স্বাধীনতা দিবসে ভালোবাসায় সিক্ত সৌম্য
বিশ্বকাপের আগে একটি মাত্র আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন। গত বছরের ১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত সৌম্য সরকারকে বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশের খুব বেশি মানুষ হয়তো চিনত না। তবে ক্রিকেটের সেরা আসরে ভালো খেলে সাতক্ষীরার ছেলেটি এখন মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবসে নিজ জেলায় ভালোবাসার সংবর্ধনায় সিক্ত হলেন তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সৌম্যকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সদর আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ জাতীয় পতাকার আদলে তৈরি উত্তরীয় পরিয়ে দেন তাঁকে। সাতক্ষীরার এই কৃতী ক্রিকেটারের হাতে তুলে দেওয়া হয় ক্রেস্টও।
এমন দিনে সংবর্ধনা পেয়ে সৌম্য অভিভূত। বক্তব্য দিতে গিয়ে দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঝরে পড়ল তাঁর কণ্ঠে, ‘স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে যে খেলতে পারছি এটা আমাদের জন্য একটা বড় অর্জন। এখন আমাদের লক্ষ্য দেশের ক্রিকেটকে অনেক বড় একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া। তাহলেই মনে করব আমরা সফল।’
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অন্যতম সফল এই ব্যাটসম্যানের লক্ষ্য জাতীয় দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করা, সাতক্ষীরার মানুষের মুখ উজ্জ্বল করা। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপে খেলতে পারা আমার জীবনের এক বড় প্রাপ্তি। আমার লক্ষ্য ফর্ম ধরে রেখে জাতীয় দলে নিয়মিত সুযোগ পাওয়া।’
বিশ্বকাপে প্রায় প্রত্যেক ম্যাচে সৌম্যর মূল্যবান ইনিংস বাংলাদেশ দলকে সম্মানজনক সংগ্রহের পথে এগিয়ে দিয়েছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই ২৫ বলে ২৮ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলেন সৌম্য। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে করেন ১৫ বলে ২৫ রান। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০ ও ৫১ রানের আরো দুটো চমৎকার ইনিংস আসে তাঁর ব্যাট থেকে। ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালেও মোটামুটি সফল, ৪৩ বলে করেন ২৯ রান। বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচ খেলে একটি ফিফটিসহ ২৯.১৬ গড়ে সৌম্যর সংগ্রহ ১৭৫ রান।
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড প্রবাসী বাঙালিদের সমর্থন আর ভালোবাসায় অভিভূত সৌম্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের মাটিতে দর্শকদের অনেক সমর্থন পাই। কিন্তু প্রবাসী দর্শকদের ভালোবাসা আর আন্তরিকতা সত্যিই মুগ্ধ করার মতো। আমাদের সাফল্যের অন্যতম কারণ তাঁদের অনুপ্রেরণা।’
দল ও ব্যক্তিগত সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে সৌম্যর মনে পড়ে যায় পুরনো দিনের কথা, ‘আমার বড় ভাই পুষ্পেন সরকার ছিলেন ক্রিকেটার। তাঁর খেলা দেখেই আমার মনে ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা জাগে। একদিন মাঠে গিয়ে দেখি একটা দলে একজন খেলোয়াড় কম। বড়দের সঙ্গে সেদিন আমাকে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়। সেদিন থেকেই আমার ক্রিকেট-জীবনের সূচনা।’
সৌম্যর পরিবারে ক্রীড়াবিদ আছেন আরেকজন। তাঁর বাবা একসময় ছিলেন ফুটবলার। এখন অবশ্য তিনি শিক্ষক। ছোটবেলা থেকে খেলার পরিবেশেই বড় হয়েছেন সৌম্য। লেখাপড়ায় কিছুটা অমনোযোগ থাকলেও খেলাধুলায় ছিল ভীষণ উৎসাহ। পাড়ার গলি ও স্কুলের মাঠে দুরন্ত খেলা সৌম্যকে ২০০৬ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি করে দেয় তাঁর পরিবার।
এরপর তর তর করে ওপরে ওঠা। ২০০৯ ও ২০১১ সালে বিকেএসপির সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান। ২০১০ সালে জায়গা করে নেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। যুব বিশ্বকাপ ও যুব এশিয়া কাপে অংশ নিয়ে খেললেন ক্রিকেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় টুর্নামেন্ট বিশ্বকাপেও।
আর সেখানে ভালো খেলেই আজ সৌম্য বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়!