ইডেনের বুকে বাংলার ক্রিকেটের রাজ্য
ভারতে বিশ্বকাপের ডামাডোল বেজেছে ২২ দিন পার হয়ে গেল। অনেক রাজ্যে তার আবেশ ছড়ালেও কলকাতায় এতদিন লাগেনি বিশ্বকাপের রং। অবশেষে কলকাতায় ক্রিকেট উৎসব শুরুর সময় হয়ে গেছে। দুর্গাপুজার বাজনা শেষ হতে না হতেই এবার বাজবে ক্রিকেটের বাদ্য!
বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে এবারের বিশ্বকাপের ছোঁয়া পাবে কলকাতার বিখ্যাত ইডেন গার্ডেন্স। পাকিস্তানের বিপক্ষেও এই মাঠেই খেলবে বাংলাদেশ। তবে, ব্যাটে-বলে ঝংকার শুরুর আগে ইডেনে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।
ম্যাচের ঠিক আগের দিনও চলছে নানা সংস্কার। তুলির শেষ আচড় পড়ছে ইডেনের আঙিনায়। বিশ্বকাপকে ঘিরে ইডেন যেন সেজেছে নতুন সাজে। গ্যালারির আসন থেকে শুরু করে, প্রেসবক্স, ক্লাব হাউজ অনেক কিছুতেই লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া।
তবে এত কিছুর মাঝে নজর কাড়বে ইডেনের বুকে তুলে ধরা ক্রিকেট ও বাংলার নানা ইতিহাস। স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে দু সিঁড়ি উপরে উঠতেই চোখে পড়বে ইডেনের সেই ঐতিহাসিক ঘণ্টা। যে ঘণ্টা বাজিয়ে শুরু হয় সেই মাঠের ক্রিকেট।
এরপর আরেক সিঁড়ি বেয়ে উঠলে চোখ আটকে যায় এক গোলাপি সাইন বোর্ডে। যেখানে আছে ২০১৯ সালে হওয়া পিংক বল টেস্টের স্মৃতি। এই ইডেনেই বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম পিংক বল টেস্ট খেলেছিল ভারত। বিসিসিআইয়ের তখনকার সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলির অধীনে হওয়া সেই ম্যাচ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৌরভ গাঙ্গুলি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন সেই ম্যাচে। ইডেনের ঐতিহাসিক ঘণ্টার সামনে শোভা পাচ্ছে তাদের তিনজনের ছবি। এ ছাড়াও ওই ম্যাচটির নানা স্মৃতির গোলাপি আভায় রাঙিয়েছে ইডেনের দেয়াল।
সেই দেয়াল পেরিয়ে একটু সামনে ঢুকলেই মনে হবে ক্রিকেটের মিউজিয়ামে ঢুকলাম। যে মিউজিয়াম বলছে ক্রিকেটের কথা। যেখানে আছেন সৌরভ গাঙ্গুলি, জগমোহন ডালমিয়া থেকে শুরু করে বাংলার ক্রিকেটের অনেক নাম। যারা বাংলা থেকে উঠে এসে মাঠ মাতিয়েছেন তাদের সব স্মৃতি ভাসছে ইডেনের দেয়ালে। পঙ্গজ রয়, অরুন লাল, সুব্রত গুহ, দিপ দাসগুপ্ত, সৌরভ গাঙ্গুলি থেকে শুরু করে বর্তমান তারকা মোহাম্মদ শামি-ঋদ্ধিমানদের ছবিও ঝুলছে ইডেনে।
কনফারেন্স রুমের এক পাশ থেকে শুরুতে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) সব প্রেসিডেন্টদের ছবি। এরপর আছে সাধারণ সম্পাদকদের ছবি। আছে সৌরভ গাঙ্গুলির ক্রিকেটের সব অর্জনের গল্প। আছেন বাংলার মেয়ে ঝুলন গোস্বামীর মাঠ মাতানোর গল্প। সেই সঙ্গে আছে ইডেনে হওয়া ক্রিকেটের সব ঐতিহাসিক ম্যাচের দৃশ্য।
সবমিলিয়ে ইডেনের দেয়াল ঘিরে শুধু ক্রিকেটের গল্প। হবেই না বা কেন? এই ইডেনে শত ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর প্রাচীনতম স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে একটি এটি। যেটি তৈরি হয়েছিল ইংরেজ শাসন আমলে। যখন গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যান্ড উপমহাদেশ শাসন করছিলেন তখন এই স্টেডিয়ামের জন্ম। ১৮৩৬ থেকে ১৮৪২ অবধি ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড অকল্যান্ড। তার পোশাকি ভারী পরিচয় ‘ফার্স্ট আর্ল অব অকল্যান্ড’-এর আড়ালে চাপা পড়ে গিয়েছিল তাঁর প্রকৃত নাম, জর্জ ইডেন। দায়িত্ব পেয়ে তিনি যখন ভারতে আসেন তখন তার দুই বোন কলকাতায় মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। বোনদের হাঁটার জন্য তৈরি হয় এই ইডেন নামক বাগান। শুরুতে যার নাম অকল্যান্ড সার্কাস গার্ডেন্স' রাখা হয়। পরে সেটা দুই বোনের খ্যাতি পাওয়া নাম ‘মিস ইডেন’ এর নামেই অলংকৃত হয় ইডেন গার্ডেন্স।
ঐতিহাসিক এই ইডেনেই কাল ভাগ্য বদলের পরীক্ষা দিতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কিন্তু ভাগ্য বদলের পরীক্ষায় সাকিব-মিরাজরা পাশ মার্ক তুলতে পারেন কি না সেটাই দেখার অপেক্ষা।