকলে এবং পরিশ্রম করলে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব কিছু নয়। সেভাবেই আমি এগিয়ে যেতে চাই।
প্রশ্ন : বিপিএলে আপনার দল সবার আগে ফাইনালে। কেমন লাগছে?
নাফিসা : অবশ্যই ভালো লাগছে। যদিও টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই আমার কিছুটা শঙ্কা ছিল যে ফাইনালে পৌঁছাতে পারব কি না। কারণ শক্তির বিচারে অন্য দলগুলোর তুলনায় আমরা কিছুটা পিছিয়ে ছিলাম। শেষ পর্যন্ত যে ফাইনালে উঠতে পেরেছি তার পেছনে সব কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের। বিশেষ করে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রশংসা না করলেই নয়। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্বই আমাদের এ পর্যায়ে পৌঁছাতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে। আমি তাঁকে আলাদা করে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তিনি দলকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে তুলেছেন বলেই আজ আমরা ফাইনালে।
প্রশ্ন : কিন্তু আমরা শুনেছিলাম আইকন খেলোয়াড় হিসেবে আপনারা নাকি সাকিব আল হাসানকে চেয়েছিলেন?
নাফিসা : হ্যাঁ, এটা সত্যি যে আমরা সাকিবকে দলে পেতে চেয়েছিলাম। কারণ তাঁর সঙ্গে আমাদের একটা পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। তবে মাশরাফিকে পেয়ে অখুশি হইনি। এমন একজন অধিনায়ক আমাদের দলের জন্য সত্যিই প্রয়োজন ছিল।
প্রশ্ন : কী মনে হচ্ছে, বিপিএলে আপনার দল চ্যাম্পিয়ন হবে?
নাফিসা : অবশ্যই। আমি আশাবাদী, আমার দল চ্যাম্পিয়ন হবে। ফাইনালে উঠে শিরোপা জিততে না পারলে অপূর্ণতা থেকে যাবে। দলের খেলোয়াড়রা এখন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছেন। এটা আমাদের জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট।
প্রশ্ন : খেলোয়াড়দের জন্য নাকি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে যে চ্যাম্পিয়ন হলে বোনাস দেওয়া হবে?
নাফিসা : আমরা ইতিমধ্যেই খেলোয়াড়দের শতভাগ পারিশ্রমিক দিয়ে ফেলেছি। যদি আমরা চ্যাম্পিয়ন হই তাহলে বোনাস তো দেওয়া হবেই, সেই সঙ্গে দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে বিদেশ সফরেও নিয়ে যাওয়া হবে।
প্রশ্ন : বিপিএল শেষ হওয়ার পথে। আয়োজন কেমন হলো?
নাফিসা : আমি মনে করি এবারের বিপিএল খুবই সার্থক একটা টুর্নামেন্ট হয়েছে। টুর্নামেন্টটা বেশ জমজমাট এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। বেশ কয়েকজন তরুণ, প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় উঠে এসেছে যারা ভবিষ্যতে দেশের সম্পদে পরিণত হবে। বিশেষ করে আবু হায়দার রনির মতো খেলোয়াড়কে আমরা পেয়েছি। আমি মনে করি সে অনেকদূর যাবে।
প্রশ্ন : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
নাফিসা : আমি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে একটা প্রতিষ্ঠিত দল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সবার হৃদয়ে পৌঁছে দিতে চাই কুমিল্লাকে। ভবিষ্যতে কুমিল্লা থেকে যেন জাতীয় দলের অনেক খেলোয়াড় উঠে আসে।
প্রশ্ন : শুনেছি আপনার বাবা কুমিল্লায় একটি স্টেডিয়াম করার পরিকল্পনা নিয়েছেন?
নাফিসা : হ্যাঁ, আমার বাবা কুমিল্লায় একটি আধুনিক মানের স্টেডিয়াম করার ঘোষণা অনেক আগেই দিয়েছেন। ইতিমধ্যে সেই স্টেডিয়ামের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। আশা করছি অচিরেই এর বাস্তবায়ন হবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে ভবিষ্যতে কোথায় দেখতে চান?
নাফিসা : বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করতে চাই। এই দলকে নিয়ে অনেক দূর যেতে চাই। আমি চাই বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল যেন পুরুষ দলের আগেই বিশ্বকাপ জিতে নেয়। আমার বিশ্বাস নারী ক্রিকেটাররাই আগে বিশ্বকাপ জিতবে।