শুরু হচ্ছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’
পুরানকথা, ঐতিহ্য, ইতিহাস; সব কিছু যেন একাকার হয়ে যায় অলিম্পিকে। প্রাচীন গ্রিসের ঈশ্বরদের সম্মান জানাতে গিয়ে যে ক্রীড়াযজ্ঞের সূত্রপাত, সেটাই কালক্রমে পরিণত হয়েছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এ। আধুনিক ক্রীড়াবিশ্বের সবচেয়ে বড় আসর। প্রতি চার বছর পরপর যেখানে অংশ নিতে মিলিত হন বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের ক্রীড়াবিদরা। এবার ক্রীড়াবিশ্বের সবচেয়ে বড় এই মিলনমেলা বসতে যাচ্ছে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরোতে। শুক্রবার ভোর ৫টায় জমকালো এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠবে এবারের রিও অলিম্পিকের।
বেশ টালমাটাল অবস্থাতেই শুরু হতে যাচ্ছে এবারের অলিম্পিক। সন্ত্রাসী হামলার আতঙ্ক, জিকা ভাইরাসের প্রকোপ, ব্রাজিলের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি; সব কিছুর সঙ্গেই পাল্লা দিতে হচ্ছে ক্রীড়াবিশ্বকে। এত এত বাধা উপেক্ষা করেও অবশ্য এবারের রিও অলিম্পিকে অংশ নিতে যাচ্ছেন ১০ হাজারেরও বেশি অ্যাথলেট। তাঁরা লড়বেন প্রায় পাঁচ হাজার পদক জয়ের জন্য।
রিও অলিম্পিক শুরুর আগে ক্রীড়াবিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছে রাশিয়ার ডোপ কেলেঙ্কারি। রাষ্ট্রীয় মদদে ডোপ পরীক্ষায় কারচুপির অভিযোগে পুরো রাশিয়াকেই অলিম্পিক থেকে বহিস্কারের দাবি উঠেছিল। শেষপর্যন্ত অবশ্য সে পথে হাঁটেনি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি। এবারের রিও অলিম্পিকের বিভিন্ন ইভেন্টে রাশিয়া থেকে অংশ নিতে যাচ্ছেন মোট ২৬৫ জন প্রতিযোগী। তবে অ্যাথলেটিকসের কোনো ইভেন্টে দেখা যাবে না রাশিয়াকে। ডোপ কেলেঙ্কারির কারণে রিও অলিম্পিক থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে একশরও বেশি অ্যাথলেটকে।
রিও অলিম্পিকে ক্রীড়াবিশ্বের বিশেষ নজর থাকবে দুই ক্রীড়াবিদের দিকে। জ্যামাইকার উসাইন বোল্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল ফেলপস। গত দুইটি অলিম্পিকের মতো এবারও তিনটি ইভেন্টের সোনা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে রিওতে পা রেখেছেন বোল্ট। এবারও তিনি দৌড়াবেন ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটার রিলে ইভেন্টে। গত দুইটি অলিম্পিকের তিনটি ইভেন্টেই সোনা জিতেছিলেন বিশ্বের দ্রুততম মানব। এবারও সেই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারলে কিংবদন্তিদের কাতারে স্থায়ী আসন গড়ে নিতে পারবেন বোল্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতারু মাইকেল ফেলপসও থাকবেন পাদপ্রদীপের আলোয়। ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনটি অলিম্পিকে অংশ নিয়ে ফেলপস জিতেছিলেন মোট ২২টি পদক। সবচেয়ে বেশি পদক ও সবচেয়ে বেশি স্বর্ণপদক (১৮টি) জয়ের রেকর্ড আছে তাঁর দখলে। এবার নিজেকে আরো উঁচুতে নিয়ে যাওয়া চেষ্টাই করবেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই সাঁতারু।
অলিম্পিকে ফুটবল বিশ্বের নজর থাকবে স্বাগতিক ব্রাজিলের দিকে। এখন পর্যন্ত একবারও অলিম্পিকের সোনা না জিততে পারার আক্ষেপ ব্রাজিল এবার ঘোচাতে পারবে কি না, সেদিকে কৌতূহলী দৃষ্টিই থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের। ফুটবলে ব্রাজিলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাও অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে রেকর্ডের হাতছানি সামনে রেখে। এবার সাফল্য পেলেই আর্জেন্টিনা ছুঁয়ে ফেলতে পারবে অলিম্পিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশিবার সোনা জয়ের রেকর্ড। সবচেয়ে বেশি, তিনবার সোনা জিতেছে গ্রেট ব্রিটেন ও হাঙ্গেরি। আর্জেন্টিনা এখন পর্যন্ত জিতেছে দুটি অলিম্পিক সোনা।
ক্রীড়াবিশ্বের সবচেয়ে বড় আসরে দেখা যাবে বাংলাদেশের পতাকাও। বাংলাদেশ থেকে এবারই প্রথমবারের মতো সরাসরি অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। তাঁর কাঁধেই থাকবে বাংলাদেশের পতাকা বহনের ভার। সিদ্দিকুর ছাড়াও অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন শ্যামলী রায় (আর্চারি), আব্দুল্লাহ হেল বাকি (শ্যুটিং), মাহফিজুর রহমান (সাঁতার), সোনিয়া আক্তার (সাঁতার), শিরিন আক্তার (অ্যাথলেটিকস) ও মেজবাহ আহমেদ (অ্যাথলেটিকস)।
আব্দুল্লাহ হেল বাকি অংশ নেবেন শ্যুটিংয়ের ১০মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে। মাহফিজুর ও সোনিয়া; দুজনেই অংশ নেবেন সাঁতারের ৫০ মিটার ফ্রি-স্টাইল ইভেন্টে। অ্যাথলেটিকস থেকেও শুধু একটি ইভেন্টেই দেখা যাবে শিরিন ও মেজবাহকে। দুজনই দৌড়াবেন ১০০মিটার ইভেন্টে।