রূপকথা লিখে যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে শেষ আটে সুইডেন
দুর্দান্ত! এক শব্দে যদি প্রকাশ করতে হয়, যুক্তরাষ্ট্র-সুইডেনের ম্যাচটাকে দুর্দান্ত বললেও কম হবে। শুরুর ৯০ মিনিট, অতিরিক্ত ৩০ মিনিট, টাইব্রেকারের সাত শট— পরতে পরতে রোমাঞ্চে ঠাসা। এমন ম্যাচে শেষ হাসি হাসল সুইডেন। গোলশূন্য ড্র’র পর যুক্তরাষ্ট্রকে টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে হারিয়েছে সুইডেন।
মহারাজারও পতন ঘটে, মহারানি যায় বনবাসে। যুক্তরাষ্ট্র নারী ফুটবল দলের অবস্থা এখন বনবাসী রানির মতো। নারী বিশ্বকাপের আগের আট আসরে কখনও সেমি ফাইনালের আগে বিদায় নেয়নি যে দল, সর্বশেষ তিন আসরের ফাইনাল এবং দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন যারা, তারাই বাদ পড়ল দ্বিতীয় রাউন্ডে।
আজ রোববার (৬ আগস্ট) অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের রেকট্যাঙ্গেল স্টেডিয়ামে শেষ ষোলোর ম্যাচে মুখোমুখি হয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন যুক্তরাষ্ট্র ও সুইডেন। যুক্তরাষ্ট যেখানে সেমির আগে বাদ পড়েনি, সেখানে দ্বিতীয় রাউন্ডের চৌকাঠ কখনও পার হতে পারেনি সুইডেন।
ফেভারিট হিসেবে মাঠে নামা যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই আক্রমণে আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে সুইডিশ নারীদের। কখনও রক্ষণভাগের দৃঢ়তায়, কখনও গোলরক্ষক জেসিরা মুসোভিচের কৃতিত্বে বেঁচে যায় সুইডেন। গোলশূন্য অবস্থায় প্রথমার্ধ শেষ করে উভয় দল।
দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের গুছিয়ে আনে সুইডেন। বিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করে নিজেরা বেশ কয়েকটি শট নেয় মার্কিন গোলমুখে। যদিও, আলোর মুখ দেখেনি সেগুলো। যুক্তরাষ্ট্রও একের পর এক চেষ্টা করে ভাঙতে পারেনি সুইডেন গোলরক্ষকের দেয়াল। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয় ০-০ সমতায়।
খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। সেখানেও একই চিত্র। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ সবই হয়েছে, শুধু গোল হয়নি। পুরো ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্র সুইডেনের গোলমুখে ২১ টি শট নিয়েছে, সুইডেন নিয়েছে সাতটি।
এর পর খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। প্রথম দুই শটে গোল পায় দুদলই। পরের তিন শটে দুটি করে গোল। পাঁচ শট শেষে এখানেও সমতা ৩-৩। খেলা পৌঁছে যায় সাডেন ডেথে (একদল গোল পেলে, অপর দল গোল মিস করলে খেলা শেষ)। সাডেন ডেথে ষষ্ঠ শটে লক্ষ্যভেদ করেন মার্কিন গোলরক্ষক এলিসা নাহের। কিন্তু সপ্তম শটটা মিস করে বসেন সোফিয়া স্মিথ।
খেলা তখন ৩-৩ সমতায়। শেষ শট নিতে এগিয়ে আসছেন সুইডেনের লিনা হারটিগ। প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে এক গোল দূরে সুইডেন। হার্টিগ ডান দিকে শট নিলেন। ঝাঁপ দিয়ে তা ফেরালেন নাহের। হাত ফসকে গেলে আবারও ঝাঁপান, বাঁচানও বল। কিন্তু, গোললাইন প্রযুক্তির সাহায্যে দেখা গেল বল আগেই দাগ ছুঁয়েছে। রেফারি গোলের বাঁশি বাজালেন। তাতেই শেষ আটে ওঠার বুনো উল্লাসে মেতে উঠল সুইডেনের নারীরা। ভাঙল যুক্তরাষ্ট্রের টানা তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন।