এই সাকিব যেন বড্ড অচেনা!
প্রাণখোলা হাসির চেয়ে ভালো ওষুধ মানুষের জন্য আর নেই—এ কথা সবাই শুনেছেন নিশ্চয়ই? এটি শুধু কথার কথা নয়, যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত। তাই হয়ত, পাকিস্তান ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে হাসতে হাসতে সাকিব আল হাসান বলে উঠলেন—‘মাঝে মাঝে একটু হাসিরও দরকার আছে।’
বাংলাদেশ দল যেভাবে অতলে তলিয়ে যাচ্ছে তাতে কোনো হাসির জো নেই। কিন্তু, সাকিব এতকিছু গায়ে মাখছেন না। আছেন নিজের মতো। টানা চার হারের পর যখন সংবাদ সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন তখনও মুখে লেগেছিল ভুবন ভোলানো হাসি। হয়ত নিজেকে শান্ত রাখার উপায়ও হতে পারে। কারণ, চারপাশে যা হচ্ছে তা হাসির আড়ালে না লুকোলেই নয়!
ফিরে যাই চার বছর আগের বিশ্বকাপে। ২০১৯ সালের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ স্বপ্নের মতো কেটেছে সাকিবের। ব্যাটিং-বোলিং সব বিভাগেই জ্বলেছেন আপন আলোতে। দেশের জার্সিতে ৮ ম্যাচে ৮৬.৫৭ গড়ে করেছেন ৬০৬ রান। পাশাপাশি বল হাতে ৩৬.২৭ গড়ে নামের পাশে যোগ করেন ১১ উইকেট। বিশ্বকাপের এক আসরে কোনো বাংলাদেশির এটিই সেরা পারফরম্যান্স। শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপের এক আসরে অন্তত ৬০০ রান করা পাঁচ ক্রিকেটারের তালিকার সেরা পাঁচে জায়গা করে নেন বাংলাদেশি এই তারকা।
অথচ, এবার দেখছেন মুদ্রার উল্টোপিঠ। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন সেটা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেননি সাকিব। ২০২৩ বিশ্বকাপে যখন ভারতে পা রাখেন সাকিব তখন তার কাঁধে দেশের ভার। বিশ্বকাপের বিমানে ওঠার আগে হওয়া নানা বিতর্ক ছাপিয়ে সবার নজর ছিল সাকিবের নেতৃত্বে দেশ কতটা ভালো করে? কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই বিশ্বকাপেই সবচেয়ে বাজে সময় পার করছে বাংলাদেশ। শুধু কি দল খারাপ করছে? সাকিব নিজেও বড্ড মলিন। বড্ড অচেনা!
সাত ম্যাচে মাত্র এক জয়, ছয়টিতেই হার—এই হলো বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের খতিয়ান। ম্যাচ হারের হিসাবটা সংখ্যা মাত্র। কিন্তু হারের ধরণটা আরও ভয়ংকর। শেষ ছয় ম্যাচ হারা বাংলাদেশ একটিতেও ন্যূনতম প্রতিরোধ করতে পারেনি। হারগুলো যথাক্রমে— ১৩৭ রানে, আট উইকেটে, ১৪৯ রানে, ৮৭ রানে ও সর্বশেষ পাকিস্তানের কাছে সাত উইকেটে হার।
এই তো গেল দলের অবস্থা। গেল বিশ্বকাপের আগুনে সাকিব এবারে পুরো নিরুত্তাপ। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচ খেলা সাকিব ব্যাট হাতে করেছেন মোটে ১০৪ রান। নেই একটিও পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস। পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন মাত উইকেট।
অধিনায়কের অবস্থা যখন এই দলের অবস্থাও তখন তলানিতে। এরই মধ্যে নিজেদের বিদায়ের টিকেট কেটে ফেলেছে বাংলাদেশ। হুমকির মুখে পড়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা। ২০০৩ সালের আসর বাদ দিলে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে আসর বলা যায় এবারেরটিকে।
সাকিব নিজেও তা মেনে নিয়েছেন। আনকোরা নেদারল্যান্ডসের সামনে ১৪২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ম্যাচ শেষে অধিনায়ক বলেই ফেলেছেন, এটিই স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ।
ভুল নয়। হতাশার অতলে ডুবে যাওয়া বাংলাদেশ এখন ভাসছে মাঝ নদীতে। আর গাইছে—
’নদীর কূল নাই-কিনারা নাই রে
আমি কোন কূল হইতে কোন কূলে যাব
কাহারে শুধাইরে?’
আর সাকিব আল হাসান? তিনি তো আরও অচেনা! বাংলাদেশের জান বনে যাওয়া সাকিবকে নিয়ে এখন বাজছে সমালোচনার গান!