সাক্ষাৎকার
নারী গ্র্যান্ডমাস্টার হতে চান নোশিন আনজুম
নারীদের দাবায় দেশের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন নোশিন আনজুম। জুনিয়র দাবা প্রতিযোগিতায় চতুর্থ শ্রেণিতে থাকতে হারিয়েছিলেন দশম শ্রেণির এক প্রতিযোগিকে। সেই থেকে ৬৪ খোপের ময়দানের মায়ায় পড়েছেন নোশিন। মগজের লড়াইয়ে সঁপে দিয়েছেন নিজেকে। দাবায় আদর্শ মানেন ম্যাগনাস কার্লসেনকে। হতে চান দেশের প্রথম নারী গ্র্যান্ডমাস্টার।
আজ শনিবার (২৯ জুলাই) থেকে আজারবাইজানের বাকুতে শুরু হয়েছে ফিদে নারী বিশ্বকাপ ২০২৩। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছেন দুজন। তাদের একজন নোশিন আনজুম। ৩০ ও ৩১ জুলাই পোলিশ গ্র্যান্ডমাস্টার মনিকা সোকোর বিপক্ষে বাছাই পর্বের দুটো ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে নোশিনের বিশ্বকাপ পর্ব। সাদাকালো বোর্ডের বিশ্বকাপে লালসবুজের প্রতিনিধিত্ব করতে যাওয়ার আগে কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে।
দাবার প্রতি ভালোলাগার শুরুটা কবে থেকে?
নোশিন আনজুম : ২০১৪ সালে জীবনের প্রথম টুর্নামেন্টে অংশ নিই। তখন আমি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। ক্লাস টেনের একজন আপুকে হারাই সেই প্রতিযোগিতায়। এরপর থেকে মা বেশ উৎসাহ দিত। বিভিন্ন টুর্নামেন্ট নিয়মিত অংশ নেওয়া শুরু করি।
কবে থেকে পেশাদার দাবায় প্রবেশ?
নোশিন: ২০১৬ সালে ইয়ুথ চেজ চ্যাম্পিয়নশিপে ওপেনে চতুর্থ হই (নারী-পুরুষ একসঙ্গে অংশ নেওয়াকে ওপেন বলা হয়) এবং নারীদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হই। এর প্রেক্ষিতে দলগত ইভেন্টে অংশ নিতে চায়নায় যাই। দেশের বাইরে আমার প্রথম কোথাও যাওয়া। দলে চারজন ছেলের সঙ্গে আমি একমাত্র মেয়ে ছিলাম। সেখান থেকেই পেশাদার জগতে প্রবেশ।
দাবার পুরোটাই মাইন্ড গেম। বুদ্ধির খেলা। মানসিক ফিটনেসের পাশাপাশি দাবায় দৈহিক ফিটনেস কতটা দরকার?
নোশিন : দাবা যেহেতু মস্তিষ্কের খেলা, অনেকে ভাবে শারীরিকভাবে ফিট থাকার কিছু নেই। কিন্তু, মস্তিষ্কের পাশাপাশি এটি বসে থাকারও খেলা। দীর্ঘসময় বসে থাকতে হয়। তখন এনার্জি আরও বেশি পরিমাণে হারায়৷ মগজে চাপ দিলে শরীরের ওপর এমনিতেই চাপ বেশি পড়ে। অনেক সময় আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলি। তাই, মনোসংযোগ ধরে রাখা খুব প্রয়োজন। এর জন্য দৈহিক ফিটনেস ধরে রাখা আরও বেশি জরুরি।
দাবার বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে আপনার পছন্দের ফর্মুলা কী?
নোশিন : দুইভাবে দাবা খেলা যায়। আক্রমণাত্মক ও পজিশন নির্ভর। সবার আগে প্রয়োজন পিচ ডেভেলপমেন্ট। দাবার একটা সেন্টার পয়েন্ট থাকে। সেটার নিয়ন্ত্রণ যে যত ভালো নিতে পারে, ম্যাচে সে এগিয়ে থাকে। এ ছাড়া, প্রতিপক্ষ বুঝে খেলার কৌশল বদলাই।
বাংলাদেশে দাবা খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। সেক্ষেত্রে আপনার মতো যারা দাবাকে পেশাদারভাবে নিতে চায়, সেই তরুণদের উদ্দেশ্যে আপনার অভিমত কেমন?
নোশিন : নতুন কমিটির অধীনে আগের চেয়ে কিছুটা হলেও ভালো আছি আমরা। বিভিন্ন বাহিনী যুক্ত হচ্ছে খেলাটার সঙ্গে। আমি নিজেও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হয়ে খেলি। সব মিলিয়ে নতুনদের উদ্দেশ্যে বলব, দাবায় আসতে৷ দাবা মানসিকভাবেও নিজেকে উন্নত করে। যা পড়াশোনাতেও কাজে দেয়।
ক্যারিয়ারে অনেকটা পথ বাকি। বাংলাদেশে রানি হামিদকে বলা হয় দাবার রানি। ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে ওনার পর্যায়ে দেখতে চান?
নোশিন : দাবার রানি হতে পারব কিনা জানি না, তবে চাই দেশের প্রথম নারী গ্র্যান্ডমাস্টার হতে।
এনটিভি অনলাইনকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
নোশিন : এনটিভিকে স্বাগত।