খুলনা টেস্ট
হাফিজের ব্যাটে নাজেহাল বাংলাদেশ
তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে একদমই ভালো খেলতে পারেননি, আউট হয়ে গেছেন চার, শূন্য ও চার রান করে। তবে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে টেস্ট সিরিজের শুরুতেই মোহাম্মদ হাফিজ সাফল্যে উদ্ভাসিত। এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারের শতকে প্রথম টেস্টে ভীষণ চাপের মধ্যে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩৩২ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিনশেষে পাকিস্তানের স্কোর ২২৭/১। হাতে ৯ উইকেট নিয়ে অতিথিরা পিছিয়ে আছে ১০৫ রানে। টেস্টে অষ্টম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া হাফিজ অপরাজিত আছেন ১৩৭ রান নিয়ে। অন্য প্রান্তে থাকা আজহার আলী ৬৫ রানে অপরাজিত।
প্রথম দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল হক জানিয়েছিলেন, এই পিচে টিকে থাকা সহজ কিন্তু রান করা খুব কঠিন। ‘প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৩০০ করলেই যথেষ্ট’ এমন কথা বলতেও দ্বিধা করেননি ৮০ রান করা এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে মুমিনুলের কথা পরিহাস বলেই মনে হচ্ছে যেন!
খুলনা টেস্টের প্রথম দিন শেষ হয়েছিল মুমিনুল হকের আউটের হতাশা নিয়ে। দ্বিতীয় দিনের শুরুতে সাকিব আল হাসানও আউট। এর পর সৌম্য সরকারকে সঙ্গে নিয়ে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু অভিষেকে আলো ছড়িয়ে সৌম্য বিদায় নেওয়ার পর মুশফিকও আউট হয়ে গেছেন। এরপর আর বেশি দূর যেতে পারেনি স্বাগতিকদের ইনিংস।
৪ উইকেটে ২৩৬ রান নিয়ে শুরু করা বাংলাদেশকে দিনের নবম বলে চার উপহার দিয়েছিলেন সাকিব। বোলার জুলফিকার বাবর অবশ্য ‘প্রতিশোধ’ নিতে দেরি করেননি। এই বাঁ-হাতি স্পিনারের পরের ওভারে লেগ স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন প্রথম দিন শেষে ১৯ রানে অপরাজিত সাকিব। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার বুধবার মাত্র ৬ রান করতে পেরেছেন।
দলীয় ২৪৩ রানে সাকিবের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন মুশফিক আর সৌম্য। দুজনের ৬২ রানের জুটিতে বাংলাদেশ যখন বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখছে, ঠিক তখনই হাফিজকে অযথা তুলে মারতে গিয়ে সৌম্য আউট। পাঁচটি চারে সাজানো সম্ভাবনা জাগানো ইনিংসটা শেষ হয়েছে ৩৩ রানে। লেগস্পিনার ইয়াসির শাহর পরের ওভারে দায়িত্বহীন শট খেলে মুশফিকও আউট হয়ে গেছেন। অফস্টাম্পের বাইরের বল কাভারে মিসবাহ-উল-হককে ক্যাচ দেওয়া মুশফিকের অবদান ৩২ রান।
ইয়াসিরের পরের ওভারে আবার ধাক্কা। মাত্র এক রান করে বোল্ড হয়ে গেছেন তাইজুল ইসলাম। মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে তিন উইকেট হারানোর হতাশা নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে গেছে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ওভারে অভিষিক্ত পেসার মোহাম্মদ শহীদের উইকেট তুলে নিয়েছেন ওয়াহাব রিয়াজ। ১০ রান করে মিসবাহ-উল-হকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন শহীদ। শেষ উইকেট তুলে নিতেও তেমন অপেক্ষা করতে হয়নি পাকিস্তানকে। দুই ওভার পরই রুবেল হোসেনকে আউট করে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের সমাপ্তি টেনেছেন রিয়াজ। ২৭ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গেছে ৩৩২ রানে।
পাকিস্তানের পক্ষে তিনটি উইকেট করে উইকেট নিয়েছেন রিয়াজ ও ইয়াসির। দুটি করে উইকেট হাফিজ ও বাবরের।
বোলারদের সাফল্যে উজ্জীবিত পাকিস্তানের দুই ওপেনার হাফিজ ও সামি আসলাম ভালো সূচনা এনে দিয়েছিলেন দলকে। উদ্বোধনী জুটিতে ৫০ রান পেয়ে যায় অতিথি দল। এরপরই আঘাত হেনেছেন তাইজুল ইসলাম। এই বাঁ-হাতি স্পিনারের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হয়েছেন অভিষিক্ত সামি (২০)।
তবে ওয়ানডে সিরিজের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে জ্বলে ওঠা হাফিজ আর ওয়ানডে অধিনায়ক আজহারের দৃঢ়তায় খুলনায় চালকের আসনে পাকিস্তান। হাফিজের ১৭৯ বলের দারুণ ইনিংসটা সাজানো ১২টি চার ও দুটি ছক্কায়। আজহারের ১৩৬ বলের ইনিংসে চার দুটি আর ছক্কা একটি। অবিচ্ছিন্ন দ্বিতীয় উইকেটে ১৭৭ রানের জুটি গড়েছেন দুজনে। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে এটাই পাকিস্তানের সর্বোচ্চ জুটি।
বাংলাদেশ অবশ্য শুরুতেই সাফল্য পেতে পারত। তাইজুলের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারে আউট হতে পারতেন হাফিজ। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের এলবিডব্লিউর জোরালো আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেছেন হাফিজ।
৩৫তম ওভারে আবার হতাশা। ব্যক্তিগত ২৮ রানে অভিষিক্ত মোহাম্মদ শহীদের বলে ক্যাচ দিলেও উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের ব্যর্থতায় ‘জীবন’ ফিরে পেয়েছেন আজহার। ক্যাচটা গ্লাভসবন্দি করতে গিয়ে ব্যথা পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয়েছে বাংলাদেশের অধিনায়ককে। বাকি সময়ে উইকেটরক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন ইমরুল কায়েস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৩৩২(তামিম ২৫, ইমরুল ৫১, মুমিনুল ৮০, মাহমুদউল্লাহ ৪৯, সাকিব ২৫, মুশফিক ৩২ সৌম্য ৩৩, শুভাগত ১২*, তাইজুল ১, শহীদ ১০, রুবেল ২; ওয়াহাব ৩/৫৫, ইয়াসির ৩/৮৬, হাফিজ ২/৪৭, বাবর ২/৯৯)
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস : ২২৭/১(হাফিজ ১৩৭*, সামি ২০, আজহার ৬৫*; তাইজুল ১/৪৩)।