বদলে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ
২০০৭ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেকের পর এবারের বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত ১১০টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন। কিন্তু সেঞ্চুরি ছিল না একটিও। গত বছরের শেষ দিকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ‘হোম’ সিরিজে অপরাজিত ৮২ রানই ছিল তাঁর সর্বোচ্চ। সেই মাহমুদউল্লাহ জ্বলে উঠলেন বিশ্বকাপে। টানা দুই ম্যাচ তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ক্রিকেটের সেরা আসরে বাংলাদেশের সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপই শুধু দূর করেননি, নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ২০১৫ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় তাঁর অবস্থান নবম। বিশ্বকাপের সেরা একাদশে মাহমুদউল্লাহর নামও বিবেচনা করেছিল আইসিসি।
এখন তিনি সবার ভালোবাসা আর অভিনন্দনে সিক্ত। অথচ বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে এমন দুর্দান্ত সাফল্য পাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। কঠোর পরিশ্রম অবশ্য করেছিলেন। সেই পরিশ্রমের সুফল পেয়ে তিনি উচ্ছ্বসিত।
বিশ্বকাপের সাফল্য মাহমুদউল্লাহর আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই বলে আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন না মোটেই, ‘দীর্ঘদিনের চেষ্টার ফল আজকের এই সাফল্য। এই সাফল্য আমার দায়িত্ববোধ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাকে আরো পরিশ্রম করতে হবে, আরো ভালো খেলতে হবে। দেশের জন্য ভালো খেলা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। দৃঢ় মনোবল এবং মরিয়া প্রচেষ্টা সাফল্য এনে দেবেই।’
শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, সবার প্রিয় ‘রিয়াদে’র লক্ষ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একটা সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়া, ‘এবারের বিশ্বকাপে আমাদের দলীয় অর্জন দারুণ। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা দু-তিন বছর ধরে রাখা সম্ভব হলে আশা করি আমরা র্যাংকিংয়ে পাঁচ-ছয় নম্বরের মধ্যে চলে আসব। এই সাফল্য আগামীতেও ধরে রাখতে হবে।’
মাহমুদউল্লাহর দৃঢ় বিশ্বাস, দলীয় প্রচেষ্টাই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রধান কারণ, “সবার মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। আর সবার ‘সাপোর্ট’ আর অনুপ্রেরণায় আমি ব্যক্তিগতভাবে ভালো করতে পেরেছি। আসলে একজনের সাফল্যের পেছনে অনেকেরই অবদান থাকে।”
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব তাঁর। এ এমন এক অর্জন যা মাহমুদউল্লাহর কাছ থেকে কেউ কখনো কেড়ে নিতে পারবে না। এই অর্জন নিয়ে তিনিও গর্বিত, ‘মানুষের মনে রাখার মতো কিছু করতে পেরেছি বলে বেশ গর্ববোধ করছি। তবে এটা শুধুই সূচনা। সামনে আরো ভালো করতে হবে।’
বিশ্বকাপের সাফল্যে বাংলাদেশ দল এখন উজ্জীবিত। আত্মবিশ্বাসের পারদও উঁচুতে। সামনেই পাকিস্তানের সঙ্গে ‘হোম’ সিরিজ। এরপর ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ঘরের মাঠে খেলবে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর লক্ষ্য, পাকিস্তানকে হারিয়ে দেশের ক্রিকেটকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, ‘সামনে বাংলাদেশে আসছে পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা আর ভারতের মতো তিনটি শক্তিশালী দল। শুরুতেই আসছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপের মতো উজ্জীবিত ক্রিকেট খেলতে পারলে পাকিস্তানকে হারিয়েও দিতে পারি আমরা।’
এবারের বিশ্বকাপে অনেক অর্জনের মধ্যেও কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যাওয়ার হতাশা অবশ্য তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে মাহমুদউল্লাহকে। তবে এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আরো সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার আশাবাদ তাঁর কণ্ঠে, ‘সেমিফাইনালে উঠতে না পারা আমাদের জন্য অনেক বড় আক্ষেপের। আশা করি আগামী বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আরো ভালো করতে পারবে।’