‘এল ক্লাসিকো’তে বার্সার জয়
অনেক প্রতীক্ষার ‘এল ক্লাসিকো’ শেষে বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের চোখে-মুখে যেন শিরোপা জয়ের আনন্দ। লা লিগা শেষ হতে এখনো অনেক দেরি। তবে মহাগুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেওয়া বার্সার শিরোপা ফিরে পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা।
রোমাঞ্চকর, উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ জিতে স্প্যানিশ লিগের শীর্ষস্থান আরো মজবুত করেছে বার্সা। ২৮ ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ ৬৮ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে রিয়ালের অবস্থান দ্বিতীয়। ভ্যালেন্সিয়া ৬০ ও গতবারের চ্যাম্পিয়ন আতলেতিকো মাদ্রিদ ৫৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে। সব দলেরই আর ১০টি করে ম্যাচ বাকি।
‘এল ক্লাসিকো’ মানেই নাটকীয়তা আর রোমাঞ্চর দুর্দান্ত সংমিশ্রণ। রোববার রাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
ঘরের মাঠ ন্যু ক্যাম্পে তৃতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত বার্সা। বাঁ দিক দিয়ে রিয়ালের বক্সের ভেতর ঢুকে পড়ে ক্রস করেছিলেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। তবে অতিথিদের বিপদে পড়তে দেননি দানিয়েল কারভাহাল। কর্নারের বিনিময়ে রিয়ালকে রক্ষা করেন এই ডিফেন্ডার।
দ্বাদশ মিনিটে হতাশায় পুড়তে হয় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। করিম বেনজেমার ক্রস ফাঁকায় খুঁজে পেয়েছিল ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারকে। তবে রোনালদোর ভলি রিয়াল-সমর্থকদের হতাশ করে বাধা পায় ক্রস বারে।
১৯ মিনিটে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। বাঁ দিক থেকে নেওয়া লিওনেল মেসির ফ্রি-কিকে কোনাকুনি হেডে রিয়াল গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াসকে পরাস্ত করেন ফরাসি ডিফেন্ডার জেরেমি ম্যাথিউ।
৩১ মিনিটে ক্যাসিয়াসকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি নেইমার। ব্রাজিলিয়ান তারকার দুর্বল শট ধরতে সমস্যা হয়নি রিয়াল গোলরক্ষকের।
সেই পাল্টা আক্রমণ থেকেই সমতা ফিরিয়ে আনে রিয়াল। লুকা মদ্রিচের থ্রু দারুণ দক্ষতায় ব্যাক হিল করে রোনালদোকে দেন বেনজেমা। রোনালদোর বুটের ডগা থেকে বেরোনো চমৎকার শট বার্সার গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভোকে ফাঁকি দিয়ে জালে চলে যায়।
৩৯ মিনিটে আবার বার্সার জালে বল। তবে গ্যারেথ বেলের ‘গোল’ বৈধতা পায়নি অফসাইডের কারণে।
চার মিনিট পর রোনালদোর জোরালো শট কোনোরকমে পোস্টের ওপর দিয়ে তুলে দেন ব্রাভো। কর্নার থেকে বেলের শট সাইড বারের সামান্য বাইরে দিয়ে বেরিয়ে গেলে এগিয়ে থাকার আনন্দ নিয়ে বিরতিতে যেতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আবার রিয়ালের জন্য হতাশা। ৪৮ মিনিটে রোনালদোর পাস থেকে বেনজেমার শট কোনোরকমে ঠেকিয়ে বার্সাকে আবার রক্ষা করেন ব্রাভো।
তবে এর পরই ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিক দল। একের পর এক আক্রমণ করে রিয়ালের ডিফেন্সকে ব্যতিব্যস্ত করার সুফলও পেয়ে যায় বার্সা। ৫৬ মিনিটে লুইস সুয়ারেজের গোলটা এককথায় অসাধারণ। দানি আলভেসের লং বল ধরে, গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা দুই ডিফেন্ডার পেপে ও সার্জিও রামোসকে বোকা বানিয়ে কোনাকুনি শটে গোল করেন উরুগুয়ের এই স্ট্রাইকার। ডান দিকে ঝাঁপ দিলেও কিছুই করতে পারেননি ক্যাসিয়াস।
৬৭ মিনিটে ব্যবধান ৩-১ হতে পারত। কিন্তু দুজনকে কাটিয়ে বক্সের ঠিক বাইরে থেকে নেওয়া নেইমারের শট একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে হতাশ করে স্বাগতিক সমর্থকদের।
ছয় মিনিট পর আবার হতাশ হতে হয় বার্সাকে। বল নিয়ে দ্রুতগতিতে রিয়ালের রক্ষণভাগে ঢুকে পড়া মেসির শট সাইডবার ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। দুই মিনিট পর মেসিরই বাড়ানো বল থেকে নেইমারের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আরো একবার হতাশ করে স্বাগতিক দলকে।
৮৬ মিনিটে দারুণ একটা সুযোগ নষ্ট করেন জর্দি আলবা। মেসির দুর্দান্ত থ্রু বক্সের ভেতর সুবিধাজনক জায়গায় পেলেও আলবা পোস্টে পাঠাতে পারেননি। দুই মিনিট পর মেসির জোরালো শট দক্ষতার সঙ্গে ঠেকিয়ে দেন ক্যাসিয়াস।
এর পরও বার্সা ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। রিয়ালেরও সমতা ফেরানোর চেষ্টা ছিল। কিন্তু গোল আর হয়নি।
তাতে কোনো ক্ষতি হয়নি বার্সার। গত অক্টোবরে রিয়ালের মাঠ থেকে ৩-১ গোলের হার নিয়ে ফিরতে হয়েছিল মেসি-নেইমারদের। এবার ঘরের মাঠে সেই হারের ‘প্রতিশোধ’ নিয়ে শিরোপার পথও প্রশস্ত করল এফসি বার্সেলোনা।