পাকিস্তানের বিপক্ষেও বদলায়নি বাংলাদেশ
'সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দিব কোথা'—বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবস্থাটা অনেকটা এমনই। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—কোনো বিভাগেই স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ। পুরো টুর্নামেন্টে ব্যর্থতার গল্প লেখা বাংলাদেশের ভাগ্য পাল্টায়নি পাকিস্তানের বিপক্ষেও। হারের বৃত্তে আটকে থাকা সাকিব আল হাসানরা পাকিস্তানের সামনেও দাঁড়াতে পারলেন না। ফলাফল ব্যর্থতার পাল্লায় যোগ হলো ষষ্ঠ হার। নিজেদের সপ্তম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে সাত উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ।
এই ম্যাচটি পাকিস্তানের জন্যও ডু অর ডাই ছিল। জিতলে টুর্নামেন্টের আশা বেঁচে থাকা, হারলে বিদায়ের ঘণ্টা বাজা—এমন সমীকরণের ম্যাচে নিজেদের লক্ষ্যে শতভাগ সফল পাকিস্তান। বড় জয়ে নিজেদের আশা ভালোভাবেই বাঁচিয়ে রাখল বাবর আজমের দল।
বল হাতে পাকিস্তানের কাজটা সহজ করে দিয়েছিলেন শাহীন আফ্রিদি-ওয়াসিমরা। বাংলাদেশকে আটকে দিয়েছেন মাত্র ২০৪ রানে। ইডেনের রানের উইকেটে এই লক্ষ্য পাকিস্তানের কাছে মামুলিই বটে। জবাব দিতে নেমে কোনো তাড়াহুড়ো না করে শুরুতে থিতু হলেন দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ফখর জামান। শুরুটা মন্থর করে দুজনেই পরে খেলেন হাতখুলে। বাংলাদেশের বোলারদের দাঁড়াতেই দিলেন না দুই পাক ওপেনার। বাংলাদেশের ছয়জন বোলিং করেও ভাঙতে পারছিলেন না এই জুটি। মুস্তাফিজ-তাসকিনদের তুলোধুনো করে পাকিস্তানের জয়ের পথ সহজ করে দেন শফিক-ফখর।
১২৮ রানের এই জুটি অবশেষে ভাঙেন মিরাজ। এলবির ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন শফিককে। ৬৯ বলে ৬৮ রান করেন শফিক। কিন্তু আউট হওয়ার আগেই দলের কাজটা সহজ করে যান এই ওপেনার। শফিক ফিরলে বাকি কাজ রিজওয়ানকে আরও সহজ করেন ফখর। ব্যাট হাতে ৭৪ বলে ৮১ রানের দারুণ ইনিংস খেলে দলকে জয়ের আরও কাছে এনে দিয়ে থামেন ফখর। এরপর বাবর আজম এসে টিকতে পারলেন না। তিনিও ধরা পড়লেন মিরাজের স্পিনে। তিন উইকেট হারালেও ইফতেখারকে নিয়ে শেষটা রাঙান মোহাম্মদ রিজওয়ান। রিজওয়ান খেলেন ২৬ রানের ইনিংস। ১০৫ বল হাতে রেখেই তুলে নেন দারুণ জয়।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৪৫.১ ওভারে ১০ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ২০৪ রান তোলে বাংলাদেশ। ইডেন গার্ডেন্সে আগের ম্যাচে টস ভাগ্য সহায় হয়নি বাংলাদেশের। তবে, পাকিস্তানের বিপক্ষে টসে জেতেন সাকিব আল হাসান। বেছে নেন ব্যাটিং। তবে, আগে ব্যাট করতে নামলেও পাল্টায়নি বাংলাদেশের টপ অর্ডারের চিত্র।
ইনিংসের প্রথম ওভারেই বড় ধাক্কা দেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। নিজের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে এলবির ফাঁদে ফেলেন তানজিদ তামিমকে। ৫ বল মোকাবিলা করে রানের খাতাও খুলতে পারেননি ধারাবাহিক ব্যর্থ হওয়া তানজিদ। নিজের পরের ওভারে আফ্রিদির দ্বিতীয় শিকার নাজমুল হোসেন শান্ত (৪)। ওয়ানডাউনে নেমে আজও ব্যর্থ শান্ত। আফ্রিদির ফুল ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে গিয়ে তালগোল পাকান শান্ত। টাইমিং মিস করে ক্যাচ তুলে দেন শর্ট মিড উইকেটে।
চারে নেমে হাল ধরতে পারলেন না মুশফিক। হারিস রউফের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মুশফিক (৫)। দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর পাঁচে নেমে লিটনের সঙ্গে জুটি বাধেন মাহমুদউল্লাহ। এই জুটিতে আশা জাগে বাংলাদেশের। কিন্তু থিতু হয়েও টিকতে পারলেন না লিটন। ২১তম ওভারে প্রতিপক্ষকে উইকেট উপহার দিয়ে বসেন লিটন। ইফতেখার আহমেদের একেবারে সাদামাটা বলে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। ৬৪ বলে ৪৫ করে ভাঙে তার প্রতিরোধ, ভেঙে যায় ৭৯ রানের জুটি। নিজের আউট যেন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না লিটন। চোখে-মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট।
লিটনের পর সাকিবের সঙ্গে কিছুক্ষণ টানেন মাহমুদউল্লাহ। ৫৮ বলে তুলে নেন ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি। কিন্তু পঞ্চাশ ছোঁয়ার তিনিও আর টিকলেন না। আফ্রিদির লেন্থ বলে লাইন মিস করেন মাহমুদউল্লাহ। প্যাডে লেগে বল ছোবল আনে মিডল স্টাম্পে। ৫৬ রানেই থেমে যায় তার ইনিংস।
এরপর শুধু হতাশাই দেখেছে বাংলাদেশ। যথারীতি ভেঙে পড়েছে মিডল অর্ডার। একাদশে ফেরা তাওহিদ ফেরেন ৭ রান করে। সাকিব টিকে থাকলেও তার রানের গতি ছিল মন্থর। বাকিদের নিয়ে মন্থর গতিতে টানলেও লড়াইয়ের স্কোর এনে দিতে পারেননি অধিনায়ক। ব্যাটিং ব্যর্থতার একই গল্পে বাংলাদেশ থমকে যায় মাত্র ২০৪ রানে। ব্যাট হাতে সাকিব করেন ৬৪ বলে ৪৩ রান। তার সঙ্গে মিরাজ করেন ৩০ বলে ২৫ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৫.১ ওভারে ২০৪ /১০ (তামিম ০, লিটন ৪৫, শান্ত ৪, মুশফিকুর ৫, মাহমুদউল্লাহ ৫৬, সাকিব ৪৩, হৃদয় ৭, মিরাজ ২৫, তাসকিন ৬, মুস্তাফিজ ৩, শরিফুল ১; আফ্রিদি ৯-১-২৩-৩, ইফতিখার ১০-০-৪৪-১, রউফ ৮-০-৩৬-২, ওয়াসিম ৮.১-১-৩১-৩, উসামা ১০-০-৬৬-১)
পাকিস্তান: ৩২.৩ ওভারে ২০৫/৩ (শফিক ৬৮, ফখর ৮১, বাবর ৯, রিজওয়ান ২৬, ইফতিখার ১৭; তাসকিন ৬-১-৩৬-১, শরিফুল ৪-১-২৫-০, মিরাজ ৯-০-৬০-৩, মুস্তাফিজুর ৭-০-৪৭-০, সাকিব ৫.৩-০-৩০-০, নাজমুল ১-০-৫-০)
ফলাফল: পাকিস্তান সাত উইকেটে জয়ী।