নাটকীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারল পাকিস্তান
বরাবরই আনপ্রেডিক্টেবল দল পাকিস্তান। তাদের নিয়ে কখনও ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। দেখা গেল নিশ্চিত জিততে যাওয়া ম্যাচ হেরে বসেছে, কিংবা হারতে বসা ম্যাচ কোনো এক জাদুর ছোঁয়ায় জিতে নিয়েছে। এবার বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিশ্চিত জেতা ম্যাচ হেরে বসল বাবর আজমের দল।
জয়ের জন্য শেষ তিন ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল পাঁচ রান। তিন পেসারের দশ ওভারের কোটা পূরণ হওয়ায় বাধ্য হয়েই স্পিনার নেওয়াজকে আক্রমণে আনেন বাবর। ৪৮তম ওভারে তার করা প্রথম বলে এক রান নিলেও দ্বিতীয় বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মেরে দেন মহারাজ। আর তাতেই ১৯৯৯ আসরের পর বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারাতে পারল প্রোটিয়ারা।
আজ শুক্রবার (২৭ অক্টোরব) চেন্নাইয়ে এম এ চিদাম্বরম ক্রিকেট স্টেডিয়ােমে বিশ্বকাপে টিকে থাকার লড়াইয়ে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে সব উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২৭০ রান তোলে পাকিস্তান। জবাবে ৪৭.২ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় প্রোটিয়ারা। এক উইকেটের জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ওঠে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
২৭১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে, দলীয় ৩৪ রানের মাথায় শাহীন আফ্রিদির বলে ওয়াসিমের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার ডি কক। ১৪ বলে ২৪ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
এরপর ডুসেনকে নিয়ে জুটি গড়েন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। যদিও সেই জুটি খুব বেশি বড় হয়নি। দলীয় ৬৭ রানের মাথায় ওয়াসিমের বলে শাকিলের হাতে ধরা পড়েন বাভুমা। ২৭ বলে ২৮ করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। প্রেটিয়া অধিনায়কের বিদায়ের পর এইডেন মার্করামকে নিয়ে জুটি গড়েন ডুসেন। এই জুটিতে অবশ্য ৫৪ রানে আসে। দলীয় ১২১ রানে ডুসেনের বিদায়ে বেশ চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই চাপ আরও বাড়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ক্লাসেনের বিদায়ে। দলীয় ১৩৬ রানে ওয়াসিমের বলে মিরের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ক্লাসেন।
এরপর ফের জুটি গড়েন মার্করাম ও ডেভিড মিলার। এই জুটিতে আসে আরও ৭০ রান। দলীয় ২০৬ রানে শাহীন আফ্রিদির বলে উইকেটের পেছনে রিজওয়ানের হাতে ধরা পড়েন মিলার। ৩৩ বলে ২৯ আসে এই বাঁহাতির ব্যাট থেকে।
মিলারের বিদায়ে ফের চাপে পড়ে প্রোটিয়ারা। লেজের সারির ব্যাটারদের নিয়ে সেই চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন মার্করাম। তবে, দলীয় ২৫০ রানে মিরের বলে সামনে এগিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে বাবরের হাতে ধরা পড়েন মার্করাম। আউটের আগে খেলেন ৯৩ বলে ৯১ রানের ইনিংস। মার্করামের বিদায়ে পর লেজের সারির ব্যাটারদের দৃঢ়তায় জয় পায় প্রোটিয়ারা।
এর আগে, টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। কিন্তু, উদ্বোধনী জুটিতে ২০ রানের বেশি তুলতে পারেনি তারা। ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিককে ৯ রানে ফিরিয়ে দেন মার্কো জ্যানসেন। জ্যানসেনের শিকারে পরিণত আরেক ওপেনার ইমাম-উল-হক। ১২ রান করেন ইমাম। তৃতীয় উইকেট জুটিতে বাবর ও মোহাম্মদ রিজওয়ান মিলে সাময়িক বিপর্যয় সামাল দেন। ২৭ বলে ৩১ রান করে জেরাল্ড কোয়েৎজের উইকেটের পেছনে কুইন্টন ডি ককের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রিজওয়ান। অর্ধশতক তুলে নেন বাবর। তবে, থামেন ঠিক ৫০ রানেই। তাব্রাইজ শামসির শিকারে পরিণত হন তিনি।
১৪১ রানে পাঁচ উইকেট হারানো পাকিস্তানের হাল ধরেন সৌদ শাকিল ও শাদাব খান। ৮৪ রানের জুটি গড়ে পাকিস্তানকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেন তারা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫২ রান করেন শাকিল। ৫২ বলে ৫২ রানে শাকিল ও শাদাব আউট হন ৩৬ বলে ৪৩ রান করে। ২৪ বলে ২৪ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানের দলীয় সংগ্রহ আড়াইশ পার করান মোহাম্মদ নাওয়াজ।
শেষ দিকের ব্যাটাররা দ্রুত গুটিয়ে গেলে পাকিস্তান থামে ২৭০ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে চার উইকেট শিকার করেন শামসি। জ্যানসেন নেন তিন উইকেট। কোয়েৎজে পান দুটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ৪৬.৪ ওভারে ২৭০/১০ (শফিক ৯, ইমাম ১২, বাবর ৫০, রিজওয়ান ৩১, ইফতেখার ২১, শাকিল ৫২, শাদাব ৪৩, নাওয়াজ ২৪, আফ্রিদি ২, ওয়াসিম ৭, হারিস ০*; জ্যানসেন ৯-১-৪৩-৩, লুঙ্গি ৭.৪-০-৪৩-১ , মার্করাম ৪-০-২০-০, মহারাজ ৯-০-৫৬-০, কোয়েৎজে ৭-০-৪২-২, শাসসি ১০-০-৬০-৪)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৭.২ ওভারে ২৭১/৯ (বাভুমা ২৮, ডি কক ২৪, ডুসেন ২১, মার্করাম ৯১, ক্লাসেন ১২, মিলার ২৯, জেনসেন ২০, কোয়েটজে ১০, মহারাজ ৭, এনগিদি ৪, শামসি ৪; ই্ফতিখার ৩-০-২৩-০, আফ্রিদি ১০-০-৪৫-৩, নেওয়াজ ৬.২-০-৪০-০, রউফ ১০-০-৬২-২, ওয়াসিম ১০-১-৫০-২, উসামা ৮-০-৪৫-২)
ফলাফল: দক্ষিণ আফ্রিকা এক উইকেটে জয়ী।